অপারেশন ডেভিল হান্ট

 
ছবিঃ বিবিসির সৌজন্যে

০৫ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু ভবন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ নেতাদের বাড়িঘর এবং স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাগুলো একের পর এক ধংস করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ০৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রুবার আওয়ামীলীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকম মোজাম্মল হকের বাড়ি আক্রান্ত হলে এলাকাবাসী ‘ডাকাত পড়েছে’ মর্মে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আক্রমণকারীদের প্রতিহত করে। এতে কয়েকজন মারপিটের শিকার হয় এবং আহত অবস্থায় ১৫-১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরই জের ধরে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ০৮ ফেব্রুয়ারী থেকে “অপারেশন ডেভিল হান্ট” নামে বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দেয়। ফলে জনমনে এই ধারণা প্রকাশ পায় যে, সরকারের শত্রুপক্ষকে দমন করার জন্যই এই অপারেশন। নাহলে সেনাবাহিনী আগে থেকেই ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মোতায়ন থাকা সত্বেও কেনো আলাদা করে অপারেশন পরিচালনা?

 

তবে আমার ধারণা বিপরীত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও আমি এখনো যথেষ্ট আস্থাশীল। আমি মনে করি যে সব মানুষের মধ্যেই বিবেকবান মানুষের সংখ্যা এখনো বেশি- হোক তা সাধারণ জনগন, পুলিশ, সেনাবাহিনী বা অন্য কিছু। তাছাড়া সেনাবাহিনীর মধ্যে দুর্নীতি অন্যান্য বিভাগের চেয়ে অনেক কম। বিশেষ করে পাবলিকের সাথে তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ নাই। সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন খুব কঠোর। কেউ দুর্নীতি করলে তাকে সেনা আইন দ্বারা কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। তাই এই অপারেশন সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হলে ভালো রেজাল্টই আশা করতে পারি, সেটা যে পক্ষেই যাক।

 

অভিজ্ঞতা বলে, ইতোপূর্বে সন্ত্রাস দমনের নামে বিরোধীদের দমাতে বিএনপি সরকার দ্বারা দুই দুইটা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো, যা উল্টো তাদেরই বিপক্ষে যায়। অপারেশনে তাদের দলের লোকই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিচে সে পদক্ষেপ দুটি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।

 

অপারেশন ক্লিন হার্ট 

২০০২ সালে অপরাধ বিরোধী একটি যৌথ অপারেশন পরিচালনা করা হয়, যার নাম দেয়া হয় “অপারেশন ক্লিনহার্ট”। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি), পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথভাবে অপারেশনটি পরিচালিত হয়। 

 

অপারেশনটি ১৬ অক্টোবর ২০০২ থেকে ৯ জানুয়ারি ২০০৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।অপারেশন চলাকালে যৌথ বাহিনী ১১ হাজার ২৪৫ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। এতে শত শত আহত এবং ৫০ জনেরও বেশি হেফাজতে মারা যায়। তাদের বেশিরভাগই “হার্টফেল” করে মারা গিয়েছে বলে বলা হয়। বিবিসি সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনা হলে অপারেশনটি স্থাগিত করা হয়।

 

বিএনপি সরকার অপারেশনে অংশগ্রহণকারীদের আইনী সুরক্ষা দেয়ার জন্য একটি ইন্ডেমনিটি আইন পাশ করে। যদিও সে আইন ২০১৫ সালের নভেম্বরে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে এবং বাতিল করে দেয়।

 

উল্লেখ্য, বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন পরিচালিত হলেও তাদের দলের লোকই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

 

র‍্যাব (র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন) গঠন

বিএনপি সরকারের একই মেয়াদে ২০০৪ সালে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাব গঠন করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ইউনিট হিসেবে পুলিশের অধীনে পরিচালিত এই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথমে র‍্যাট (র‍্যাপিড একশন টিম) নাম দিলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা পরিবর্তন করে র‍্যাব নাম দেয়া হয়।

 

আইন অনুসারে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিডিআর, আনসার ও ভিডিপি এবং কোষ্টগার্ড সদস্যদের নিয়ে বাহিনীটি গঠিত হয়। র‍্যাব গঠিত হওয়ার পর অপারেশন শুরু হলে এবারও বিএনপি দলীয় লোকজনই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কারণ এ যাবৎকাল দেখা গেছে, যারা ক্ষমতা ভোগ করে তারাই দুর্নীতিতে বেশি বেশি জড়ায়। উল্লেখ্য, শুরুতে র‍্যাব খুব চমক দেখালেও পরে অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়।

 

উপরে আলোচিত ঘটনা দুটি পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, হাজারও কুটকৌশল অবলম্বন করলেও আখেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রকৃত অন্যায়কারীরা। তাই এই অপারেশনও যে বুমেরাং হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অতএব, ‘ওয়েট এন্ড সি’।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url