গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা দখল
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মনোগ্রাম। গুগল থেকে নেয়া |
সরকারি
ক্ষমতার অপব্যাবহার করে দখল করা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা। পরিচালনা পর্ষদেও
আসছে বড় পরিবর্তন।
স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পর নানা ধরণের ফন্দি ফিকির করে জনগণের আস্থা অর্জনের
চেষ্টা করেন। নিজেকে পরিচয় দিতে থাকেন ‘বঙ্গবন্ধু’র আদলে “পল্লীবন্ধু” হিসেবে। এই সুযোগটা
কাজে লাগান মাইক্রো ক্রেডিটের সফল উদ্যোক্তা ঝানু অর্থনীতিবিদ ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস। নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাঙ্কে
সরকারি আর্থিক সহায়তা বাগিয়ে নিয়ে ব্যাঙ্কের ফান্ড তৈরি করেন। সরকার হয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের
৬৫ শতাংশের মালিক।
পরবর্তীতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের
কাঠামোয় পরিবর্তন আনেন ড: ইউনুস। ব্যাঙ্কের ঋণ গ্রহিতা, যারা চড়া সূদে ঋণ গ্রহণ করেন
তাদেরকে বানান ব্যাঙ্কের তথাকথিত মালিক। সরকারি মালিকানা কমতে কমতে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে।
যৌথভাবে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাঙ্ক বিশ্বের
সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল জয় করেন। নোবেলজয়ী এই ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ
ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে
সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা
হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় এ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। ওই অধ্যাদেশে
২০১৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সরকার-নিযুক্ত পরিচালকের সংখ্যা
৩ জন থেকে কমিয়ে ১ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতাও
সরকারের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে পরিচালনা পর্ষদের হাতে ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে।
অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে,
সরকারের পরিবর্তে ১২ সদস্যের বোর্ড গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে। এতে
প্রতিষ্ঠানটির স্বায়ত্তশাসন সুদৃঢ় হবে বলে বলছেন তারা।
এর আগে
অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েই ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আওতাধীন গ্রামীণ
কল্যাণের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি করা ৬৬৬ কোটি টাকা দেয়ার আদালতের
রায় স্বপ্রণোদিতভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আরো একধাপ এগিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে আগামি ৫ বছর, অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য গ্রামীণ
ব্যাংকের অর্জিত সব আয়কে আয়কর প্রদান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এ সবই করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে। অন্তর্বর্তীকালীন
সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার অধিকার একমাত্র রাষ্ট্রপতির এবং রাষ্ট্রপতির নামেই তা করা
হয়ে থাকে। কিন্তু সময়ে সময়ে যেসব প্রাজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন
নেয়া হয় কিনা তা নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে।
নতুন
এই উদ্যোগের ফলে গ্রামীণ ব্যাংকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়বে ও প্রতিষ্ঠানটির
কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ কমবে বলে বলা হলেও ঋণ গ্রহিতারা যে হয়রানীর স্বীকার হয়,
যা এতোকাল দেখে আসছি তাতে এটা একটা ফাঁকা বুলি বলেই মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে ২০১১ সালে গ্রামীণ
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার অবসরের বয়স পেরিয়ে
গেছে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল আওয়ামী সরকার।
ড: মোহাম্মদ ইউনুস |