বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার

 

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবদ্বয় 
ছবি: বিডিনিউজ24.কম এর সৌজন্যে

এই যে গত দুইদিন যাবত মিডিয়া গরম করা খবর পরিবেশন করা হচ্ছে যে, "বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে এবং বাংলাদেশের পাওনা ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।" কথাটি অবিশ্বাস্য এবং অসত্য। কারণ পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যে প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে তাতে অনেক কিছু বলা থাকলেও এ বিষয়ে কিছুই বলা নেই।


অন্তর্বর্তী সরকার বুঝতে পেরেছে যে, এ দেশের জনতা মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া রাজনীতিতে আর কিছু বোঝেনা। তাই সেই স্পর্শকাতর বিষয়ে সুরসুরি দিয়ে জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা ছাড়া কিছু না।


দীর্ঘ ১৫ বছর বিরতির পর ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিলো ষষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।


পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া প্রেস রিলিজ অনুযায়ী আলোচনায় যেসব বিষয় স্থান পায়:

"দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য উভয়পক্ষের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। উভয় পক্ষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং কৌশলগত সহযোগিতার উপর একটি বিস্তৃত মতবিনিময় করে, যা তাদের জনগণের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি। বৈঠকে নিউ ইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া এবং জেদ্দায় সাম্প্রতিক উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে।"

"উভয় পক্ষ নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপের মাধ্যমে সম্পর্কের গতি বজায় রাখার, মুলতবি চুক্তিগুলি দ্রুত চূড়ান্ত করার এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা এবং সংযোগে সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের উপর জোর দেয়া হয়।" 

"পাকিস্তান তার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক অধ্যয়নে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশী পক্ষ পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাবেও রাজি হয়েছে এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।"

"সংযোগকে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে, উভয় পক্ষ করাচি এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। ভ্রমণ এবং ভিসা সুবিধা সহজ করার ক্ষেত্রে অগ্রগতিতেও তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।"

"বাংলাদেশী পক্ষ ঢাকায় বিখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পীদের সাম্প্রতিক পরিবেশনার প্রশংসা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানী পক্ষ পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করেছে। ক্রীড়া, মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এই ক্ষেত্রগুলিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা।"

"বহুপাক্ষিক বিষয়গুলিতে, উভয় পক্ষই সার্ককে তার প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।"

"পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশী নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে সার্ক প্রক্রিয়া দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে।"

"পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশী পক্ষকে ভারতীয় অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (IIOJK) পরিস্থিতি সম্পর্কেও অবহিত করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে বিরোধের দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।"

"মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সময়, উভয় পক্ষই অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে, বিশেষ করে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।"

"বৈঠকে আঞ্চলিক সংহতি, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং বহিরাগত চাপ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন করার গুরুত্বের উপর আলোচনা হয়েছে। একটি ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্বের জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে।"


"পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জনাব মো. তৌহিদ হোসেনের সাথে পৃথক বৈঠক করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মুহাম্মদ ইসহাক দারের আসন্ন সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে এবং ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে পরবর্তী দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।"

সূত্র: পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url