বৃটিশদের দেয়া প্রেস্ক্রিপশনেই চলছে ধর্ম ও রাজনীতি
প্রতীকী ছবি |
ধর্ম হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ‘প্যারাসিটামল’ তথা সর্বরোগনাশক ঔষধ। এই বিষয়টি ব্রিটিশরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলো। ১৭৮০ সালে ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্ণর হেস্টিংসের মাধ্যমে ব্রিটিশরা কলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার লাভ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় মাদ্রাসাটি ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বৃটিশরা তথা খৃষ্টানরা ছিলেন মাদ্রাসা্র পরিচালনার দায়িত্বে। ১৭৮১ সাল থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয় একটি বোর্ডের মাধ্যমে, যার প্রধান অর্থাৎ সেক্রেটারি থাকতেন একজন খৃষ্টান এবং তার সহকারী অর্থাৎ এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থাকতেন মুসলিম। ১৮৫০ সালে প্রিন্সিপ্যাল পদ সৃষ্টি হলে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত মোট ২৬ জন প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী।
এবার চোখ বন্ধ করে একটু সুক্ষ্মভাবে চিন্তা করে দেখুন, ব্রিটেনে আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত না করে ভারতের কলকাতায় কেন আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইংরেজরা? আর মাদ্রাসা হলো আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদ এখনো কেনো প্রিন্সিপ্যাল। অর্থাৎ আমরা কোরআন হাদিসের আলোকে নিজেরা এখনো কিছু করতে পারিনি। বৃটিশদের দেয়া প্রেস্ক্রিপশনই সর্বরোগের মহৌষধ ভেবে সেবন করে চলেছি।
ভারত
উপমহাদেশের মানুষ, কি হিন্দু কি মুসলমান- ধর্মকে ‘নাপা এক্সট্রা’ ভেবে রোজ
তিনবেলা গুলিয়ে খায়। ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশের মানুষের এই রোগটি ধরতে পেরেছিলেন।
জিন্নাহ ছিলেন পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। তিনি কোন ধর্মকর্ম পালন করতেন না।
তিনি মদও খেতেন আবার শুয়োরের মাংসও খেতেন। অপরদিকে গান্ধী ছিলেন গীতা ভক্ত। গান্ধী
ও জিন্নাহ দুজনেই লন্ডন থেকে ভারতের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। জিন্নাহ নিজে
ভারতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন ১৫ বছর।
জিন্নাহ
রাজনীতিতে একদিনের জন্যও জেল না খেটে নেতা হয়ে গেলেন। মুলত তার এই রাজনীতির
সুযোগের পেছনে ছিলো গান্ধী ও নেহেরুর ভুল রাজনীতি। জিন্নাহ ছিলেন ধূর্ত প্রকৃতির
মানুষ। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের মানুষের তিন বেলা ধর্ম খাওয়ার কথা জানতেন। তাই তারা
গান্ধীকে ধুতি পরিয়ে আর জিন্নাহকে কোট টাই পরিয়ে এই উপমহাদেশের মানুষের সামনে
দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা নিয়ে আসেন, যা বের হয় ১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলিম লীগের
কাউন্সিলে।
হিন্দু
ও মুসলিম দুটি দেশ ভাগ করার সুনিপুণ কারিগর হচ্ছে ব্রিটিশ। তাঁরা ক্ষেত্র প্রস্তুত
করে দিয়েছেন, আর হিন্দু ও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে লড়েছে। যতদিন মানুষের মগজে
ধর্ম নামক উগ্র ভাইরাস থাকবে ততদিন ওরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়বে।
১৯৯০
সালে বছরে একবার যে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হতো এখন তা বাংলাদেশে দৈনিক হয়। আগে
শীতকালে ওয়াজ মাহফিল হতো । এখন গরমকালেও মানুষের মাথার তার মাঝে মাঝে ছিঁড়ে
যায়।
আমরা
যখন ব্রিটিশদের গোলামী করছিলাম তখন ব্রিটিশরা খুব সুক্ষ্মভাবে আমাদের মুসলমানদের
বিভিন্নভাবে বিভক্ত করার এই কাজটা খুব কৌশলে করে যায়। ১৯০৬ সালে ‘ইব্রাহিম আলী
তশনা’ নামে এক ব্যাক্তি এই উপমহাদেশে ওয়াজের প্রচলন করেন। এর আগ পর্যন্ত এই
উপমহাদেশে কোন ওয়াজ মাহফিলের প্রচলন ছিলোনা। ১৮৬৬ সালে ব্রিটিশরা যখন আমাদের শাসন
করছে তখন মাওলানা মোহাম্মদ কাশেম নানুতুবি ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারাণপুর জেলার
দেওবন্ধ নামক স্থানে কাওমী মাদ্রাসা স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে এই মাদ্রাসা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়।
ইব্রাহিম
আলী তশনা ভারতীয় দেওবন্দ মাদ্রাসায় নয় বছর অধ্যায়ন শেষে বাংলাদেশে এসে ওয়াজ
মাহফিল শুরু করে দেন। একটি সময় মুসলমানরা যা ইসলাম প্রচারের জন্য আয়োজন করতো, এখন
সেই ওয়াজ মাহফিল হয়ে গেছে এক একটা রাজনৈতিক ময়দান এবং চটুল বিনোদনের ক্ষেত্র। বক্তারা
এখন সেখানে রাশ্মিকা মান্দানা, আঞ্জেলিনা জোলি, সানি লিওন নিয়েও মাঝে মাঝে গবেষণা
করেন। গানও করেন। হিন্দি ভালোবাসার গান দিয়ে নবীর ভালোবাসার ভক্তিগান বানান। ভাবে
শ্রোতারা তো সব গর্ধভ, ধরতে পারবে না। ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিলো কোন জাতিকে কোন
ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে এবং তারা সফল।
বাংলাদেশে
এখন ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা, কওমী শিক্ষা, আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা
এইভাবে করতে করতে ধর্মের মত শিক্ষাটাও আজ একটা ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশরা
আমাদের জুতা পরা শিখিয়েছে। আমরা জনগণকে টুপি পরা শিখিয়েছি। আর একদল লোক জিন্দা
অলি হয়ে মানুষের মগজ নিয়ে খেলছে। একটা গবেট তথা অকাট্য মূর্খ জাতি তৈরি করছি
আমরা প্রতিদিন।
আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য তরুণও এখন প্যারাডক্স ডগ হয়ে ঘেউ ঘেউ করে। পিপিলিকার
পাখা দিয়ে সূর্যদর্শন করতে চায়। আর স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়ে আমাদের জ্ঞান
বিতরণ করতে থাকে। আমাদের ধ্বংসের সিঁড়িগুলো এইভাবেই আমরা এক এক করে তৈরি করেছি।
প্রতিটি
বইয়ের বাংলা অনুবাদ পাওয়া গেলেও আমরা বইয়ের ভেতর রস কষ খুঁজতে গিয়ে একদল মাইক
প্রজন্ম তৈরি করে দিয়েছি। এরা নিজেদের সর্বজ্ঞানী ভাবে। পৃথিবীর আর কোন জ্ঞান
তাদের দরকার নাই। মাইক পেলে তারা বাদশা বনে যায়। যেন তারাই সর্বেসর্বা। বাবার বয়সী
লোকদেরকেও অপমান করতে দ্বিধা করে না। সেখানে ধর্মের বাণী কাজ করে না।
সত্য
সবসময় সুন্দর
আলো
আসবেই
মূল
লেখাঃ লুসিড ড্রিম(শুভ)
(আংশিক সংযোজিত ও সম্পাদিত)