খালি গায়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন পিরোজপুরের ফণিভূষণ মিস্ত্রী
ছবিঃ ডিবিসি নিউজের সৌজন্যে |
পিরোজপুরের ফণিভূষণ মিস্ত্রী। বয়স ৮২ বছর। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে
পুরোপুরি খলিগায়ে জীবনযাপন করছেন তিনি। তীব্র শীতেও শুধু একটি সাদা ধুতি পরেই দিব্বি
চলাফেরা করেন। এমনকি স্নানের সময় ছাড়া পায়ে দেন না কোনো জুতা স্যান্ডেলও। শীতের সময়ে
সবার যখন জবুথবু অবস্থা তখনও ভোরে ঘুম থেকে উঠে দিব্বি স্নান সেরে দিন শুরু করেন ফণিভূষণ।
এলাকার লোকজন ‘সাধুকর্তা’ বলে সম্বোধন করেন ৮২ বছর বয়সী এই অভিনব মানুষটিকে।
স্থানীয় একজন বলেন, “সাধু কর্তাকে আমি ছোটোকাল থেকেই দেখি তিনি সব সময় খালি গায়েই থাকেন।
কখনও তাঁকে জামা, গেঞ্জি গায়ে দিতে দেখিনি।“ অন্য আরেকজন বলেন, “কিভাবে এতো শীতে যে
সে খালি গায়ে থাকে!”
৮২ বছরের জীবনে কখনও কোনো চিকিৎসকের কাছে যাননি বা কোনো ওষুধ গ্রহণ
করেননি বলে জানান ফণিভূষণ নিজে। কোথায়ও যেতে হলে কোনো যানবাহন ব্যবহার করেন না তিনি।
পায়ে হেঁটেই পাড়ি দেন দীর্ঘ পথ।
খাবারেও রয়েছে ভিন্নতা। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সহ ৯ ধরণের খাবার কখনই
গ্রহণ করেন না ৮২ বছরের এই বৃদ্ধ। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘সাধু’ নামেই পরিচিত। তিনি
নিজে বলেন, “আমার এই ভালো লাগে। আমি এই ৮২ বছরের জীবনে আমি পান, তামাক, বিড়ি, সিগারেট,
পেয়াজ, রসুন, ডিম, মাংস, গরুর দুধ সহ নয় রকম জিনিস খাইনি। আমার এতেই ভালো লাগে। ৮২
বছর আমার গায়ে খুজলি, পাঁচরা এমনকি একটি ফোঁড়াও হয়নি। আমাকে সৃষ্টিকর্তা পরম শান্তিতে
রেখেছেন।“
বিয়ের প্রতি অনীহা থাকায় চিরকুমারই রয়ে গেছেন বৃদ্ধ ফণিভূষণ। তার ভাষ্যমতে,
“স্বামী এবং শ্বাশুরীর প্রতি নারীদের অবহেলা দেখে বিয়েতে কখনই আগ্রহী হননি তিনি।“ যুবক
বয়সে পরিবারের সবাই চেষ্টা করেও তাকে বসাতে পারেননি বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়ের ব্যাপারে
তিনি বলেন, “ও আমার ভালো লাগেনা। স্বামীরে কেউ দেখতে পারেনা, শ্বাশুড়ির ভাত নাই। চারিদিকে
দেখে ওসব আমার ভালো লাগেনা। একলা আছি, বেশ আছি। সব ওই মালিক(শ্রষ্টা) বলে দিয়েছে, এভাবে
চলবে- তোমার কোনো সমস্যা হবে না।“
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার চরনি পত্তাসী গ্রামের বাসিন্দা ফণিভূষণ
মিস্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, ছোটোবেলা থেকেই বড়ভাইয়ের সংসারে রয়েছেন। ২০ বছর বয়স থেকে
স্বাভাবিক জীবনযাপন ত্যাগ করেন তিনি। মূলতঃ সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকেই
এরূপ জীবনযাপন শুরু হয় তার। বৃদ্ধ ফণিভূষণের এমন কঠিন জীবনধারায় বিস্মিত হন অনেকেই।
এলাকার মহিলারা জানান, ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগে ঢোকেন গোয়ালঘরে। গোয়ালঘর
পরিস্কার করে গরুর খাবার দিয়ে যান পুকুরঘাটে। স্নান সেরে ঢোকেন ঠাকুর ঘরে। পুজা অর্চনা
সেরে তারপর শুরু করেন দিনের অন্যান্য কাজ।
তার নিজের ভাষায়, “বড় বাড়ি বড় ঘর… ৫ তলা, ৭ তলা, ১০ তলা, শেষে চিত
হতে হবে গাছতলা। তলায় বসিয়ে রাখবে না। আমারে সে (শ্রষ্টা) বেশ শান্তিতে রেখেছে।“
সূত্রঃ ডিবিসি নিউজ