হাসিনা পতনের ফাঁস হওয়া গোপন নথিঃ যেভাবে মার্কিন ষড়যন্ত্রে পতন হয় শেখ হাসিনার
শেখ হাসিনা |
শেখ
হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে আমেরিকানরা কিভাবে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিলো সে নথিগুলো
বেশ আগেই বেরিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারবো আমরা।
আমেরিকার
ভিন্ন ধারার সংবাদপত্র ‘গ্রে-জোন’ জানিয়েছে, আমেরিকান সরকার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল
করতে কাদের কাদের ব্যবহার করেছে; সেরকম কিছু ফাঁস হওয়া নথিপত্র তাদের হাতে এসেছে।
ফাঁস হওয়া এই ডকুমেন্টগুলো থেকে জানা গেছে যে, হাসিনা
সরকা্রের পতন ঘটাতে আমেরিকা বাংলাদেশে বিশাল একদল অ্যাক্টিভিস্টকে ট্রেনিং দিয়েছে।
পত্রিকাটির ভাষায় "আর্মি অফ অ্যাক্টিভিস্ট" অর্থাৎ একটিভিষ্টদের একটি আর্মি
গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ। এই পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছে "ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক
ইনস্টিটিউট (সংক্ষেপেঃ আইআরআই)"। এটি আমেরিকান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি
সংস্থা।
এই সংগঠনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ
করার জন্য বারবার অভিযুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালে হাইতিতে ক্যু পরিচালনা করার
সরাসরি অভিযোগ আছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
২০০৪ সালের ‘হাইতি ক্যূ’ এর সাথে ২০২৪ সালে ‘বাংলাদেশে
ক্যু’ এর প্যাটার্ন মোটামুটি একই।
হাইতিতে প্রেসিডেন্ট আরিস্টিড এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয় ০৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে।
০৩ সপ্তাহের মধ্যে ২৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রেসিডেন্ট আরিস্টিড দেশ ত্যাগ করে সেন্ট্রাল
আফ্রিকান রিপাবলিকে চলে যান।
ঠিক একই প্যাটার্ন বাংলাদেশের বেলাতেও দেখা যায়। কোটা
আন্দোলন তুঙ্গে ওঠার মাত্র ০৩ সপ্তাহের মাথায় ০৫ আগস্টন ২০২৪ শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ
করে পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেন।
২০০৯ সালে ‘আইআরআই’ হন্ডুরাসে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য
ব্যাপক অর্থায়ন করে। হন্ডুরাসে নতুন করে সংবিধান লেখা হবে, নাকি পুরোনো সংবিধানকে
সংশোধন করা হবে- সেটা নিয়ে একটু বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়।
ব্যাপক গোলযোগের পর ফলাফল কি হয় জানেন? জ্বী, হন্ডুরাসের
প্রেসিডেন্ট ‘ম্যানুয়েল জেলায়া’র বাসভবনে হামলা করে ১০০ সৈনিক এবং প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়ালকে
একটি প্লেনে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় আরেক দেশ কোস্টারিকায়। প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল কোস্টারিকা নেমেই দাবি করেন, তাকে জোর করে দেশ
ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগ করেননি।
প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল এর এই বক্তব্যের সাথে সম্প্রতি
ঘটে যাওয়া শেখ হাসিনার ঘটনার মিল পাচ্ছেন? খুবই কাকতালীয় মিল সন্দেহ নাই। আর বাংলাদেশেও
সংবিধান বাতিল না সংশোধন হবে তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। আমেরিকান নাগরিক আলী রিয়াজকে
প্রধান করে একটি কমিটিও তৈরি করেছেন ডঃ ইউনুস। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।
এবার দৃষ্টিপাত করা যাক মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। ২০১১ সালের
১৫ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। তারা আইআরআই এবং আমেরিকার
আরো কয়েকটি সংস্থার দিকে আঙ্গুল তোলে এবং অভিযোগ করা হয় যে, এই গ্রুপগুলো মিশর এবং
তিউনিশিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশের শাসকদের বিরুদ্ধে কাজ করতে একটিভিস্টদের
ট্রেনিং দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ঘটনাও ঠিক একই রকম। মার্কিন সংবাদ পোর্টাল
‘গ্রে-জোন’ সারা বিশ্বে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পত্রিকাটি জানিয়েছে,
তাদের কাছে আমেরিকান সরকারের ফাঁস হয়ে যাওয়া কিছু নথি এসেছে। সেই নথি অনুযায়ী দেখা
যাচ্ছে, এই সংস্থাটি বাংলাদেশে প্রচুর এক্টিভিস্ট ট্রেনিং দিয়েছে। তারা সমাজের বিভিন্ন
গ্রুপের লোকজনকে সমন্বয় করেছে। এমনকি এই দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠী, এলজিবিটিকিউ (lesbian,
gay, bisexual, transgender and queer) জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তারা বেশকিছু সাংস্কৃতিক দল,
নাচের দল ইত্যাদি তৈরি করেছে। তারা বাংলাদেশের র্যাপ সঙ্গীত শিল্পীদেরকেও ট্রেনিং
দিয়েছে।
আইআরআই এই প্রজেক্টের অধীনে দেশের ৫টি বিভাগেই সফর করেছে।
তাদের রিপোর্টে আছে যে, তারা অনেকগুলি ইন্টারর্ভিউ করে ১৭০ জন এক্টিভিস্টকে চিহ্নিত
করতে পেরেছে, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে আইআরআইকে সহযোগিতা
করবে।
আমরা
হয়তো কোনোদিনই জানতে পারবো না, এই ১৭০ জন এক্টিভিস্ট আসলে কারা! রিপোর্টটিতে অনলাইন
একটিভিজমের উপরও আলাদাভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আইআরআই এই রিপোর্টটি যখন তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা পতনের
কোনো সম্ভাবনা দৃশ্যপটে ছিলো না। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে "মোর টাইম, রিসোর্স এন্ড
স্কিল নিডেড অন দিস প্রিলিমিনারী সাকসেস (More time, resource & skill needed
on this preliminary success)।" অর্থাৎ
যে প্রাথমিক সাফল্য তারা পেয়েছে তার বেনিফিট ঘরে তোলার জন্য তাদের আরো সময়, আরো দক্ষতা
এবং আরো রিসোর্স, মানে ফান্ড লাগবে - এমন আর
কি।
এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, তারা সেই সময়, দক্ষতা
এবং টাকা পয়সা পেয়েছিলেন। হয়তো আগামী কোনো ফাঁস হওয়া রিপোর্টে আমরা সেসব জানতে
পারবো- কোন কোন শিল্পী আইআরআই এর টাকায় গান করেছিলেন, নাটক করেছিলেন, ছবি এঁকেছিলেন।
আমরা জানি যে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় ইউটিউবার
আইআরআই-এর ফান্ড পেয়ে থাকেন বলে জনশ্রুতি আছে। আমরা কোনো একদিন হয়তো জানতে পারবো
তারা কারা?
আমরা
হয়তো জানতে পারবো আরো অনেক কিছু। কারণ, ম্যটিকুলাস প্ল্যানের অংশগুলো কোনো একদিন হয়তো উন্মোচিত
হবে। কিন্তু আমাদের যে শতশত যুবক, ছাত্র-জনতা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, যে হাজার হাজার
মানুষ আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন তারা কেউই এসব ম্যাটিকুলস প্ল্যানের অংশ ছিলো
না। তারা প্ররোচনায় প্রলুদ্ধ হয়ে দেশকে ভালোবেসে সাহসের সাথে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলো।
তাদের সেই দেশপ্রেম, তাদের এই আত্মত্যাগকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, ম্যাটিকুলাস পরিকল্পনা হয়,
আইআরআই এবং আরো কতো নাম না জানা সংগঠনের ফান্ড আসে, ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত
প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের!!
মূল
লেখাঃ আরিফ জেবতিক (আংশিক সম্পাদিত)