সশস্ত্র বাহিনী আমাদের গর্ব: দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী - ডাঃ খলিলুর রহমান
![]() |
ছবি: প্রতীকী |
"সশস্ত্র বাহিনী আমাদের দেশের গর্ব, দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁরা বীরত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেছেন। কে-ফোর্স, এস-ফোর্স, জেড-ফোর্স এবং সেক্টর কমান্ডারদের বীরত্বগাঁথা আমদের জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সবারই এই দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে ও ঐতিহ্য মেনে তাঁদের ব্যাপারে কথা বলা উচিত।
আমি যখন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ (তখনকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল) থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি তখন আমার কয়েকজন পরীক্ষার্থী বন্ধু Appear সার্টিফিকেট দিয়ে চতুর্থ বিএমএ লং কোর্সে আবেদন করার জন্য আমাকেও বলে। আমি তখন আবেদন না করলেও ইউনিফর্মড সার্ভিসের প্রতি আমার এক ধরনের আগ্রহ জন্মে যায়। আমার সেই বন্ধুদের একজন পরবর্তীতৈ লে: জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় কলেজ ছেড়ে দিয়ে ৭ম বিএমও লং কোর্সেও আমার যোগদান করা হয়নি আমার মায়ের আপত্তির কারনে। তখন সশস্ত্র বাহিনীতে নাকি অনেক ক্যু হতো। মা বলেছিলেন এমবিবিএস পাশ করে আর্মি মেডিক্যাল কোরে যোগদান করতে। পরে চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়ে সিদ্ধান্ত নেই পাশ করার পর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিব। কিন্ত বিসিএস পরীক্ষার আবেদন পত্রে অপসন সংক্রান্ত জটিলতায় পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করতে হয়। পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদানের পরও এই দুই বাহিনীর সাথে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছি এবং বলতেই হয় তাঁদের সাথে কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। তাঁদের পেশাদারিত্ব দেখে অভিভূত হয়েছি। দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁরা দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং মানবতার সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন।
আমি যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে জাতিসংঘ শাখায় সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত, তখনই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ব্যাপকহারে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যোগদান করতে থাকেন। তখন আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন ও পুলিশ সদর দপ্তরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সময় তাঁদের পেশাদারিত্ব দেখে চমৎকৃত হয়েছি। ২০২০ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও করোনা সেলের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কভিড মহামারীর সময়েও এদের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সময় দেখেছি দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তাঁদের আসাধারণ দেশপ্রেম, ভালবাসা ও মমতার কথা। কানাডায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার সময় কানাডিয়ান সেনাবাহিনী ও সরকার আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করতেন বিশেষ করে UN Chief of Defence Staff Mechanism, যেখানে বাংলাদেশ , কানাডা এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এই কাঠামোর নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। UN Peacekeeping মিশনে Women’s Role in Peace and Security এর বিষয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাঁদের প্রশংসা শুনে বুক গর্বে ফুলে উঠতো।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর প্রথমবারের মত আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু কিছু গোষ্ঠী এবং দেশে-বিদেশে অবস্হানকারী সমাজ ও দেশ বিরোধী কিছু চক্র তাদের নিজেদের স্বার্থে প্রকাশ্যে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর প্রচারনা চালাচ্ছে যা আমাদের দেশ ও জাতির বৃহত্বর স্বার্থের পরিপন্হী। দেশের সাধারন নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব আপত্তিকর, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। একই সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাহিনীর সাহায্যে সবাই এগিয়ে আসুন।"
Dr Khalilur Rahman