জীবনযোদ্ধার রোজনামচা-নাসির খান

 

জীবনযোদ্ধার রোজনামচায় আজকের লেখা একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক, নাট্যকার ও গীতিকার নাসির খান-এর।

 

নাসির খান

“প্রথমে একটা অতি ছোটো ঘটনা বলি।

গতকাল বাসে বাসায় ফিরছিলাম। দুটি ছেলে উঠলো একটা ভার্সিটির সামনে থেকে। কাঁধে ব্যাগ দেখেই বুঝলাম ওরা এই ভার্সিটির ছাত্র।

ওরা আমার পেছনে দাঁড়ালো।

আমার কানে এয়ারফোন।

আমার কাঁধে একটা টোকা লাগলো। ভাবলাম পেছনে দাঁড়িয়েছে, তাই টাচ লেগেছে। আবার টোকা লাগলো।

তাকালাম।

সে বাজে টোনে আমাকে বলে, "ওদিকে চেপে বসতে বললাম না?"

সে আমার থেকে ১০ বছরের ছোটো হবে।

বলার ভঙ্গিটা এত অভদ্রের মতো কী বলবো।

আমি উত্তর দিলাম, "স্যরি। আমি জানালার পাশে বসি না। আপনি বসুন।"

সে উত্তর দিলো না।

আমাকে নিয়ে দুজন হাসাহাসি করতে লাগলো। আমি পাত্তা দিলাম না।

এই জেঞ্জি জেনারেশনে আমি ভদ্র ছেলেপেলে পেয়েছি। সেটা খুব কম।

বেশিরভাগই দেখি উচ্ছৃঙ্খল।

এরা মেধাবী নিঃসন্দেহে। কিন্তু এদের চলাফেরা, কথাবার্তা, মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতা, ভদ্রতা লেভেল প্রশ্ন তোলার মতো।

আক্ষেপের ব্যাপার হলো দেশটাকে এমন বিশৃঙ্খল করে দিয়েছে এই জেঞ্জি জেনারেশন।

যাইহোক ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিহত করার জন্য জেঞ্জি আর লালমারানিদের যে আস্ফালন দেখলাম, তাতে আমি বিরক্তই হয়েছিলাম।

কারণ আমি কোটা আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও হাসিনা হটাও আন্দোলনে বিপক্ষে ছিলাম। এর একটাই কারণ।

তা হলো, ফ্যাসিস্টের পতন হোক, এটা আমি চাইলেও ফ্যাসিস্টের পতন হওয়ার পর যারা ক্ষমতা নেবে, তাদের নিয়ে আমি আতঙ্কিত ছিলাম।

এরও কারণ আছে।

দীর্ঘদিনের অবজারভেশনে আমি দেখেছি এদেশে আধুনিক চিন্তার জন্য স্পেশালি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে হাসিনার বিকল্প আমি দেখি নাই কাউকে।

আমি ১০০০% মানি হাসিনা সরকার দুর্নীতির শীর্ষে, হাসিনা সরকার ফ্যাসিস্ট, হাসিনা সরকার ক্ষমতার অপব্যবহারে লিমিট ছাড়িয়েছিলো।

এজন্য আমি চেয়েছিলাম হাসিনা সরকারের সংস্কার হোক৷ পতন চাই নাই ওই একটা কারণেই।

দেশে মৌলবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার উত্থান হবে তাই।

তাই হয়েছে।

শুধু তাই হয় নাই৷ সব দিক দিয়েই অবনতি হয়েছে দেশের৷ ইভেন এই সরকারও অল্পদিনেই প্রমাণ দিয়েছে তারাও ফ্যাসিস্ট।

আদিবাসী ছেলেমেয়েদের চাওয়া থাকতে পারে। ওরা চাওয়া নিয়ে পথে নেমেছে৷ সেখানে জেঞ্জি ও মৌলবাদিরা যেভাবে হামলা করলো, তা নিশ্চিত ফ্যাসিবাদের প্রমাণ।

ইনুচ সাব মজা পাচ্ছে হয়তো। স্বাভাবিক।

উনাকে আমার একমাত্র ক্ষোভ ঝাড়া পাবলিক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে।

তাছাড়া তার মুখেই যখন শুনলাম পুরো প্লানটা তাদের আগের থেকেই করা, এরপর তো আর কথাই থাকে না।

ছাত্র আন্দোলনে একটা মেয়ের ছবি ভাইরাল হলো। দেখে আমারও খারাপ লেগেছিলো।

লালমারানিদের সাথে আমার এই অনুভূতিটা মিলে গিয়েছিলো।

অথচ আদিবাসী মেয়েদের উপর গতকাল যা হলো, তা নিয়ে সেই লালমারানিদের তেমন আক্ষেপ আমার ওয়ালে ভেসে আসলো না।

মানে হলো, হয়তো তাদের কাছে এখন সব ঠিকঠাক লাগছে। অথবা ওরা নির্লজ্জের মতো লজ্জায় একথা বলতে পারছে না।

নির্লজ্জদেরও যে লজ্জা আছে, এটা ভেবেও কেমন বমি পাচ্ছে।

এই আন্দোলন হয়েছিলো শুধুমাত্র হাসিনাকে মুছে দিতে নয়, ৭১ কেও মুছে দিতে।

এটাও অনেকরকম করে প্রমাণ হয়ে গেছে।

শুধু ভাবছি এইসব ট্যালা জেঞ্জিরা এত সাহস কোথায় পাচ্ছে, কে দিচ্ছে!

বিএনপি ক্ষমতায় এলেও তো এমন হতো না বাংলাদেশে।

আর দুদিনের বৈরাগী এসে সাধের লাউরে এভাবে ভেঙে ফেলছে!

অদ্ভুত বটে।

লালমারানি যারা এখনও কথা বলছে, তাদের কাছে আমি আমার ভাষার জন্য ক্ষমা চাইছি। তাদের প্রতি সম্মান।

আসলেই তারা দেশের সংস্কার চেয়েছে নিরপেক্ষভাবে।

আর যারা চুপ, তারা যে অবশ্যই দলীয় ক্ষোভ মিটাতে সাধু সেজেছিলো, সেটাও ক্লিয়ার।

সবকিছুর শেষ আছে।

সব ক্রিয়ারই নাকি প্রতিক্রিয়া আছে।

আমরা যারা সত্য ও ন্যায়ের কথা বললেই আওয়ামীলীগ ট্যাগ খাই, তারা অপেক্ষায় আছি শেষ দেখার জন্য।

"সেদিন আর কত দূরে

যখন প্রাণের সৌরভে

সবার গৌরবে ভরে রবে

এ দেশ ধনধান্যে

শিক্ষায় জ্ঞানে মান্যে

আনন্দেরই গানে গানে সুরে।"

©Nasir Khan

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url