ভারতীয়রা যেভাবে আমেরিকার বড় বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহী (CEO) হয়
সুন্দর পিচাই |
ভারতের
তামিলনাড়ুতে জন্ম নেয়া “পিচাই সুন্দরারাজন” ওরফে সুন্দর পিচাই ২০১৫ সালে গুগলের
সিইও হিসেবে নিযুক্ত হন।
আইআইটি
খড়গপুর থেকে ধাতব প্রকৌশলে ডিগ্রি অর্জন করার পর আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড
ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারি-এ এমএস এবং
ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার ওয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
মাস্টারকার্ড
সিইও ছিলেন অজয় বাঙ্গা (Ajay Banga)। বর্তমানে তিনি
বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট।
অজয় বাঙ্গা |
অজয়
পাল সিং বাঙ্গা (Ajaypal Singh Banga) ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘অজয় বাঙ্গা’ নামেই পরিচিত।
তার বাবা হরভজন সিং বাঙ্গা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট-জেনারেল।
তিনি ২০১০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত মাস্টারকার্ডের সিইও এবং পরে নির্বাহী চেয়ারম্যানের
দায়িত্ব পালন করেন।
অজয় বাঙ্গা বর্তমানে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে ‘বাণিজ্য নীতি ও আলোচনার’ জন্য রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা
কমিটির সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।
সত্য নাদেলা |
ভারতের
হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী সত্য নাদেলা ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে যোগদান
করেন।
তিনি
কর্ণাটকের মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ
ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভের পর আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-মিলওয়াকি থেকে
কম্পিউটার সায়েন্সে এমএস এবং ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো বুথ স্কুল অফ বিজনেস থেকে
এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
চ্যানেল
এর সিইও লীনা নায়ার (Leena Nair)
লীনা নায়ার |
লীনা
নায়ারের জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্রে। তিনি মহারাষ্ট্রের “ওয়ালচাঁদ কলেজ অব
ইঞ্জিনিয়ারিং” থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন (E&TC)
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর জেভিয়ার স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট XLRI –
থেকে স্বর্ণপদক বিজয়ী হিসাবে স্নাতক হন।
প্রথমে
তিনি ভারতেই কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি
ইউনিলিভারে ইন্টার্ন হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০০৭সালে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার
লিমিটেডের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হন।
ইউনিলিভারে
বিশ বছর কর্মজীবন অতিবাহিত করার পর নায়ার লন্ডনে গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে বদলী হন
এবং ২০১৬ সালে ইউনিলিভারের "প্রথম মহিলা, প্রথম এশিয়ান, সর্বকনিষ্ঠ"
প্রধান মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রধান হন।
৩০ বছর
ইউনিলিভারে কর্মজীবন অতিবাহিত করার পর ২০২২ সালে নায়ার বিলাসবহুল আন্তর্জাতিক
ফ্যশন ব্র্যান্ড “চ্যানেলের” গ্লোবাল সিইও নিযুক্ত হন এবং আমেরিকায় অবস্থান নেন।
টুইটার
বা এক্স হ্যান্ডেল এর সিইও ছিলেন পরাগ আগরওাল (Parag Agrawal)
পরাগ আগরওয়াল |
টুইটার
বা এক্স হ্যান্ডেল এর বর্তমান সিইও লিন্ডা ইয়াচারিনো এর আগের সিইও ছিলেন পরাগ
আগরওাল।
রজস্থানের
আজমিরে জন্মগ্রহণকারী পরাগ আগরওয়াল ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টুইটারের সিইও
হিসাবে কর্মরত ছিলেন। টুইটার ত্যাগের সময় আগরওয়ালকে ১ মিলিয়ন বার্ষিক
ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ১২.৫ মিলিয়ন মূল্যের স্টক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। বর্তমানে
তিনি নিজে একটি আর্টিফসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আগরওয়াল
আইআইটি মুম্বাই থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ব্যাচেলর অব টেকনোলজি
ডিগ্রি অর্জন করার পর আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার
বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আডোবি’র
সিইও শান্তনু নারায়ণ (Shantanu Narayen)
শান্তনু নারায়ণ |
শান্তনু
নারায়ণ ২০০৭ সালে এডোবির সিইও হিসেবে যোগদান করেন।
নারায়ণ
ভারতের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি
কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক
ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর বোলিং গ্রিন স্টেট
ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি “ইউনিভার্সিটি
অফ ক্যালিফোর্নিয়া'র হাস স্কুল অফ বিজনেস, বার্কলে” থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন
করেন।
আইবিএম
এর সিইও অরবিন্দ কৃ্ষ্ণ (Arvind Krishna)
অরবিন্দ কৃষ্ণ |
অরবিন্দ কৃষ্ণ ২০২০ সালে আইবিএম-এর সিইও হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি গিনি
রোমেট্টির উত্তরাধিকারী ছিলেন।
অরবিন্দ জন্মগ্রহণ করেন ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে। তার পিতা ছিলেন সেনাবাহিনীর
মেজর জেনারেল। তিনি কানপুরের “ইন্ডিয়ান ইনস্টিটি অব টেকনোলজি” থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার আর্বানা-শ্যাম্পেইন ইলিনয়
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
নোকিয়ার
সিইও ছিলেন রাজীব সুরি (Rajeev Suri)
রাজীভ সুরি |
নোকিয়ার বর্তমান সিইও
পেক্কা লুন্ডমার্কের আগের সিইও ছিলেন
রাজীব সুরি (Rajeev Suri)
রাজীব
সুরি ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নোকিয়ার সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি
ভারতের নয়া দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং কুয়েতে বেড়ে ওঠেন। তিনি সিঙ্গাপুরের
নাগরিকত্ব ধারণ করেন।
সুরি
ম্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে
ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশনে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেপসির
সিইও ইন্দ্রা নূয়ী (Indra Nooyi)
ইন্দ্রা নূয়ী |
ইন্দ্রা
নূয়ী ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি
মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট,
কলকাতা থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল স্কুল
অফ ম্যানেজমেন্টে থেকে 'সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়' স্নাতকোত্তর ডিগ্রি
অর্জন করেন।
নূয়ী
১৯৯৪ সালে পেপসিকোতে যোগদান করেন এবং ২০০৬ সালে সিইও হিসেবে মনোনীত হন।
মাইক্রোন
টেকনোলোজি’র সিইও সঞ্জয় মালহোত্রা (Sanjay Mehrotra)
সঞ্জয় মালহোত্রা |
সঞ্জয়
মালহোত্রা ভারতের কানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। হায়ার সেকেন্ডারি শেষ করে ১৮ বছর বয়সে
মালহোত্রা উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ক্যালিফোর্নিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলে থেকে তিনি তড়িৎ প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক
এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি
নিজে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি মাইক্রোন টেকনোলোজির সিইও।
পালো
আল্টো নেটওার্ক-এর সিইও নিকেশ অরোরা (Nikesh Arora)
নিকেশ অরোরা |
নিকেশ
অরোরার বাবা ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর অফিসার। ভারতের বারানসীতে অবস্থিত বেনারস
হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) থেকে
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন। এরপর তিনি আমেরিকার বোস্টন কলেজ থেকে
ফিন্যান্সে এমএস এবং নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি
১৯৯৯ সাল থেকে সিএফএ (CFA) উপাধি লাভ করেন।
নিকেশ
অরোরা জুন ২০১৮ থেকে আমেরিকান সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি "পালো অল্টো
নেটওয়ার্কের" চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। তার পূর্বে
তিনি যথাক্রমে গুগলের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এবং সফটব্যাঙ্ক গ্রুপের সভাপতি
ছিলেন।
------
এমন
আরো অনেক ভারতীয় তাদের নিজেদের দেশ থেকে সমসা সমাধানের এক অভিনব ক্ষমতা নিয়ে
আমেরিকায় আসেন। উল্লেখ্য, চলতি বছর আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প তার প্রশাসনে্র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য ভারতীয় বংশদ্ভূত আমেরিকানকে
মনোনীত করেছেন, যা সারাবিশ্বে আলোচিত হচ্ছে।
ভারতের
জন্যসংখা প্রায় ১৪৫কোটি। চীনের পরে ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। আগামি কয়েক
বছরে জন্যসংখ্যার দিক থেকে ভারত চীনকেও পেছনে ফেলে দেবে ধারণা। ভারতে এলিট শ্রেণী
যেমন আছেন, তেমনি দারিদ্রতাও বিদ্যমান। দেশের জন্যসংখার প্রায় ১৫ শতাংশ লোক
দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এদের দৈনিক উপার্জন ১৫০ থেকে ১৮০ রূপী।
জনবহুল
দেশ হিসেবে নানা সমস্যা, যেমন; শিক্ষা, চিকিৎসা সহ সকল ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব
রয়েছে। নানা সমস্যার মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে ভারতীয়দের মধ্যে এক বিশেষ ধরণের
মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা জন্মায়। এছাড়া সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কঠিন
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার ফলে ভারতীয়রা পরিবর্তিত
পরিস্থতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারদর্শী হয়ে ওঠে। এই সমস্ত কারণে ভারতীয়রা
বিশ্বের অন্যান্য দেশে কাজ করতে গেলে সহজেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। বড়
বড় কোম্পানিতে চাকরি করার জন্য এই গুন অতি জরুরী।
২০১৪
সালে Microsoft এর CEO সত্য নাদেলা যখন দায়িত্ব গ্রহন করেন, তখন কোম্পানির অবস্থা ছিলো
খুবই খারাপ। বিল গেটস এর মাতো ব্যাক্তিও Microsoft কে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
নতুন-নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারনেই Microsoft-এর খারাপ সময়
যাচ্ছিলো। স্মার্টফোন ব্যবসায় এপেলের কাছে সম্পূর্ণ মার খেয়ে যায়। এমন সময়
ইঞ্জিনিয়ার সত্য নাদেলা প্রমোশন পেয়ে মাইক্রোসফটের সিইও হন।
তিনি দায়িত্ব
নেয়ার পর মাইক্রোসফটের কাজের পরিবেশই বদলে ফেলেন। সত্য নাদেলা Microsoft কে সময়
উপযোগী কোম্পানি হিসেবে গড়ে তোলেন।
২০১৫
সালে সুন্দর পিচাই যখন Google এর দায়িত্ব নেন তখন তাকেও অনেক সমস্যার সমাধান করতে
হয়েছে। সেসময় বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে
কোম্পানিগুলো ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলো। এমন সময় গুগলের দায়িত্ব নেয়া ভারতীয়
ইঞ্জিনিয়ার সুন্দর পিচাই শান্ত স্বভাব আর উদারতা দিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে একজন আদর্শ
সিইও হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
ভারতীয়
সিইওদের অধিকাংশের মধ্যেই একটি মিল- তা হলো, এদের সবারই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি আছে। সুন্দুর
পিচাই, পরাগ আগারওয়াল, শান্তনু নারায়ণের মতো অনেকেই ভারতের আইআইটি থেকে পডালেখা
করেছেন। আমাদের দেশে যেমন বুয়েট, কুয়েট, চুয়েটের মতো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়
রয়েছে। ভারতে আছে “আইআইটি” বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলোজী। বর্তমানে সমস্ত
ভারত জুড়ে আইআইটির ২৩টি শাখা রয়েছে। আইআইটি মুম্বাই, আইআইটি মাদ্রাজ, আইআইটি
কানপুর, আইআইটি খড়গপুর- এগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।
১৯৫১
সালে সর্বপ্রথম আইআইটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে। ২০০০ একরের
উপর এই ক্যাম্পাস। এখনো ভারতের সকল আইআইটি’র চেয়ে বড়। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই
আইআইটি খড়গপুর থেকেই পড়লেখা করেছেন।
এসব
আইআইটিতে ভর্তি হওয়া খুবই কঠিন। আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভারতীয় ছাত্রদের কঠোর
অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করতে হয়। এমনিতেই ভারতের মতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ
দেশ, তার উপর আইআইটির মতো উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতীয়দের সিইও হওয়ার দৌড়ে অনেক
এগিয়ে রেখেছে।
ভারতে
পডালেখা শেষ করে আমেরিকার শীর্ষ বিদ্যাপিঠগুলোতে ভারতীয়দের এক নতুন দুআর উন্মোচন
করে। ভারত থেকে শেখা কঠোর ধ্যাবসায় তারা আমেরিকায় এসে কাজে লাগানোর ফলে ভারতীয়
বংশদ্ভূতরা খুব সহজে সবার চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে।
আমেরিকায়
পড়তে আসা অর্ধেকের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী যেসব বিষয়ে পড়ালেখা করে তাকে সংক্ষেপে
‘স্টিম’(STEM) অর্থাৎ “সাইন্স-টেকনোলোজি-ইঞ্জিনিয়রিং এন্ড ম্যাথমেটিকস”। এই
ডিগ্রির ফলে শিক্ষার্থীরা বিশেষ কাজের দক্ষতা অর্জন করে। আর আমেরিকার অভিবাসন
ব্যবস্থায় দক্ষ লোকদের প্রাধাণ্য দেয়া হয়।
আমেরিকার
‘এইচ ওয়ান বি’ ভিসার অধীনে আইটি খাতে কর্মরত বিদেশী নাগরিকরা আমেরিকা থাকার সুযোগ
পায়। ২০২০ সালে এইচ ওয়ান বি ভিসার ৭৫% দেয়া হয়েছে ভারতীয়দেরকে। এক্ষেত্রে চীনাদের
অবস্থান মাত্র ১২%। চীনা ছাত্রছাত্রীদের ৮০% বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষ করে নিজের দেশে
ফিরে যায়। কারণ চীনা উদ্যোক্তারা তাদের নিজের দেশ থেকেই নতুন কোম্পানি শুরু করতে
বেশি আগ্রহী।
জাতিসংঘের
তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী জনসংখ্যা রয়েছে ভারতের। দেশটির প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ
লোক ভারতের বাইরে বাস করে। ২০২০ সালে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার জন্য ভারতীয়রা সবচেয়ে
বেশি তাদের ভারতীয় পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেছে।
আমেরিকায়
ভারতীয়দের ভালো ফল করার আরেকটি কারণ ভারতের প্রধান ভাষা হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি
দ্বিতীয় ও অফিসিয়াল ভাষা। ফলে ভারতীয়রা নিজ দেশ থেকেই খুব ভালো ইংরেজি বলার
দক্ষতা অর্জন করে। ফলে চীন সহ অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের চেয়ে ভারতীয়রা এগিয়ে থাকে।
এছাড়া আমেরিকার ব্যবসায়িক সাংস্কৃতির সাথে ভারতীয়রা খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে
পারে।
ভারতের
ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কর্মরতরা সব সময় দেশের
বাইরে কাজ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। সেজন্য অনেকে নিজের দেশ থেকে প্রযুক্তি
ব্যবসায় জটিল সমস্যা গুলো আগে থেকেই আয়ত্ত করতে পারে। শুধু বাইরের দেশে বড় বড়
কোম্পানিই নয়, ভারতীয়রা নিজেদের দেশেও বড় বড় প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানি গড়ে
তুলেছে। সে সব কোম্পানির বাজার মূল্য এক বিলিয়ন ডলারের বেশি তাদেরকে বলা হয় ইউনিকন।
ভারতের বেশ কয়েকটি কোম্পানি ইউনিকন কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
২০২০
সালে ভারতের ইউনিকন কোম্পানি ছিলো ১৭%। মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালে তা
দাঁড়ায় ৪৭%। যে কোনো সাধারণ সময়ের বিচারে এটি অনেক বড় উত্থান।
আমেরিকার
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সিইও’রা খুব উচ্চহারে বেতন পায়। গুগলের সিইও সুন্দর
পিচাই-এর বেতন বছরে ২২৬ মিলিয়ন ডলার। অন্যান্যদের মাসিক গড় বেতন প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ
রূপী। অন্যদিকে ভারতে মাসিক গড় বেতন দেড় লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ রূপী।
ভারতের
মধ্যে প্রযুক্তিখাতে কর্মরতরাই সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করে। তারপরেও আমেরিকার
তুলনায় এই উপার্জন খুবই নগণ্য। সে জন্য বহু ভারতীয় ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আমেরিকাকে
বেছে নেয় এবং যোগ্যতা গুনে কাংখিত অবস্থানে পৌঁছে যায়।
(তথ্য
সংগ্রহঃ ইন্টারনেট থেকে)