অবাক হলেও সত্য
ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস |
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড: মুহাম্মদ ইউনূস ০২ জানুয়ারি ২০২৪ আসছেন আমার বাড়ির পাশে শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার চরে। ভাবছি হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে কি দিয়ে আপ্যায়ন করবো! আগের দিনের পদ্মার ইলিশ নাই।
এ প্রসঙ্গে একটা স্মৃতি উল্লেখ করতেই হয়। যদিও বিষয়টি ইতোপূর্বে অনেকবার লিখেছি। আজও প্রাসঙ্গিক হওয়ায় পুনরায় লিখছি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাড়ির কাছ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা প্রবল খরস্রোতা। প্রতিদিন অনবরত লাশ ভেসে যেতো। ইলিশ মাছের নাকি মরা মানুষের তেল খুব পছন্দ। সেই কারণে হয়তো সাগর থেকে প্রচুর ইলিশ মানুষের তেল খেতে খেতে উজানে চলে আসতো। আমার বাড়ির কাছেই প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়তো।
তখন কলেরা রোগের প্রকোপ মারাত্মক। এক বাড়িতে কারো হলে সে বাড়ি পরিষ্কার! অর্থাৎ সব সদস্যের অকস্মাৎ মৃত্যু! একদিকে মারছে পাকিস্তানি মিলিটারিরা, অপরদিকে কলেরা মহামারী।
তখনকার দিনে যেটা মহামরি বলছি এখন সে রোগ নেই বললেই চলে। থাকলেও তা অতি সাধারণ একটি রোগ। এই সামান্য রোগের প্রতিষেধকও ছিলো না এদেশে।
১৮৮৫ সালে কলেরা রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য তার বরাদ্দ ছিলো না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নানা মহামারী রোগের প্রতিষেধক পেতে থাকে এ দেশের নাগরিকরা, যা বর্তমানে খুব যত্নে শিশুদেরকে দেয়া হয়।
যে কথা বলছিলাম।
১৯৭১ সালের মতো এতো ইলিশ মাছ আর আমি কখনও দেখিনি। নদীর ঘাটে, হাটে বাজারে শুধু ইলিশ আর ইলিশ। টাকায় এককেজি ওজনের চারটি ইলিশ পাওয়া যেতো। স্বাদেও অনন্য। অনেকেই কলেরার ভয়ে খেতো না। অনেকে আবার একহালি কিনে নিয়ে দেখাতে দেখাতে বাড়ি যেতো। রাস্তায় কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হলে বলতো, "কেউ না খাক, তনু কাজী(কাল্পনিক নাম) খেয়েই মরবে"!
তো সেই পদ্মা শুকিয়ে চর জাগতে জাগতে এখন এপাশের পদ্মা একদম শুকনো। চরের অপর পাশে পাবনার পাশ দিয়ে পদ্মা বয়ে গেলেও সে সময়ের মতো খরস্রোতা না। সেখানেই একটি সেনানিবাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় পূর্ববর্তী সরকার।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, তখনকার যশোর এরিয়া কমান্ডার বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মতিউর রহমান এর বাড়ি এই অঞ্চলে, অর্থাৎ কালুখালী উপজেলায়। তিনিই এই জায়গাটি সেনানিবাসের জন্য পছন্দ করেন। জায়গাটিতে সেনানিবাস নির্মাণের জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসে উদ্বোধনও করেন। তবে পরে আর তেমন কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
আমি জানিনা, তবে ধারণা করি; সেনাবাহিনীর বড় ধরনের প্রশিক্ষণ তথা যৌথবাহিনীর রণকৌশল অনুশীলনের কাজে ব্যবহারের জন্যই হয়তো এই পদ্মার চরে সেনানিবাস নির্মাণ। আসল উদ্দেশ্য সরকারের নীতি নির্ধারকরা জানেন।
এমনই একটি রণকৌশল অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করতে ০২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে ড: মুহাম্মদ ইউনূস আসছেন রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় প্রস্তাবিত রাজবাড়ী সেনানিবাসে।
সেনানিবাসটি আমার গ্রামের বাড়ির একদম সন্নিকটে।