কবি কামিনী রায়ঃ বাংলার প্রথম মহিলা অনার্স গ্রাজুয়েট

কামিনী রায়

শুধু কবিতা লেখাই নয়, বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগের শিক্ষিকা কামিনী রায় নারী আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন। নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য তাঁর লেখা গ্ৰন্থের নাম ‘বালিকা শিক্ষার আদর্শ’। ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর কবির জন্মদিনে ডুডলের মাধ্যমে বাংলার বিস্মৃতপ্রায় এই কবি ও সমাজকর্মীকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে গুগল। এই তথ্য আমাদের অনেকের কম-বেশি জানা।

কামিনী শুধু প্রথম দিকের মহিলা গ্ৰ্যাজুয়েটদের একজন শুধু নয় প্রথম অনার্স গ্ৰ্যাজুয়েট। অদ্ভুত হলেও সত্য তাঁর পিতা চণ্ডীচরণ সেন নিজের স্ত্রী'র লেখাপড়া শেখায় আপত্তি না থাকলেও বড় মেয়ে কামিনী কে কিন্তু চাকরি করার অনুমতি দিয়েছেন অনেক পরে। অথচ যদি সেইসময় তিনি পিতার থেকে চাকরি করার অনুমতি পেতেন চন্দ্রমুখীর আগে তিনি হতেন বেথুনের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেডি সুপারিনটেনডেন্ট।

এখানেই শেষ নয় প্রথম দিকে কামিনীর যখন কলেজে পড়ার ইচ্ছা হয় খুব বিরক্ত হয়েছিলেন চণ্ডীচরণ। তাঁর মেয়ে চাকরি করবে! শুধু লেখাপড়া শিখেছে বলে!চণ্ডীচরণের মনও সংশয়াচ্ছন্ন কামিনীকে তিনি চিঠিতে লিখলেন তুমি চাকরি করিয়া খাবে একথা ভাবতে তাঁর ক্লেশ হয়। দুবছর পরে অবশ্য চণ্ডীচরণের মনের পরিবর্তন হয়। বন্ধুরা বোঝালেন মেয়েকাজ করলে ক্ষতি কী! বরং অনেক মেয়ে তাঁকে দেখেই অনুপ্রাণিত হবে। আসলে সেকালে বাবা-মায়েরা ভাবতেন ভাল ঘর আর ভাল বরের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়া তাদের আসল কর্তব্য।

কম বয়স থেকেই কামিনী রায়ের কবিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৮৮৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’ প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লেখেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় নারীশিক্ষার তেমন চল ছিল না। সময়ের নিয়মেই বইটিতে কামিনী রায়ের নাম প্রকাশিত হয়নি। তবে মুখে মুখে তাঁর কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়েই। রবীন্দ্রনাথকেই গুরুর আসন দিয়েছিলেন কামিনী রায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনাও করেছেন।

কামিনী রায় বিয়ে করেছিলেন তিরিশ বছর বয়সে বিপন্তীক কেদারনাথ রায়কে। স্বামী ভদ্রলোকটি ছিলেন তাঁর কবিতার মুগ্ধ পাঠক। পূর্বরাগের স্পর্শ রাঙিয়ে ছিলো তাদের হৃদয়। বিয়ের পরে চাকরিও করেন নি কামিনী, কবিতাও লেখেননি। কামিনী রায় বেথুন কলেজ থেকে অনার্স নিয়ে বি এ পাশ করেছিলেন। কবিতা লিখে প্রথম জীবনে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন। বেথুন কলেজে শিক্ষকতা করছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' প্রদান করে। একবছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

লেখাঃ সংগৃহীত

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url