হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প ও জেলেনেস্কির মধ্যে সংঘটিত ঘটনার আসল কারণ


ছবি: ফক্স নিউজ


অনেকেই কাল মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে ঘটা ঘটনা নিয়ে জেলেসেস্কির দোষ না ট্রাম্পের দোষ, কে কি বলেছে না বলেছে, কে প্রথম আগ্রাসী বক্তব্য রেখেছে এগুলো নিয়ে নানা মন্তব্য করছে। আপনারা এগুলো থামান। এই ধরণের চিন্তা আপনাদের রাজনৈতিক ও ডিপ্লোম্যাটিক নিরক্ষরতা প্রমাণ করে। অনেককে দেখছি, বিশেষ করে বাম এবং অনেক খ্যাতনামা সাংবাদিকদের এটা বলতে যে - দেখেছ জেলেনিস্কির কি বুকের পাটা। যেটা বাঘা বাঘা নেতারা পারে না সে পেরেছে। এগুলো সবই আপনাদের চিন্তা ভাবনার সীমাবদ্ধদা শুধু নয়, আপনারা যে ঘটনার পেছনের ঘটনা অনুধাবনে অক্ষম সেটা প্রমান করে।


ওভাল অফিসের যে ঘটনা আমরা দেখেছি সেটা কি ছিল? সেটা ছিল একটি সংবাদ সম্মেলন। সেটা কিসের জন্য ছিল? ছিল গত ১০ দিন ধরে ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি চুক্তি নিয়ে যে দৌড় ঝাঁপ হচ্ছে সেটার আনুষ্ঠানিকতা। যে চুক্তিতে ইউক্রেন রাজি হয়েছিল। যে চুক্তিটি ছিল আমেরিকার সাথে একটি নন মিলিটারি অর্থনৈতিক চুক্তি, যে চুক্তিপত্র এর মধ্যে কাগজে ছাপা হয়ে গেছিল। এই চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল কিয়েভে, শেষ মুহুর্তে সেটা না করে জেলেনিস্কি সেটা মিউনিখে করবে বলে জানায় মার্কো রুবিনো ও জে ডি ভান্সের সাথে। সেখানেও সে শেষ দিন জানায় সে আমেরিকায় সেটা সাক্ষর করতে চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে। যে চুক্তির সব শর্ত ও নেগোসিয়শন এর মধ্যে হয়ে গেছে তার সাথে এবং আলাদাভাবে রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত শান্তিচুক্তি নিয়ে। সেই অসামরিক অর্থনৈতিক চুক্তিতে সাক্ষর করার আগে একটি সাংবাদিক সম্মেলন ছিল সেটা।


এটা নিয়ে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট তার আগেই পোস্ট দেন এই বলে যে "২৮ ফেব্রুয়ারী, চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব স্বাক্ষর করবে যা আমেরিকান করদাতা এবং ইউক্রেনীয় জনগণ উভয়কেই উপকৃত করবে"।


যে কোন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে দুই পক্ষ মধ্যস্থতাকারীর সাথে চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করে প্রাইভেটলি। সেখানে বাগ বিতন্ডা হয়, মন কষাকষি হয় এবং পরিশেষে উভয় পক্ষ রাজি হলে চুক্তি গৃহিত হয় এবং স্বাক্ষর হয় একটি আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে এবং অতিথি ও সাংবাদিকদের সামনে। অতিথি ও সাংবাদিকদের সামনে অপ্রয়োজনীয় কথা ও চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে আবার বাগ বিতন্ডা হয় না বা কাদা ছোঁড়াছুড়ি হয় না। 


ওভাল অফিসের ওই সভায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যে বলেছেন জেলেনেস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অসম্মান করেছেন এটা জেলেনেস্কির মুখের কথার জন্য নয়। সেটা উভয় পক্ষের সাথে একটি নেগোশিয়েট করা চুক্তির স্বাক্ষর করতে এসে সারা দুনিয়ার সামনে সে অপর পক্ষ এবং নেগোশিয়েটরের পক্ষপাতিত্ব ও অপরাধের ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করেছে। এর অর্থ হচ্ছে নেগোশিয়েটরকে ছোট করা। এর অর্থ হচ্ছে সে যুদ্ধ বন্ধ চায় না। সে চায় আমেরিকার সাথে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে এবং একই সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। সে ভুলে গেছিল যে এটা একটি সংযুক্ত চুক্তি। যার অর্থ হল অর্থনৈতিক চুক্তি হবে যদি রাশিয়ার সাথে শাস্তিচুক্তিতে সে স্বাক্ষর করে। এটা মেনে নিয়েই সে কথা দিয়েছিল। সেই কথা সে ভঙ্গ করে সে এখন একটা চুক্তি চাইছে কিন্তু পরেরটা নয়। 


এই কথা ভঙ্গ করা ডিপ্লোম্যাসিতে চুড়ান্ত অসততা বা ল্যাক অব ইন্টিগ্রিটি। এবং এটা যে কোন চুক্তিতে নেগোশিয়েটরকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। সেই কারণেই আমেরিকা ক্ষুব্ধ। জেলেনেস্কি কি বলেছে বা তার স্যুট না পরার কারণে নয়। শুধু নিউজ বা সোশাল মিডিয়া ক্লিপ দেখে সেটাই ঘটনা এটা মনে করা বন্ধ করুন। ঘটনার পেছনের ঘটনা অনুধাবনে সচেষ্ট হোন। সেটা না হলে জেলেনেস্কির মত হয়ে যাবেন।

লিখেছেন: @Sirajul Hossain


Video Courtesy: Fox News

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url