রেল বিভাগের জলঘরের ইতিবৃত্ত
রাজবাড়ীর পাংশায় অবস্থিত "জলঘর" |
সবুজ উদ্ভিদ
আচ্ছাদিত লালচে রঙের যে ভবনটি দেখা যাচ্ছে, সেটির নাম “জলঘর”। আমার জেলা রাজবাড়ীর
পাংশায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের তৈরি এ জলঘর। একটি নির্দিষ্ট
দূরত্বে রেলের গুরুত্বপূর্ণ ষ্টেশনে এমন জলঘর নজরে পড়তো।
উইকিপিডিয়া
ও বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে- ঊনবিংশ শতাব্দীতে
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ছো্টোছোটো রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু করে।
ভারতের তৎকালিন রাজধানী কলকাতা থেকে শুরু হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার
জগতি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয় ১৮৬২ সালে। সেই হিসেবে বাংলাদেশে
রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর। পরবর্তীতে ১৮৭১
সালের ০১ জানুয়ারি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপিত হয়।
প্রথমে রেলপথটি “ইষ্টার্ণ বেঙ্গল রেলওয়ে(EBR)” নামকরণ করা হয়। দেশ ভাগের পর রেলপথ সরকারি মালিকানার অধীনে আসে এবং নাম পাল্টে করা হয় “পাকিস্তান ইষ্টার্ণ রেলওয়ে(PER)”। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নামকরণ করা হয় “বাংলাদেশ রেলওয়ে(BR)” নামে।
উল্লেখ্য, গোয়ালন্দ থেকে একই কোম্পানির স্টীমারে চড়ে যাত্রীরা ঢাকায় পৌঁছতে পারতো। অর্থাৎ ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিলো রেল কোম্পানির রেল ও স্টীমার। একই টিকেটে ঢাকা থেকে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে ঢাকা রেল ও স্টীমারে ভ্রমণ করা যেতো।
যে বিষয়
নিয়ে আলোচনার সূত্রপাতঃ
তখনকার
সময়ে রেলগাড়ি চলতো বাস্পচালিত ইঞ্জিনে। কয়লা্র আগুন জ্বালিয়ে বয়লারে বাস্প উৎপাদন
করা হতো এবং বাষ্পীয় চাপের সাহায্যে ইঞ্জিন তথা রেলগাড়ী চলতো। বাস্প উৎপাদনের জন্য
স্বাভাবিকভাবেই পানির প্রয়োজন হতো। তখন তো আর তাৎক্ষণিক ডিপ টিউবওয়েল বা
সাপ্লাইয়ের পানির ব্যবস্থা ছিলো না। তাই রেল কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেল
লাইনের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে এই “জলঘর” নির্মাণ করা হয়েছিলো। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের
প্রথম রেললাইনের কুষ্টিয়ার জগতি থেকে গোয়ালন্দের মধ্যবর্তী স্থান- পাংশা রেলওয়ে
স্টেশনের পাশে নির্মাণ করা হয় এ জলঘরটি।
ইট, শুরকি ও চুনের সংমিশ্রণে আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ ফুট উঁচু গোলাকার লম্বা পাংশার এ জলঘরটি নির্মাণ করা হয় ১৮৬৯ সালে। জলঘরের দরজা রাখা হয় রেললাইনের দিকে। উপরে ওঠা-নামার জন্য লোহার পাত দিয়ে সিঁড়ি বানানো হয়। কালের পরিক্রমায় লোহার পাত জং ধরে বর্তমানে ক্ষয়ে নীচের দিকে দেবে গেছে।
ব্রিটিশ আমলে এ জলঘর ব্যবহার করা হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই জলঘরটি ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায় যা আজ অবধি বন্ধ রয়েছে। তবে কালের সাক্ষী হয়ে জলঘরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে পাংশার বুকে। এর লাল রং এখনো অমলিন। এখন পর্যন্ত দেয়ালের কোনো স্থান থেকেই একটি ইট বা শুরকির অংশবিশেষও খুলে পড়েনি।