মুলার ঔষধি গুন


"নিয়মিত মুলা খান, মুলার মতো সতেজ হন"


মুলার নাম শুনলে অনেকে নাক শিটকায়। গন্ধের কারণে মুলা কারও কারও কাছে অপছন্দের। আবার কারও কারও কাছে এটি অনেক পছন্দের সবজি। অনেকে কাঁচা খেতে ভালোবাসেন। আজকাল বিদেশী জাতের সাদা মুলার প্রচুর উৎপাদন হয় আমাদের দেশে। এই মুলাগুলি আগেকার দেশি লাল মুলার মতো ততোটা গন্ধ না। কাঁচা খেতে মিষ্টিই লাগে।

 

আপনার খাদ্য তালিকায় যদি মুলা অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে পেট ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে মুলায় যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত মুলা খেলে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই মুলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

মুলা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত মুলার রস খেলে শরীরে ভিটামিন ‘সি’, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর প্রভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং ত্বকের রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

হার্টের যত্নে মুলা
মুলায় বিদ্যমান ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক উপাদান হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
মুলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই যাদের পরিবারে এ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা দৈনিক খাদ্য তালিকায়, বিশেষ করে সিজনের সময় মুলাকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে ভুলবেন না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
মুলা এবং এর পাতায় উপস্থিত আয়রন ও ফসফরাস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
মুলায় উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকর উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম দেয়।

ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে
নিয়মিত মুলার পাতা খেলে দেহের ভেতরে নানাবিধ ভিটামিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিও দূর করে।

শরীর থেকে ক্ষতিকারক বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে
ব্লাডার, কিডনি, প্রস্টেট এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো শরীর থেকে বের করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, শরীরের কোনায় কোনায় জমে থাকা বিষাক্ত উপাদানগুলো ক্ষতি করার আগেই কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়ার কাজটাও করে থাকে মুলার রস।

শরীরের ভেতরে প্রদাহের মাত্রা কমায়
মুলার রসে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় প্রতিদিন মুলার রস খেলে দেহের ভেতরে চোট-আঘাতের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা কমতে শুরু করে। সেইসাথে প্রস্রাবের নালী ও কিডনির প্রদাহও কমায়।

শ্বাসকষ্ট চিকিৎসায় ভূমিকা রাখে
শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশিতে মুলার রস যথেষ্ট উপকারী। মুলার রস ফুসফুসে জমতে থাকা মিউকাসের দেয়ালকে ভেঙে দেয়। ফলে অল্পদিনেই শ্বাসকষ্টের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি দূরে পালায়
বয়স বাড়ার সাথে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ক্যান্সার নিয়েও আতংকে থাকে অনেকে। এ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে আপনাকে যথেষ্ট পরিমানে সাহায্য করতে পারে মুলা। মুলার রসে বিদ্যমান অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন ‘সি’ শরীরের ভেতরে ক্যান্সার সেলের জন্ম ও বৃদ্ধি আটকায়। বিশেষতঃ কোলন, ইন্টেস্টিনাল, স্টমাক এবং কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে মুলার রস দারুণভাবে কাজে আসে।

অতিরিক্ত মুলা খেলে যে বিপদ হতে পারে

(১)    কিডনিতে পাথরের সমস্যা দেখা দেয়। তাই পরিমাণমতো মুলা খেতে হবে।

(২)    অতিরিক্ত মুলা খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্যাস, বদহজম, বমির             মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

(৩)    থাইরয়েডের মতো সমস্যা বাড়তে পারে। তাই থাইরয়েডের রোগীদের অতিরিক্ত             মুলা খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

(৪)    ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে মুলা। তাই ব্লাড সুগারের                রোগীদের বেশি পরিমাণে মুলা খাওয়া চলবে না।

(৫)    মুলাতে থাকা উপাদান ব্লাড প্রেশার কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত মুলা খেলে ব্লাড                প্রেশার মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং হাইপারটেনশন দেখা দিতে পারে।

 

(সংগৃহীত ও সম্পাদিত)



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url