ড. মোহাম্মদ ইউনুস-এর দেশ ভাবনাঃ 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি' টাইপের

 
ছবিঃ আরটিভির সৌজন্যে

ড. মোহাম্মাদ ইউনুস কি সরকার প্রধান হিসেবে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (World Economic Forum - WEF)-এ যোগ দিতে গেছেন নাকি একজন ব্যবসায়ী হিসেব? সরকার বা রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে গেলে তার সাথে কিছু সরকারি কর্মকর্তা। ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এবং মিডিয়া কর্মী বা বড় মাপের কোনো সাংবাদিক থাকার কথা। কিন্তু ধরতে গেলে তিনি স্রেফ একা গিয়েছেন একটি বিশ্ব ফোরামে যোগ দিতে।

“ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (World Economic Forum - WEF)” একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যা প্রধানত বৈশ্বিক অর্থনীতি, ব্যবসা, পরিবেশ এবং সামাজিক সমস্যাগুলির উপর আলোচনা এবং সমাধান প্রস্তাব করার জন্য পরিচালিত হয়। এটির হেড কোয়ার্টার সুজারল্যান্ডে এবং এর বার্ষিক সম্মেলন (বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম) সাধারণত সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে যারা যোগ দিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্ব থাকতে পারেন যেমন:

(১)  দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ।

(২)  দেশের বড় বড় কোম্পানির সিইও, চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী।

(৩)  অর্থনীতি এবং অন্যান্য সামাজিক বিষয়াবলি নিয়ে গবেষণা করেন এমন বিশেষজ্ঞরা।

(৪)  বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, ইউএন এর প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার বা পরিবেশবাদী সংস্থা।

(৫)  নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং শিল্পে পরিবর্তন আনছেন এমন উদ্যোক্তারা।

(৬)  সংগঠক ও এনজিও প্রতিনিধি, যেমন; সমাজকল্যাণ, উন্নয়ন এবং পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রতিনিধিরা।

(৭)  মিডিয়া ও সাংবাদিক প্রতিনিধিরা, যাদের মাধ্যমে বিশ্বের ঘটনা এবং আলোচনাগুলো বৃহত্তর জনসাধারণের কাছে পৌঁছে।

এই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা একত্রিত হয়ে নানা বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে আলোচনা ও মতবিনিময় করে থাকেন।

"ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম" (WEF)-এর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, দাভোসে অনুষ্ঠিত চলমান "ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম" (WEF)-এর বছরের সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান যোগ দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ব্যবসায়ী নেতা, বিশেষজ্ঞ, এবং অন্যান্য প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি।

সাধারণত যখন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা বা সরকারী উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে (WEF) যোগ দেন, তাদের সাথে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বা শিল্পপতিদেরও নিয়ে যাওয়ার একটি প্রচলন রয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধানরা এই ফোরামে বৈশ্বিক অর্থনীতি, নিরাপত্তা, পরিবেশ, এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করতে আসেন। ব্যবসায়ী নেতারা তাদের দেশের অর্থনৈতিক নীতি এবং গ্লোবাল ব্যবসার উন্নয়নের জন্য আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলে রাষ্ট্রপ্রধান এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা একে অপরের সাথে সম্পর্ক তৈরি এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশ থেকে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বা মিডিয়ার লোক যাননি কেনো?

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের দেশের প্রতি যতটা না দায়, তার চেয়ে বেশি ভাবনা তার নিজস্ব ব্যবসার প্রসার নিয়ে। তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়েছেন। সরকারের কতৃত্ব হ্রাস করে পরিচালনা বোর্ডের কতৃত্ব নিরংকুশ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ৬৬৬ কোটি টাকা ট্যাক্স মওকুফ করিয়েছেন। আগামি ৫ বছরের জন্য ট্যাক্স অব্যাহতি দিয়েছেন।

সম্প্রতি ‘নিউ এজ’ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবিরের সাথে ড মোহাম্মদ ইউনুস যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাতে দেশ এবং সরকার নিয়ে তার কোনো এম্বিশন আছে বলে মনে হয়নি। মনে হয়েছে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কিংবা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ টাইপ দায়সারা মনোভাব। 

ভাবে মনে হয় তিনি যে উদ্দেশ্যে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন যে কোনো সময় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেটা দেশে বসেই দেন কিংবা বিদেশে বসে।




Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url