অন্তর-যন্তর সরকার - গুজবে ছাড়খার
ইউএস নিউজের রিপোর্ট |
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুজবের কারখানা। ইতোমধ্যে গুজবে বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে তারা। দেশে এতো গুজব, সত্য-মিথ্যা যাচাই করা প্রায় অসম্ভব। যদিও বা কেউ আগ্রহ নিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করে, সেটা আর তারা কর্ণপাত করে না। ভাবটা এমন; “যা কইছি, কইছি”!
০৮ এপ্রিল দেশব্যাপী এক গুজব চাউর হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নাকি “বিশ্ব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তালিকা”য় ৪৭ তম। সেটা নাকি বর্তমান ইউনুস সরকার গত ৮ মাসে বাংলাদেশকে বিশ্বের ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। অনতর্বর্তীকালীন সরকারের যুব, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার এক ফেসবুক পোষ্টে এ দাবি করেছেন। এরই সূত্র ধরে দেশের প্রায় সবকটি জাতীয় দৈনিকে একই সংবাদ প্রচার করেছে। এই দাবির সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “ইউএস নিউজ” নামের একটি ওয়েবসাইটের নাম।
গুজবে যখন কান ঝালাপালা, গতরাতেই তা অনুসন্ধানে উদ্যোগী হলাম। খোঁজ
নিয়ে দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মিডিয়া কোম্পানি “ইউএস নিউজ” সংবাদ প্রচারের পাশাপাশি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা র্যাঙ্কিং
করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ সংক্রান্ত তালিকা সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের
সেপ্টেম্বর মাসে। জরিপকার্য পরিচালনা করা হয়েছে মার্চ ২০২৪ থেকে মে’ ২০২৪ সময়কালের
এবং সেটা জনসংখ্যার পরিসংখ্যান। যে সময়কালের ফলাফল দেখানো হয়েছে
সে সময় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামীলীগ সরকার।
ইউএস নিউজ প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই তালিকা প্রকাশ করে। ২০২৫
আলের র্যাংকিং এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
২০২৩ সালের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো ওই বছরের ০৬ সেপ্টেম্বর, যার জরিপ কার্যটি পরিচালিত হয়েছিলো ১৭ মার্চ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত। সে বছর ৮৭ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৪০তম এবং সব বিষয় মিলিয়ে ৭৯তম। ২০২২ সালের তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছিলো সে বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর, জরিপ হয়েছিলো ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। ৮৫টি দেশের মধ্যে সে বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৪৪তম এবং সব মিলিয়ে ৭১তম।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ ১২৩ তম অবস্থান থেকে ইউনুস সরকারের আমলে উন্নীত হয়ে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে। অথচ ইউএস নিউজের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশ এই কার্যক্রমের প্রথম অন্তর্ভূক্ত হয় ২০২২ সালে। সে সময় থেকে যতোগুলো দেশের তালিকা র্যাংকিং-এ উঠে এসেছে তা হলো, ২০২২ সালে ৮৫টি, ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি। এ পর্যন্ত কোনো বছরেই ১২৩ টি দেশ র্যাংকিং তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। অতএব, বাংলাদেশ কখনো ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবি মোটেও সঠিক নয়।
বর্তমান জবরদখলকারী সরকারের গত ৮ মাসে কোনো সাফল্যই নাই, বরং নানান ব্যার্থতায় ভরা। কিন্তু ‘চাপাবাজি’তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এ পর্যন্ত যতোবার ‘চাপাবাজি’ করেছে, ততোবারই ধরা খেয়েছে। এতে দেশের জনগন লজ্জা পেলেও তাদের কোনো বিকার নেই। গত ৮ মাসে শতশত চাপাবাজি আছে তারমধ্যে- ‘পদ্মা সেতুর ব্যায় সাশ্রয়’। পদ্মা সেতুর ব্যয় সাশ্রয়ের সংবাদটি সেতু নির্মাণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানেই জানা গয়েছিলো যে, সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক্কলিত ব্যায় থেকে একটা এমাউন্ট বেঁচে গেছে।
সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এর পরে আরো কয়েকটি গুজব ছড়িয়েছেন। তার সর্বশেষ গুজব বা ‘চাপাবাজি’ হলো; তারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন বলে এ বছর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে, মানুষ বিনা দূর্ভোগে বাড়িতে গমন করেছে। অথচ এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের। ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতা দখল করার পর দেশে কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় নাই, বরং অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ যা হয়েছে সবই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এবং তাদের সময়ে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে, যেমন; পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু, মেট্রো রেল, রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, উওরাঞ্চলে সেতু প্রশস্তকরণ এবং যমুনা রেল সেতু ইত্যাদি। গত কিছুদিন আগেই যমুনা রেল সেতু চালু হয়েছে, সড়ক প্রশস্ত হয়েছে, যার ফলে ওই পথে এবার নির্বিঘ্নে মানুষ চলাচল করতে পেরেছে।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় আড়াই’শো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে গাজীপুর এলাকার অনেক শ্রমিক আগে থেকেই গ্রামে। তাছাড়া ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষ ধাপে ধাপে বাড়িতে গিয়েছে। তাছাড়া দেশের বর্তমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেকে বাড়িতেই যায়নি। এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে।