ঢাকাইয়া কুট্টি কারা?

 
প্রতীকী ছবি

ঢাকাইয়া কুট্টি কারা, কুট্টি ভাষার উদ্ভব কীভাবে হলো?

 

ঢাকাইয়া কুট্টি (পুরান ঢাকাইয়া নামেও পরিচিত) ভাষা হচ্ছে একটি বাংলা উপভাষা, যে উপভাষায় পুরান ঢাকার কুট্টি সম্প্রদায় কথা বলে। এই উপভাষার শব্দভান্ডারে সামান্য বৈচিত্র্য থাকলেও এই উপভাষাটি মূলত: প্রমিত বাংলার সাথে যথেষ্ট বোধগম্য। সোব্বাসীদেরকে আদি বা আসলি ঢাকাইয়া হিসেবে অনেক গবেষকই মতামত প্রদান করেছেন।

 

সোব্বাসীরাই যদি আদি ঢাকাইয়া হয়ে থাকে, তবে ঢাকাইয়া কুট্টি কারা? অনেকেই ঢাকাইয়া কুট্টিদের 'আদি ঢাকাইয়া' হিসেবে জানে। কুট্টি ও সোব্বাসী দুটোই যে পুরো পৃথক দুই জাতি, তা আনিস আহমেদ তার ঢাকাইয়া আসলি গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন।

কুট্টিদের নিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঞা তার ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান বইয়ে লিখেছেন, ১৮ শতকের মধ্যভাগ থেকে পূর্ববঙ্গে চাল একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য ছিল। চাল রপ্তানিকারকেরা ছিলেন মাড়োয়ারি ও মধ্য ভারতের মানুষ। তারা পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান সংগ্রহ করে সেগুলো ঢেঁকিতে ভানতেন এবং কুটতেন। এসব ধান কুটতে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে শ্রমিকেরা আসতো। শ্রমিক-ব্যবসায়ী ও দিল্লির সৈন্যদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে একটি ভাষার উদ্ভব ঘটে। সেটিই কালের পরিক্রমায় 'কুট্টি' হিসেবে পরিচিতি পায়।

 

হেকিম হাবিবুর রহমানের মতে, '১৭৭০ সালে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফরিদপুর থেকে কিছু লোক ঢাকায় এসে ভিড় জমায় ও বসতি স্থাপন করে। ঢাকা শহরের আমীর-কবীরগণ খাজনার পরিবর্তে প্রজাদের নিকট হতে যে ধান আদায় করতেন, এসব লোকেরা তা ঢেঁকিতে ভানত এবং এ আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ধান থেকে চাল-তুষ বার করাকে ধান কোটা বলা হয়। এজন্যই এ শ্রেণীর লোকদের 'কুট্টি' বলে অভিহিত করা হতো।

 

কুট্টিরা ঢাকায় এসেছে ১৭৭০ সালের পর। কুট্টি ভাষাকে অনেকে ঢাকার আদি ভাষা বলে মনে করেন বটে, কিন্তু কুট্টি ভাষা ঢাকার আদি ভাষা নয়। অর্থাৎ, ১৭৭০-এর পরে কুট্টি ভাষার আবির্ভাব। তবে ঢাকাইয়া ভাষা বলতে এখন মানুষ কুট্টি ভাষাকেই বোঝে। নাটক-সিনেমাতেও কুট্টি ভাষার ব্যবহার রয়েছে। এমনকি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো সাহিত্যিকদের রচনাতেও কুট্টি ভাষার উল্লেখ দেখা যায়।।

 

তথ্যসূত্র:

ক। ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান, মোশাররফ হোসেন ভূঞা।

খ। উইকিপিডিয়া।

গ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, রাফিয়া মাহমুদ প্রনিত।

 

সৌজন্যেঃ ঋষণা রূপকথা-The First Myth


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url