তথাকথিত লোকদেখানো ধার্মিক হওয়ার চেয়ে আগে একটু মানুষ হন-নাসির খান
জীবন যোদ্ধার রোজনামচায় আজকের লেখক প্রতিষ্ঠিত লেখক-নাট্যকার-গীতিকার নাসির খান।
=============================
নাসির খান |
২২ জানুয়ারি ২০২৪
গতকালের
ঘটনা। বাসে বাসায় ফিরছি। আমার পাশে একটা বয়স্ক লোক। শিক্ষিত বোঝা যায়। মুখে দাঁড়ি।
তার
হাতে একটা কার্ড। কার্ডের অপরপাশে কী যেন লেখা অনেক।
ভাড়া
তুলতে এলো একটা ছেলে। বৃদ্ধ লোকটা গোপন কথা বলছে, এমন ভঙ্গিতে মাথা এগিয়ে আস্তে
আস্তে বললো,
"কত
দিতে হবে?"
"কই
থেকে উঠছেন? কই যাবেন?"
"রামপুরা
থেকে কাউলা।"
"২০
টাকা দেন।"
লোকটা
লাজুক হাসি হেসে মানিব্যাগ বের করলো। ছেলেটা ততক্ষণে অন্যজনের কাছে টাকা তুলছে।
বৃদ্ধ লোকটাকে দেখছে না। আমি বৃদ্ধ লোকটার মানিব্যাগ ঘাটা দেখছি আঁড়চোখে৷
মানিব্যাগে ৫০০ টাকার নোট, ৫০ টাকার নোট, আরো কিছু টাকা।
লোকটা
১০ টাকার একটা নোট বের করে ভাড়া এগিয়ে দিলো।
ভাড়া
তোলা ছেলেটা প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে আছে।
লোকটা
বললো, "রাখেন। আর নাই।"
ছেলেটা
তবু দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটা
আমি যেন না দেখতে পাই এমনভাবে হাতে রাখা কার্ডটা ছেলেটাকে দেখাচ্ছে।
আমি
তবু দেখলাম সেখানে লেখা-
পবিত্র
আয়াত
তার
নিচে আরবি ও বাঙলায় কীসব লেখা।
আরবি
লেখা দেখেই বোধহয় ছেলেটা কথা বাড়ালো না। চলে গেলো।
আমি
ভাবছিলাম, ধার্মিক সেজে বসে থাকা লোকটার কথা৷ টাকা থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা বললো। কম
ভাড়া দিলো। আবার বাঁচার জন্য আরবি লেখা দেখালো। কী অদ্ভুত!
আর
আরবি লেখা দেখে ছেলেটাও গলে গেলো।
বাংলাদেশের
ভিক্ষুক ও ভন্ডবেশিরা এমনই।
তাদের
মূল হাতিয়ার হলো আল্লাহ।
আল্লাহর
নাম নিয়ে নিয়ে দিনের পর দিন তারা সাধারণ জনগণের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছে।
ভিক্ষুকরা
বেশিরভাগই থাকে নোংরা। ময়লার মধ্যে বসে থাকে। আর মুখে কালেমা, সূরা, জিকির করতে
থাকে।
নামাজ
পড়ে কিনা সন্দেহ।
এই
আল্লাহ আল্লাহ করার কারণে সাধারণ জনগণ গলে ভর্তা হয়ে যায়। ফকাত করে হাত মানিব্যাগে
চলে যায়। দিয়ে দেয় টাকা৷ আর আল্লাহ বিক্রি করে পকেট গরম হয় ভিক্ষুকদের।
ভাবে,
"আহা দান করলাম। সওয়াব পাইলাম৷ জান্নাত পামুনে।"
ভাই,
একটু ধীরে জান্নাতে যান প্লিজ।
অপাত্রে
দান করবেন না। যারা আল্লাহকে বিক্রি করে টাকা কামাচ্ছে, তাদেরকে দান করবেন না।
আল্লাহ
বিক্রি হওয়ার জিনিস না। আল্লাহ হলো অনুভবের। ইমানের।
আল্লাহকে
ব্যবহার করে কেউ ভণ্ডামি করছে আর আপনি সেই ভণ্ডামিকে উৎসাহ দিচ্ছেন ইমোশনাল হয়ে।
এতটা মূর্খ আপনি কেন হবেন!
এদেশের
ওয়াজেনরাও এমন। আল্লাহ, নবি, হাদিস, কোরআন বিক্রি করে সাধারণ জনগণকে ধর্মীয়ভাবে
ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তারা দিনকে দিন আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে৷ সাধারণ জনগণ
বুঝতেও পারছে না।
মানুষ
কোরআন, হাদিস জেনে-পড়েই এখন লাইনে আসে না।
আর
ওয়াজেনদের নাকি সুরের চিল্লাফাল্লা শুনে লাইনে আসবে?
লাইনে
আসে না তো। দেখি না তো।
মানবিকভাবে
মানুষ না হলে সকল অন্যায়, অপরাধ থেকে দূরে না থাকলে ওয়াজ শুনে কী লাভ!
ওয়াজ
হয়ে গেছে শিক্ষায় অনগ্রসর ও গ্রামের সাধারণ মানুষদের একটা ধর্মীয় বিনোদনের জায়গা
মাত্র। কোনো লাভ হয় না।
চাঁদা
তুলে চটের ছালায় বসে সারারাত মাইকের তীব্র আওয়াজে ওয়াজ শুনবে৷ ওয়াজেন চটুল স্বরে
কমেডি করবে মাঝে মাঝে, শ্রোতারা মজা পাবে।
তারপর
একটু হুক্কু হুক্কু টাইপ বিশ্রী আওয়াজে জিকির করবে। ওয়াজের ময়দানে সৃষ্ট হওয়া
বৈশাখী মেলায় ঘোরাঘুরি করবে। তবারক নিয়ে বাসায় এসে ঘুমিয়ে যাবে।
ফযরটা
পড়বে কিনা কে জানে।
ঘুমাবে
আর স্বপ্ন দেখবে, আহা আল্লাহ এই তো খাতায় সওয়াব লিখলো। এই তো জান্নাতের দরজা দেখা
যাচ্ছে।
এতো
সোজা না মনি।
আপনি
মিথ্যা বইলেন না। মানুষকে ক্ষতি কইরেন না। ঘুষ খায়েন না। দিয়েন না। প্রতারণা,
ভণ্ডামি কইরেন না। অন্যের ক্ষতি কইরেন না। মানুষের পাশে থাইকেন।
ওয়াজ
শোনার থেকে বেশি সওয়াব পাবেন।
জান্নাত
ওয়াজের মাঠের চেয়ে আরো কাছে চলে আসবে।
সবসময়
বলি।
তথাকথিত
লোকদেখানো ধার্মিক হওয়ার চেয়ে আগে একটু মানুষ হন।
সব পাবেন।"
©Nasir Khan