ধর্মের আগাছা!
![]() |
প্রতীকী ছবি |
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেজরিটির ধর্ম হিসেবে ইসলাম একটি বড় রাজনৈতিক ফ্যাক্টর। এখানে ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্বের চেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বেশি।
বাংলাদেশের ইসলামিস্টরা তাদের ধর্মীয় আবেগের সব কিছু যাচাই করে 'আওয়ামীলীগের প্রতি সমর্থন ও বিরোধিতা'র মানদন্ড দিয়ে।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করেন তাহলে তার কবিরা, সগিরা, জাহেরি, বাতেনি সকল প্রকার গুনাখাতা মাফ হয়ে যায়।
আর যদি আওয়ামীলীগ করেন তাহলে তার সকল এবাদত ও আখলাক নামঞ্জুর হয়ে যায়। তিনি যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদও পড়েন, নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগও ফেলে দেন তবুও তিনি খাঁটি মুসলমান হতে পারবেন না শুধু আওয়ামীলীগ সমর্থক হবার অপরাধে। এই দেশে আওয়ামীলীগ করার কারণে অনেককেই মসজিদে গিয়ে তওবা পড়িয়ে অতঃপর কলেমা পাঠ করে নতুন করে ঈমান আনতে হয়েছে। (২০১৩ সালে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাটে এমন ঘটনা ঘটেছে)।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির উপদেষ্টা ছিলেন, নিয়মিত আওয়ামীলীগের সমালোচনা করতেন। উনাকে ইসলামিস্টরা খুব সম্মান শ্রদ্ধা করতেন। এখনো করেন। এই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বছর খানেক আগে 'ফেস দ্যা পিপল' নামের একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক সাইফুর সোহাগ উপস্থিত করেছিলেন। সাথে ছিলেন ওয়াজী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই অনুষ্ঠানে কিছু অস্বস্তিকর কান্ড করে বসলেন। তিনি ইসলামের মহানবী হজরত মুহম্মদ (সাঃ) এর বিবাহিত জীবন নিয়ে কিছু আপত্তিকর প্রশ্ন করে বসলেন। তিনি বললেন-
'নবী তার পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন এটা কেমন কথা? এটা ভাল লাগেনি।'
এরপর বললেন,
ইসলামে নারীর সম্পদ বন্টনের যে ব্যবস্থা সেটাও তিনি মানতে পারেন না। তিনি মনে করেন ইসলাম নারীকে সমানাধিকার দেয়না।
সবচেয়ে অস্বস্তিকর যে প্রশ্নটি করলেন সেটা হলো-
'নবীর বিধবা স্ত্রীদের কেউ বিয়ে করতে পারবেন না এটা কেমন কথা?'
আওয়ামীলীগের লতিফ সিদ্দিকী এরচেয়ে লঘু বা কাছাকাছি মানের ধর্মীয় অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেছিলেন। তুমুল হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। পরিণতি সবাই জানেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। ইসলামিস্টরাও উনার জন্য শোক ও দোয়া করেছেন।
(কেউ কেউ এই সুযোগে নামের সাথে মিলিয়ে ড. জাফর ইকবালকেও একহাত নিয়ে নিয়েছেন)।
ইসলামপ্রিয় জনতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই সব উক্তিকে 'স্যার ইসলাম সম্পর্কে কম জানেন, জানলে এমনটা বলতেন না' টাইপ মনোভাব পোষণ করে উড়িয়ে দিয়েছেন৷
পরবর্তীতে দুই একজন আলেম ইউটিউবার বিষয়টা নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে৷ তিনি আবারও একইরকম উত্তর দিয়েছেন। শেষে সরাসরি প্রশ্ন করে বলেছেন-
'এক কথায় বলুন, আপনি ধর্ম ও আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন কিনা?'
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরল হাসি দিয়ে সংশয়ের সাথে উত্তর দিয়েছেন-
'হয়ত কেউ একজন আছেন.......।'
উনার মৃত্যুর পরও ইউটিউবার হুজুরদের ভিডিও এবং তার অনুসারীদের মন্তব্য দেখলাম।
নাহ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি কারো তেমন ক্রোধ নেই। অল্প কিছু আছে। তবে মৃদু। অন্তত উল্লাস প্রকাশ করেননি। বেশিরভাগই তার জন্য বেহেশত কামনা করেছেন।
এক হুজুর দাবী করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ মৃত্যুর আগে তওবা করেছেন এবং দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস এনেছেন। যদিও এর তেমন কোন নমুনা দেখা যায়নি। বরং মরনোত্তর দেহদান করে তিনি মৃত্যুতেও প্রথার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন।
সম্ভবত আওয়ামী বিরোধিতা ও বিএনপির উপদেষ্টা হবার সুবাদে বাংলার আপামর মুসলমান উনাকে একজন মুমিন হিসেবেই ধরে নিয়েছেন।
অবস্থা দেখে মনে হলো-
বাংলাদেশি মুসলমানের ঈমানের ষষ্ট স্তম্ভ হলো 'আওয়ামীবিদ্বেষ' আর পুলসিরাত হলো 'বিএনপি এবং জামাত'৷
এই দুটির কোন একটিতে ঈমান আনলে শান্তিতে মৃত্যু বরণ করা যায়।
_____
লেখা: গুলজার হোসেন উজ্জল।