পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক বদল: একটি পর্যালোচনা
ছবি সংগৃহীত |
একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক বদলের প্রক্রিয়া মূলত বাহিনীগুলোর কার্যক্রম, শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে চেষ্টা করে। পোশাক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের একাধিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ওঠেন। এছাড়া, বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিভাজন কমানো এবং জনসাধারণের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতা ও আস্থার সৃষ্টি করাও এর মূল উদ্দেশ্য হতে পারে।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা বুঝি তার আলোকে
পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বহিনীর পোশাক নির্ধারিত হয় সাধারণতঃ সেদেশের ভূমি অর্থাৎ মাটির রঙ, প্রাকৃতিক
পরিবেশ ও পরিপার্শিক অবস্থা বিবেচনায়। একটি দেশের কোনো বাহিনীর পোশাক যেন পার্শবর্তী
দেশের কোনো বাহিনীর পোশাকের সাথে মিলে না যায় সেদিকটাও বিবেচনায় নেয়া হয়। আভ্যন্তরিন
নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাকের রঙ নির্বাচনের সময় বাহিনীর কার্যক্রম, মেজাজ, ক্ষিপ্রতা
ইত্যাদি বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হয়।
বাংলাদেশে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর নতুন যে পোশাক নির্বাচন করা হয়েছে তার যদি আলাদা আলাদা বিশ্লেষণ করিঃ
পুলিশ
পুলিশের পোশাকের রঙ আমার দৃষ্টিতে খুব চিত্তাকর্ষক ও দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।
পুলিশের পোশাকের রঙের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নাই। তবে সমস্যা হলো যে, পার্শবর্তী দেশ
মিয়ানমারের পুলিশের পোশাকের রঙের সাথে প্রায় মিলে যায়। এতে সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বে
নিয়োজিত পুলিশ বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে। তবে মজার ব্যাপার হলো, মিয়ানমার আমাদের পার্শবর্তী
দেশ থাকবে নাকি অন্য নামে কোনো নতুন দেশ আত্মপ্রকাশ করবে তা দেখার বিষয়। কারণ, বাংলাদেশের
দুটি প্রতিবেশি দেশের মধ্যে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে সীমান্ত রয়েছে সে সীমান্ত
রাজ্যের পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির দখলে এবং খুব শীঘ্রই একটা নতুন দেশের আত্মপ্রকাশের
সম্ভাবনা পরিস্কার হতে চলেছ।
কিন্তু কথা হলো, পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করলে কি তাদের পেশাদারিত্বে কোনো প্রভাব ফেলবে? পুলিশ বাহিনীতে যা প্রয়োজন তা হলো তাদের প্রশিক্ষনের আধুনিকায়ন ও মান উন্নয়ন। যতোদূর জানি, পুলিশ বাহিনীতে করনিক পেশায় কোনো আলাদা লোক নাই। ভালো পড়ালেখা জানা একজন কন্সটেবল বা এএসআই দ্বারা সে কাজটি করা হয়। তাদের ডাকা হয় মুন্সী! এছাড়াও আছে মান্ধাতা আমলের কিছু শব্দের ব্যবহার। এগুলো পরিবর্তন করে এবং ধারাবাহিক থিউরিটিক্যাল প্রশিক্ষনের মাধ্যমে পেশাদারিত্বের উন্নতি ও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। শুধু প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে বেসিক প্রশিক্ষন নিয়ে বের হয়েই শেষ না, প্রশিক্ষন চলমান রাখতে হবে। জানিনা এটা করা হয় কিনা। হয়ে থাকলে তার বাহ্যিক প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় না।
দায়িত্ব পালনে নিয়ম বিধি কি আছে জানিনা। তবে এমন নিয়ম থাকা প্রয়োজন, যাতে উর্ধতন কর্মকর্তা বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানরা আইন বিরোধী বা আইন বহির্ভূত নির্দেশ (Unlawful order) দিলে তা মানতে বাধ্য থাকবে না এবং তাতে তাদের চাকরির কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কি কি বিষয় 'আন-ল’ফুল অর্ডার' হিসেবে গন্য হবে তা লিখিত আকারে থাকতে হবে। নিম্নপর্যায় থেকে উর্ধতন পর্যন্ত ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত রাখতে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে, সেইসাথে পুলিশের বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদী যাতে সামাজিক জীবনযাপন সহজ হয় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
র্যাব
র্যাবের পোশাকের রঙ নির্বাচন একদম সঠিক হয় নাই। র্যাব আগে পড়তো কালো পোশাক। কালো পোশাকের একটি লজিক্যাল ব্যাখ্যা হলো, কালো পোশাক পড়লে সে মানসিকভাবে ক্ষিপ্রতাপ্রাপ্ত হয়। র্যাবকে গঠনই করা হয়েছে ক্ষিপ্রগতিতে কোনো অপারেশনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সেজন্যেই এই বাহিনীটার প্রথমে নাম দেয়া হয়েছিলো RAT (Rapid Action Team), পরে তা পাল্টে করা হয় RAB (Rapid Action Battalion)। অর্থাৎ দ্রুত বা ক্ষিপ্রগতিতে যেন অপরাধ দমন করতে পারে। বাংলাদেশ যেভাবে জঙ্গিতে ভরে যাচ্ছে, সেক্ষত্রে ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন ছাড়া অপরাধ দমন সম্ভব না। তাই আমার কাছে মনেহয়, নতুন যে পোশাক র্যাবকে দেয়া হচ্ছে তা র্যাবকে ‘ক্যাট’-এ পরিণত করা হবে!
তবে আমি মনে করি, এই জগাখিচুরী মার্কা বাহিনী না রেখে সরাসরি নিয়োগকৃত
সদস্য দ্বারা র্যাবকে ‘আধা সামরিক বাহিনী’ রূপে গঠন করা
উচিৎ,- যার কমান্ডে থাকবে সেনাবাহিনী থেকে স্বল্পকালিন মেয়াদে ডিপুটেশনে নিয়োগকৃত
অফিসার, জেসিও, এনসিও। পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত দ্বারা পূরণ করে সেনাবাহিনীর
জেসিও, এনসিও পর্যায়ক্রমে বাহিনীতে ফিরে যাবে। শুধু কমিশন্ড অফিসার থাকবে। ডিপুটেশনে নিয়োগকৃত সেনাবাহিনীর
সদস্যদের মেয়াদ ৬ মাস থেকে ১ বছরের বেশি হবে
না। শুধু ব্যাটালিয়ন কমান্ড থেকে উপর কমান্ডের পদ্গুলো সর্বোচ্চ ২ বছর হতে পারে।
আনসার
আনসারের পোশাকের রঙ আপাতদৃষ্টিতে দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। তবে যতোদূর জানি, আনসার বাহিনী যুদ্ধকালিন সময়ে সেনাবাহিনীর অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে কাজ করে। সেই কারণেই হয়তো আনসারের পোশাক সেনাবাহিনীর সাথে কিছুটা মিল রেখে ‘কমব্যাট (Combat)' ড্রেস নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এটা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লো কেনো তা বোধগম্য নয়।
সর্বোপরী এই পোশাক পরিবর্তনের পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা জানিনা। তবে কিছুটা
ব্যবসায়িক সুবিধা অর্জন করা যাবে। এছাড়া আর কোনো উপকারে আসবে বলে আমার কাছে মনে হয় নাই। বাকিটা সামরিক বিশেষজ্ঞরা
বলতে পারবেন।
পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের পোশাক
![]() |
ছবিঃ গুগল থেকে সংগৃহীত |