মিয়ানমার সীমান্তে পরাশক্তিগুলোর নজর: চাপের মুখে বাংলাদেশ
“চার চারটি সুপার পাওয়ারের ফ্যাটাল ওয়ারের ‘ওয়ারফিল্ড’ হতে চলেছে বাংলাদেশ ভূখণ্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল বি ভোয়েলের অকস্মাৎ বাংলাদেশে এসে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক করে যাওয়া, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনীয় গুতেরাস-এর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন, ড. ইউনূসের চীনে গিয়ে ‘যা চান সব দিয়ে দেব’ ধরণের বশ্যতা দেখানো এবং সর্বশেষ জেনারেল ওয়াকার রাশিয়া সফরের নেপথ্য ঘটনা জানলে শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যাবে!
কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি জুন্টা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তারা করিডোর পাহারা দেবে, আরাকান আর্মির কাছে লজিস্টিক পৌঁছানোর ব্যাকআপ ফোর্স হিসাবে কাজ করবে অর্থাৎ আরাকান আর্মি, আরসা ও আমেরিকান মেরিনদের উপর জুন্টা বাহিনী হামলা করলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যাকআপ দেবে। যুদ্ধের পরিভাষায় একে বলে ‘প্রক্সি ওয়ার’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওই প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে যেতে চলেছে।
শেখ হাসিনা গত বছর মে মাসে যখন বলেছিলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা অংশ, ভারতের মিজোরামের একটি অংশ ও মিয়ানমার মিলে একটা খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাবে। বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে এবং একজন সাদা চামড়ার মানুষ তাকে বলেছেন-তিনি রাজি হলে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। “সেটা কো-ইন্সিডেন্স ছিল না”।
মিজোরামের চিফ মিনিস্টার যে স্টেটমেন্টে বলেছিলেন- “২হাজার ফরেনার এসে গায়েব হয়ে গেছে। “সেটা কো-ইন্সিডেন্স ছিল না”। মণিপুরে কুকিল্যান্ড কোনও কো-ইন্সিডেন্স ছিল না। ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোত দেব বর্মণ যখন কেন্দ্রকে বলেন-“সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মোহাম্মদ ইউনূসের হুমকির ভার আমার উপর ছেড়ে দিন, আমি দেখে নেব। “সেটা কো-ইন্সিডেন্স ছিল না”।
আরাকান আর্মির বাংলাদেশ সীমানা লঙ্ঘন, চিন বিদ্রোহীদের মিজোরামের সঙ্গে মার্জ করা, চিন-কুকি-মিজো মিলে আলাদা স্টেট, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরসা’ চিফকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে কোয়ালিশন করতে রাজি করানো, রোহিঙ্গা আরাকানীদের দীর্ঘদিনের বৈরীতা ভুলে একসঙ্গে যুদ্ধে নামার অঙ্গিকার করানো, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ফোর্টিফাই রাইটস’ বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনীকে আরাকান আর্মির জন্য করিডোর দেওয়ার আহ্বান জানানোর মত ডটগুলো এবার স্ট্রেইট লাইনে রূপ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সেনাহিনীর ভেতরে একটা ম্যাসিভ কোয়ালিশ বানাতে যাচ্ছে আমেরিকা। যার বেজ ক্যাম্প হবে কক্সবাজারের শিলখালিতে।
রাখাইন স্টেটের যে অংশটুকু এখনও রাশিয়ার সহায়তায় চীনের দখলে রয়েছে সেই অংশ অর্থাৎ সিটওয়ে পোর্ট এবং কিয়াউকপিউ পোর্ট মুক্ত করতে এক ম্যাসিভ ওয়ার শুরু করতে যাচ্ছে। কারা কারা এই যুদ্ধ শুরু করবে জানলে চমকে উঠতে হবে!, বুদ্ধিস্ট আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরসা’, সাথে খ্রিস্টান চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এদের ব্যাকআপ দেবে বাংলাদেশের ৩ ডিভিশন আর্মি। এখানে আমেরিকার ‘গেম প্ল্যান’ পরিষ্কার। তারা সবকটি রিবেল গ্রুপকে এক ছাতার নিচে এনে একটা শক্তিশালী আক্রমণ করে সিটওয়ে এবং কিয়াউকপিউ পোর্ট মুক্ত করতে চায়। এটা হলেই রাখাইনের পুরোটা মিয়ানমারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ আরাকান স্টেট হয়ে যাবে। যার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে আমেরিকার হাতে। অর্থাৎ চীনের ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল কিয়াউকপিউ প্রজেক্ট, ভারতের সিত্তেকেন্দ্রিক ‘কালাদান মাল্টিমোডাল প্রজেক্ট’ মায়ের ভোগে। এর পরের স্টেপ আরও ক্লিয়ার-রাখাইন হাতে আসার পর বিভিন্ন গোষ্ঠী যুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমার দখলে নেওয়া। যার নিট প্রাপ্তি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার!।
বিপ্লব, অভ্যুত্থান, সংস্কার, নির্বাচন সব বাকোয়াজ। মেইন পয়েন্ট আমেরিকান ডিপ স্টেট পলিসি- টু ক্যাপচার মিয়ানমার। বাংলাদেশে বেজ বসানোর জন্য তাদের দুজন ‘পাপেট’ দরকার ছিল, নোবেল লরিয়েট আং সান সুকী ও ড. ইউনূস সেই ব্যক্তিদ্বয়। টার্গেট চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক কডিডোর BRI। চীনা অর্থায়নের কিয়াউকপিউ পোর্ট। ভারতের সিটওয়ে কালাদান প্রজেক্ট। টার্গেট মিয়ানমারের রিসোর্স কে কব্জা করবে? কীভাবে মিয়ানমারকে টুকরো করা হবে? কোন রিবেলসদের নাশকতার জন্য পুশ করা হবে? কে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের হেরোইন বিজনেসের দখল নেবে? সবকিছুর ফ্যাটাল গ্রাউন্ড মিয়ানমার ওয়ার। আর এই যুদ্ধে মোহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকেই ‘বিক্রি’ করে দিচ্ছেন। এখন ভুলক্রমেও যদি যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ভারত-চীন-রাশিয়ার ভূমিকা কী হবে? তারা নিশ্চয়ই বসে বসে আঙ্গুল চুষবে না।
যদি সত্যিই বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তার ফলাফল হবে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ সাইজ নিয়ে ইন করবে, কিন্তু আউট হবে খণ্ডিত সাইজ নিয়ে। যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভারত প্রথম সুযোগেই ‘চিকেনস নেক’ চওড়া করে ‘এলিফ্যান্ট নেক’ করে নেবে। মণিপুর-মিজোরাম-চিন স্টেট বাংলাদেশের পার্বত্য একাংশ নিয়ে এক্সপ্যান করবে।
বাংলাদেশের রোল কী হবে? মিশন: সাপোর্ট ইউএস ব্যাকড প্রক্সি ওয়ার ইন মিয়ানমার রাখাইন স্টেট এগেইনস্ট জুন্টা রেজিম। ফোর্স ইনভলভড: বাংলাদেশ আর্মির ১০, ১৭ ও ২৪ ডিভিশন (লজিস্টিক অনলি, নট ওয়ার)। অ্যালাইড গ্রুপ: আরাকান আর্মি (AA), চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (CNF) এবং ARSA । ম্যাসিভ লজিস্টিকের জন্য শিলখালি বেজ যা দ্রুত তৈরি হবে। ড্রোন বেজ: কক্সবাজার এয়ার বেজ বাই টার্কি ড্রোন অপারেশন।
ইতোমধ্যে ইউএস ডেলিগেটরা AA এবং CNF এর সাথে মিটিং সেরে ফেলেছে। ইউনূসের NSA খলিলুর রহমান স্ট্র্যাটিজিক কথাবার্তা সেরে ফেলেছেন USARPSE’র সাথে। আলাপ সেরেছেন ইউএস এর সুসান স্টিভেনসন, নিকল চুলিক ও অ্যান্ড্রু হেরাপের সঙ্গে।
ল্যান্ড ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের টেকনাফের শিলখালি যেটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফায়ারিং প্রাকটিস গ্রাউন্ড। ব্যবহৃত হবে টার্কি ফিল্ড গান, ATGMs Mortar. অর্থাৎ এখানে তুরস্কের ইনভলভমেন্টও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ইসরাইলের ইনভলভমেন্টও। ম্যাসিভ আর্টিলারি ড্রপ, লজিস্টিকের নামে উইপনস ড্রপড। মিলে যাচ্ছে কি, চিটাগাং পোর্টে একাধিক পাকিস্তানি জাহাজ কেন বিনা চেকিংয়ে পণ্য খালাস করেছিল? কি ছিল সেই কন্টেইনারে? নিশ্চয়ই খেলনা বন্দুক নয়।
আমেরিকান
প্ল্যান মাফিক বাংলাদেশ ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলে
পরাশক্তিগুলো কে কী করতে পারে?
ভারতের কথা আগেই বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের সেনাবাহিনীর দুটো ডিভিশন মিয়ানমারে অবস্থান করছে। চীন তার BRI রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। জুন্টা সরকারের হার্ট লাইন চালু রাখে চীন। তারা নিশ্চয়ই ৯ বিলিয়ন ডলারের কিয়াউকপিউ পোর্ট হাতছাড়া করবে না। এরই মধ্যে ভ্লাদিমির পুতিন ইন্দো প্যাসিফিক রিজিওনে ফুল কনসেন্ট্রেশন দিয়েছেন। রুশ-মিয়ানমার যৌথ Dawei Strategic Port Project রক্ষার জন্য ড্রাইভ দেবে। ভারতের সঙ্গে নৌ-মহড়া সেরে ফেরার পথে হঠাৎই ‘রেজিক’, ‘হিরো অব দ্যা রাশিয়ান ফেডারেশন আলদার সিডেনঝপভ’ ও ‘পেচেঙ্গা’ নামের তিনটি যুদ্ধ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। এটা কাগজে-কলমে ‘শুভেচ্ছা সফর’ বলা হলেও স্পষ্টত পুতিনের বার্তা। হাজার মাইল পার হয়ে কেউ হ্যান্ডশেক করতে আসে না। মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে এই রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ বহর আমেরিকান সেভেন ফ্লিটকে রুখে দেওয়াতেই বাংলাদেশ পাকিস্তানকে সারেন্ডার করাতে পেরেছিল। দেশ স্বাধীনের পরে দুবছর ধরে রাশান নেভি চট্টগ্রাম অঞ্চলকে মাইনমুক্ত করেছিল। এখন পুতিন বলতেই পারেন-‘একটা স্যুইচ টিপে আমরা যেমন স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলাম তেমনি আরেকটা স্যুইচ টিপে ভেঙেও দিতে পারি। বি কেয়ারফুল!’
রাশিয়া ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার BIAK এ মিলিটারি বেজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। ওই বেজ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার আরও কয়েকটি দ্বীপে রাশান নেভি ঘাঁটি গেড়েছে। Dawei Strategic Port Project এর জন্য এবং জুন্টা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়া খোলাখুলি পাশে দাঁড়িয়েছে।
ওদিকে চীন এন্টার চীন সাগরে, পীত সাগরে জাপানের নাকের ডগায় ড্রিল করছে। রাশান চীনা ওয়ারশিপগুলো ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে ঘুরঘুর করছে। আমেরিকা চাইছে ছক কষেই মিয়ানমার দখল করে ভেঙে টুকরো করে দেবে! তারপর বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান তিন গ্রুপ মারামারি কাটাকাটি করুক। দেশটা টুকরো হলে তাদের বাণিজ্য লাভ ঘটবে। আগেই বলেছি ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। আর এসব দেখে আঙ্গুল চুষবে চীন-রাশিয়া-ভারত? এটা ভাবার কারণ নেই। মিয়ানমার যদি ভাগই হয় তাহলে চীন-রাশিয়া-ভারতও এক একটা অংশের দখল নেবে।
আসল
সমস্যা হলো এই ফ্যাটাল ওয়ারের স্টার্টিং গ্রাউন্ড কোথায়? বাংলাদেশে। যাদের সামরিক
সামর্থ ইক্যুয়ালটু নো ওভারসিস ওয়ার এক্সপেরিয়েন্স। এই ভয়ানক যুদ্ধের শুরু হলেও শেষ
হবে না। তৈরি হবে আরেকটা ‘গাজা’ কিংবা ‘আফগানিস্তান’। যার ব্যাকফায়ারে নিঃশেষ হতে
থাকবে ছোট্ট বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। ইউনূস আর তার NSA’র কী যায়-আসে? তারা বিদেশি
পাসপোর্টহোল্ডার। ব্যাগ গুছিয়ে উড়াল দেবে। আর বাংলাদেশ? শিলখালিতে বেজ দেওয়ার
উপহারস্বরূপ দান-খয়ারাতের টাকা পেলেও পাবে শীর্ষ মহল।
দেশ কী পাবে?
বিকৃত বিখণ্ডিত নিঃস্ব এক পোড়ামাটির মত ‘বাংলা গেট’।”
চিত্রে কিছু সংবাদঃ
তথ্য
সংগৃহিত ও পরিমার্জিত