মব কালচার বাংলাদেশ ষ্টাইল

 

০৭ এপ্রিল ২০২৫ বগুড়ায় বাটার দোকান লুটপাটের দৃশ্য


কিছুদিন আগে পাকিস্তানে একটি সুপারশপে লুটপাটের দৃশ্য দেখে নিন্দা করেছিলাম। এখন আমরা তারচেয়েও নিম্ন ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছি।
বাংলাদেশে যে ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান এবং মব কালচার শুরু হলো তা আর সহজে দমাতে পারবে না কেউ। দমাতে হলে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তার নামই গৃহযুদ্ধ! যেখানে মব সেখানেই প্রতিহত - আক্রমণ - পাল্টা আক্রমণ - লোকক্ষয়।
অবস্থাদৃষ্টে মনেহয় বাস্তবিক অর্থে আমরা অনেকটাই মব নির্ভর হয়ে পড়েছি।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দূরের যাত্রায় ট্রেনেই চলাচল করি।
গত কয়েকদিনে মব নির্ভরতা বা মবের প্রতি আত্মসমর্পণের ঘটনাগুলির একটিঃ

আগে ঢাকা থেকে মফস্বলে গেলে রাজবাড়ীতেই সময় কাটাতাম। শহরে ছোটোখাটো একটা ঠাঁই ছিলো। ছেলেমেয়েরা কলেজ পর্যন্ত রাজবাড়ীতেই পড়াশুনা করেছে। পরিবারও রাজবাড়ীতে থাকতো। ২০০০ সালের পর থেকে সপিরিবারে ঢাকায়। শ্বশুরবাড়িও রাজবাড়ী। পরিচিত দুয়েকজন বন্ধু যা আছে তা রাজবাড়িতেই। প্রয়োজনের তাগিদে গ্রামের বাড়ি কালুখালিতে গেলেও রাজবাড়ীতেই মূল আড্ডা। তাই ঘুরেফিরে রাজবাড়ীতে আসতেই হয়।

আমার গ্রামের বাড়ি থেকে রাজবাড়ী শহরের সড়কপথে দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আগে যোগাযোগের একমত্র মাধ্যম ছিলো রেলপথ। কিন্তু রেল যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে, ট্রেনের সংখ্যা কমে যায়, সময়সূচী অনুযায়ী চলে না। নব্বইয়ের দশকে রাজাবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়ক যোগাযোগ চালু হলে সড়কপথেই যাতায়াত সহজ ছিলো, বিশেষ করে সময় বিবেচনায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবং রেল যোগাযোগ খানিকটা উন্নতি হওয়ায়, এখন ট্রেনের দিকে ঝুঁকছে মানুষ।

আমার বাড়ি থেকে বাস স্টপেজের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। বাস স্টপেজ থেকে রাজবাড়ী বাস স্ট্যান্ড ১৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে আবার বাহন পরিবর্তন। এভাবে ভেঙে ভেঙে যেতে হতো। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলের লোকাল বাসে চলাচল কষ্টকর। হাইওয়ে রোডে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশায় চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ট্রেনে যাতায়াত করাটাই এখন সুবিধাজনক। অবশ্য লোকাল ট্রেনে যেতে আবার সময়ের সাজা পেতে হয়।

আমার বাড়ি থেকে রেল স্টেশনের দূরত্ব ২ কিলোমিটারের কম (এক মাইল)। রাজবাড়ি রেল ষ্টেশন শহরের প্রাণকেন্দ্রে। বেলা সাড়ে দশটায় "মধুমতি এক্সপ্রেস" নামে একটা মেল ট্রেন ছাড়ে আমার ষ্টেশন থেকে। ট্রেনটি রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী পথে চলাচল করে। ইদানিং সেই ট্রেনেই বেশি যাতায়াত করি।

অনলাইনে টিকেট করে রেখেছিলাম। ০৪ এপ্রিল সকালে ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠতে পারি না। ঈদের ছুটির কারণে ভিড়। দাঁড়ানো প্যাসেঞ্জার বেশি। কম্পার্টমেন্টের ভেতরে প্রচুর জায়গা আছে দাঁড়ানোর, কিন্তু কেউ দরজা ছেড়ে নড়ছে না। একজন রেল পুলিশকে দেখতে পেয়ে অনুরোধ করলাম, ওদেরকে একটু ভিতরে পাঠিয়ে দেয়া যায় কিনা দেখেন। বললো, অনেক রিকোয়েস্ট করেছি, আমাদের কথা শোনে না। উল্টো বলে আপনারা যান!

কিছুক্ষণ এই দরজা ওই দরোজা করে উঠতে না পেরে চলে যেতে উদ্যত। পুলিশরা নিচে নেমে দাঁড়িয়ে আছে, তারাই যেতে পারে কিনা আশঙ্কা প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে সেখানে একই ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরিহিত তিন কিশোরকে দেখতে পেলাম, তারা লোকজনকে ভেতরে চেপে যেতে অনুরোধ করছে, কিন্তু শুনছে না। তাদেরও মহিলা প্যাসেঞ্জার আছে, উঠতে পারছে না। পুলিশ তাদেরকে লেলিয়ে দিল - বলল, তোমরা একটু গিয়ে দেখো জায়গা করতে পারো কিনা। ওরা উঠে গিয়ে সবাইকে জোর করে ঠেলে ভেতরে পাঠানোর পর ওঠার সুযোগ পেলাম এবং নিজের সিটে গিয়ে বসলাম।

পুলিশকেও এখন মবের সাহায্য নিয়ে চলতে হচ্ছে! আমরা আসলেই একটা উশৃঙ্খল জাতি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষের মধ্যে যে শৃঙ্খলা আর সৌজন্যবোধ আছে তার ছিটেফোঁটাও আমাদের দেশে নাই। কিন্তু সে দেশের কথা বললে অনেকেই অন্যকিছু ভাববে, তাই চীনের কথা বলি শোনেনঃ

'২০১৮ সালের শেষার্ধে চীনের হেবেই(Hebei), স্যানডং(Sandong), হেনান(Henan), হুবেই(Hubei), সিচুয়ান(Sichuan), ঝেজিয়াং(Jhejhiang) ইত্যাদি- ধরতে গেলে চীনের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত কয়েকটা প্রদেশের রাজধানী শহরে গিয়েছি। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল চীনের বিখ্যাত "বুলেট ট্রেন"। কোথায়ও কোনো অভদ্র লোকের সাক্ষাৎ মেলেনি। বরং আশাতীত আতিথেয়তা পেয়েছি। যে কোনো প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।'

'সেদেশে যে মন্দ লোক নেই তা হয়তো না। তবে আমার দেখা মেলেনি। অথচ আমরা তাদের ধর্মহীন বলি।'


২০১৮ সালে চীন ভ্রমণের কয়েকটি ছবিঃ

স্যানডং প্রদেশের রাজধানী জিনান শহরে কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সাথে


সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংদু শহরে কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সাথে
সিচুয়ান প্রদেশে একটি ফ্যাক্টরী পরিদর্শনের সময়

হেবেই প্রদেশে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে









Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url