মানুষের জন্যে মানুষ
![]() |
"পেশাগত জীবনকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আলাদা রাখার জন্য আমি ডাক্তারি জীবনের বহু গল্প বলি না। কিন্তু শ্রী রনজিৎ দাস ও শ্রীমতী জ্যোৎস্না দাসের গল্পটা বোধহয় বলা দরকার।
মিস্টার রনজিৎ সিওপিডি বা শ্বাসকষ্টের রোগী।
কয়েকদিন আগে রাত ১ টার সময় যখন এসেছেন তখন ভয়াবহ অবস্থা৷ প্রেশার হাই, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪০% এর নিচে, এবং স্বভাবতই অজ্ঞান।
ইসিজি করে দেখা গেছে হার্টের অবস্থাও সুবিধাজনক নয়।
এক্ষেত্রে করণীয় যেটা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে মোটামুটি স্টেবল করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা।
তখনই বাঁধছে গোলমাল।
এনারা এসেছেন প্রায় শূন্য হাতে।
ওদিকে কে মাতব্বরি করে এম্বুলেন্স কল করেছে, সেটাও চলে এসেছে।
একদিকে রোগীর স্ত্রী কাঁদে, ওদিকে রোগী যায় যায়, এদিকে ইনারা চরম গরীব।
যাই হোক সেইরাতে কিভাবে আমি উনাদের সবকিছু ম্যানেজ করেছিলাম তা বলতে চাইনা। কিন্তু উনারা আমাকে মনে রেখেছেন এবং সুস্থ হওয়ার পর দেখা করতে এসেছেন এই ছবি তার প্রমাণ।
এবং আজ কথায় কথায় শুনলাম উনারা বহুবছর একটা বাজারে রুটি সিঙ্গারা বানিয়ে বিক্রি করতেন। এতদিন কোন সমস্যা হয়নি।
কিন্তু সম্প্রতি তাদের দোকানের উল্টো পাশে এক মাদ্রা*সা থেকে ফ তো য়া জারি হয়েছে যে হিন্দুর বানানো জিনিস নাকি খাওয়া যাবে না।
ফলে বিক্রি বন্ধ হয়ে দোকান তুলে দিতে বাধ্য হয়ে এখন উনারা পথে বসেছেন।
জ্যোৎস্না দাসের ভাষ্যমতে এতকাল মাদ্রা*সার সকলেই আমার বানানো রুটি সমুচা খেয়ে এসেছেন সমস্যা হয়নি, এখন কেন হচ্ছে বাবা।
স্বামীর চিকিৎসা করতে গিয়ে বহুকষ্টে বানানো স্বর্ণের হারটা বিক্রি করতে হয়েছে এই কথাটা বলার সময় উনার কন্ঠে যে কষ্ট ছিলো তা বলার বাইরে।
ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন ভীষণ নরম মন, আবার পেশা হিসাবে নিয়েছি চিকিৎসা।
মানুষের দুঃখ কষ্ট অভাব দেখলে এমনিই আমি ভীষণ মনোবেদনায় ভুগি। সেখানে টেবিলের এপাশে বসে এরকম কষ্ট প্রায়ই দেখা লাগে।
এরপরে যদি শোনা লাগে মিথ্যা ও অনৈতিক একটা ধারণায় কারো রুজির পথ বন্ধ করে পথে বসানো।
ধর্মের নামে মানুষ যে প্রচণ্ড স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতা অন্তরে পুষে রাখে, তার ভুক্তভোগী হচ্ছেন ইনারা।
যে ধর্ম মানুষের অন্ন কেড়ে নেয় সেই ধর্ম কতটুকু মানুষের মঙ্গলের জন্য, তা ভাবতে বাধ্য করে।
এতকিছুর পরেও দুজন হিন্দু মানুষ আমাকে মুসলিম জেনেও যখন প্রাণভরে আর্শীবাদ করে গেছেন ভাবি -
তখন আমি আসলে মানুষকে আরো ভালবাসতে শিখি, ধর্মকে না।
এই মানুষগুলোর ভালো হোক।"
লিখেছেন:
©Dr. Raihanul Ferdous