পাকিস্তান হাই কমিশনারের সন্দেহজনক তৎপরতা
গত
কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ
বাংলাদেশে খুবই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তার শিডিউল যে কোনো উপদেষ্টার চেয়ে ব্যাস্ত।
রীতিমতো একজন ্রাজনৈতিক নেতার মতো তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে
বেড়াছেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে তাকে সর্বোচ্চ ভিআইপি প্রটোকল দিচ্ছে। ২০০৩-০৫
মেয়াদে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের পর এতো
ব্যস্ত এবং কর্মতৎপর রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ আর দেখে্নি।
আসুন
গত এক মাসে তার কর্মসূচীগুলো খেয়াল করিঃ
·
২৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের হাই কমিশনার রাজশাহী মেডিকেল
বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেন।
রাবির একটা প্রতিনিধি দলও সেখানে তার সাথে দেখা করেন।
·
০৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার হরিহারা সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রান্তিক খামারীদের এক সমাবেশে অংশগ্রহন করেন। এই
মিটিংএ উপস্থিত ছিলেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং এটর্নী জেনারেল
এডভোকেট আসাদুজ্জামান।
·
৬-৭ ফেব্রুয়ারি তিনি সস্ত্রীক অবকাশ যাপন(!) করতে যান
কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সমূদ্র সৈকতে। নামে অবকাশ যাপন হলেও এই সফরে রোহিঙ্গাদের
একটা টীমের সাথে তার তার দীর্ঘ মিটিং হয়েছে বলে জানা যায়।
·
২৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তা্নের হাইকমিশনার তিন সদস্যের দল নিয়ে
চট্টগ্রাম যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সাথে মিটিং করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে
উর্দু ডিপার্টমেন্ট খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুপুরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে লাঞ্চ
করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ(!) ব্যক্তির সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
এরপর বিএসআরএম এর ফ্যাক্টরি ভিজিট করেন। এটা ছিলো একমাসের ব্যবধানে তার
দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম ভ্রমণ।
·
২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি রংপুর যান। রংপুর চেম্বার ও কমার্সের
ব্যবসায়ীদের সাথে দিনভর নানান বৈঠক করেন। রংপুর অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের জন্য
আলাদা শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার কথা বলেন, যদিও এটা কিভাবে সম্ভব তা তারাই জানে।
এগুলো
হলো শুধু তার ঢাকার বাইরের সফরের হিসাব। এই প্রতিটা সফরের কমন বৈশিষ্ট্য হলো লোক
দেখানো বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করলেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মূলতঃ স্থানীয়
জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে মিটিং করেছেন এই সফরগুলোতে।
প্রশাসনের পক্ষ হতে গোপনীয়তা রক্ষা সহ সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে তাকে।
ঢাকায় নিত্যই তিনি চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন উপদেষ্টার দফতর। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাথেই এক মাসে দেখা করেছেন অন্ততপক্ষে তিনবার। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ছাড়াও তিনি দেখা করেন প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টা, যুব ক্রীড়া ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা, মৎস ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা।
এ ছাড়াও তিনি বিএনপি, জামাত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি ও সুশীল(!)দের সাথে প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জামায়াতের আমিরের সাথে দলবল নিয়ে করেছেন সুদীর্ঘ মিটিং।
পাকিস্তানের
রাষ্ট্রদূতের সফর করা এলাকাগুলো খেয়াল করেন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী,
রংপুর, ঝিনাইদহ! এগুলোকে যদি কারো কাছে স্বাভাবিক কূটনৈতিক কর্মকান্ড বলে মনে হয়
তাহলে বলতে হবে, পাকিস্তানের কুটনৈতিক মিশনের কর্তাদের কূটনীতি আর রাজনীতি সব এক
পাল্লায় মাপছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
পাঠক তথা
সর্বস্তরের জনসাধারণকে অনুরোধ করবো, একটু ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন। দেশ কোন
পথে যাচ্ছে বুঝতে কষ্ট হবে না।
হাই কমিশনারের বিভিন্ন স্থানে সফরের আরো গোটা ত্রিশেক ছবিঃ