নাৎসি ও রাজাকারের মধ্যে মিল

ছবি: সিম্বলিক

"নাৎসি ও রাজাকারের মধ্যে মিল"

লিখেছেন: @Zia Haider

===========================

"ডিপসিক-কে প্রশ্ন করেছিলামঃ 

নিও নাৎসী আর রাজাকারের মাঝে কি কি মিল?

———


নিও-নাৎসী এবং রাজাকার উভয়ই তাদের নিজ নিজ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তাদের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে, যা তাদের কর্মকাণ্ড এবং আদর্শের দিক থেকে তুলনা করা যায়। নিচে তাদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মিল দেওয়া হল:


১. সহযোগী বা দোসর হিসেবে কাজ করা:


নিও-নাৎসী: নিও-নাৎসীরা নাৎসি জার্মানির আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে এবং প্রায়শই বর্ণবাদী, জাতিবিদ্বেষী এবং ঘৃণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে। তারা তাদের আদর্শ প্রচারের জন্য সহিংসতা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ব্যবহার করে।


রাজাকার: রাজাকাররা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা, গণহত্যা এবং নির্যাতনে অংশ নেয়।


২. ঘৃণা ও সহিংসতার প্রচার:


নিও-নাৎসী: নিও-নাৎসীরা জাতিগত, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঘৃণা প্রচার করে। তারা ইহুদি, অভিবাসী, সমকামী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্যের পক্ষে কাজ করে।


রাজাকার: রাজাকাররা বাঙালি জাতীয়তাবাদী, হিন্দু সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা প্রচার করে। তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মিলে গণহত্যা, নারী নির্যাতন এবং লুটপাটে অংশ নেয়।


৩. ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক ভূমিকা:


  নিও-নাৎসী: নিও-নাৎসীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির অপরাধগুলিকে অস্বীকার বা হ্রাস করার চেষ্টা করে। তারা হলোকস্ট এবং অন্যান্য নাৎসি অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে।


রাজাকার: রাজাকাররা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করে এবং বাঙালি জনগণের উপর অত্যাচার চালায়। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল।


৪. সংগঠিত সহিংসতা ও অপরাধ:


নিও-নাৎসী: নিও-নাৎসীরা প্রায়শই সংগঠিত সহিংসতা, হামলা এবং ঘৃণামূলক অপরাধে জড়িত থাকে। তারা তাদের আদর্শ প্রচারের জন্য সহিংস পদ্ধতি ব্যবহার করে।


রাজাকার: রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মিলে সংগঠিত সহিংসতা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার চালায়।


৫. সমাজে নেতিবাচক প্রভাব:


নিও-নাৎসী: নিও-নাৎসীরা সমাজে বিভেদ, ঘৃণা এবং সহিংসতা সৃষ্টি করে। তারা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং সহিংসতা প্রচার করে।


রাজাকার: রাজাকাররা বাংলাদেশের সমাজে বিভেদ এবং সহিংসতা সৃষ্টি করে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদী এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়।


৬. ঐতিহাসিক বিচার ও জবাবদিহিতা:


নিও-নাৎসী: অনেক দেশে নিও-নাৎসী কার্যকলাপ আইনত নিষিদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়।


রাজাকার: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক রাজাকারকে তাদের অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ১৯৭২ সালে দালাল আইন প্রণয়ন করা হয় এবং ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অনেক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হয়।


উপসংহার:


নিও-নাৎসী এবং রাজাকার উভয়ই তাদের নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে ঘৃণা, সহিংসতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড সমাজে বিভেদ ও সহিংসতা সৃষ্টি করে এবং তারা তাদের অপরাধের জন্য ঐতিহাসিক বিচারের মুখোমুখি হয়। উভয় গোষ্ঠীই তাদের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত।"

@Zia Haider

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url