শেখ মুজিবের পথ ধরো বেলুচিস্তান স্বাধীন করো


Mahrang Baloch 

"শেখ মুজিবের পথ ধরো বেলুচিস্তান স্বাধীন করো"

বেলুচদের অবিসংবাদিত নেতা মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচ (Mahrang Baloch)

বিশ্বের স্বাধীনতাকামী প্রতিটা মানুষের আদর্শ আজ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব আদর্শের বেলুচদের স্বাধীনতা আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা খুবই সন্নিকটে। রাতের বেলুচ শতভাগ স্বাধীন, দিনের বেলুচ ৮০ ভাগ স্বাধীন।

বালুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যা ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয় পরিচয়, এবং স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে গড়ে উঠেছে। এই সংগ্রামের শিকড় ঐতিহাসিকভাবে গভীর, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও গভীরে।

বালুচিস্তান ব্রিটিশ ভারতের একটি উপনিবেশিক অংশ ছিল। যদিও অঞ্চলটি সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে না থেকে বেশিরভাগ সময় কালাত খানাতে-এর মাধ্যমে শাসিত হতো, যার নিজস্ব স্বায়ত্তশাসন ছিল। কালাত খানাতে বা খান অব কালাত ছিলেন বালুচ জাতির ঐতিহ্যবাহী নেতা।

ভারত বিভাজনের সময় খান অব কালাত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানান। যদিও ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান বালুচিস্তানকে জোরপূর্বক তাদের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করে। অনেক বালুচ নেতার মতে, এটি ছিল একধরনের "জবরদখল"

এই ঘটনাই ছিল বালুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা। খান অব কালাতের ভাই, প্রিন্স আব্দুল করিম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। যদিও এই বিদ্রোহ দ্রুত দমন করা হয়। এটি ছিল প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। এরপর ১৯৫৮-৫৯ সময়কালে নওরোজ খান-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়, যিনি খারান অঞ্চলের নেতা ছিলেন। তাঁকে ও তাঁর ছেলেদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতালাভের পর ১৯৭৩-৭৭ সময়কালে সবচেয়ে বড় ও রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ হয়। পাকিস্তান সরকার বালুচিস্তান প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং সেনা অভিযান শুরু করে। বহু বালুচ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ নিহত হন। এই সময়ে হাজার হাজার বালুচবিদ্রোহী আফগানিস্তানে আশ্রয় নেন।

২০০০-এর দশক থেকে বালুচিস্তানে আবারও স্বাধীনতাপন্থী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে, যা এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। একাধিক গেরিলাগোষ্ঠী গঠিত হয়- যেমন – BLA (Baloch Liberation Army), BRA (Baloch Republican Army), BLF (Baloch Liberation Front) ইত্যাদি সক্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তান সরকার এগুলিকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" হিসেবে ঘোষণা করে।

আন্দোলনকারীরা বালুচ জনগণের নিজস্ব সম্পদের উপর অধিকার, সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করে। অনেকেই স্বাধীন বালুচিস্তানের দাবিতে সোচ্চার। বর্তমানে একই দাবি- স্বাধীনতা।

এতোদিন আন্তর্জাতিকভাবে বালুচিস্তান ইস্যু ততটা মনোযোগ না পেলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলও সজাগ দৃষ্টি রাখছে বালুচিস্তানের দিকে। প্রবাসী বালুচ সংগঠনগুলো ইউরোপ ও আমেরিকায় লবিং চালিয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান সরকার এই আন্দোলনগুলোকে বিদ্রোহী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হিসেবে দেখে এবং বলপ্রয়োগ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। চীনের সাথে মিলে গঠিত CPEC (China-Pakistan Economic Corridor) প্রকল্পের কারণে বালুচিস্তান এখন কৌশলগতভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বালুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম একটি জাতিগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন। এটি শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, বরং এটি এখন একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিস্বত্বার স্বীকৃতির বিষয় হিসেবেও বিবেচিত। বর্তমানে আফগান তালেবানরা বালুচদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে, যার পেছনের শক্তি পাকিস্তানের এক নম্বর শত্রু হিসেবে পরিচিত ভারত। বালুচিস্তানের স্বাধীনতা এখন দ্বারপ্রান্তে।

স্বাধীনতাকামী বালুচদের প্রতি রইলো পূর্ণ সমর্থন ও সহানুভূতি।




 

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url