সর্ষের তেলের ১০ উপকারিতা
আধুনিক যুগে আমরা শরীরে
সর্ষের তেল মাখার কথা শুনে নাক সিটকাই। কিন্তু এখন থেকে ৫০-৬০ বছর আগে গ্রামের বেশিভাগ
মানুষের এই সর্ষের তেলই ছিলো খাওয়া, গায়ে মাখার জন্য এই সর্ষের তেলই ছিলো প্রধান
উপাদান। কেউ কেউ অবশ্য তিল তেলও ব্যবহার করতেন। আর মেয়েরা ব্যবহার করতেন নারকেল
তেল। বাজারে একটা সুবাসিত তেল ছিলো তার নাম ছিলো ‘তিব্বত কদুর তেল’। উৎপাদক আমাদের
প্রসাদন জগতের সবচেয়ে পুরনো কোম্পানি ‘কোহিনূর কেমিকেল কোম্পানি।
আমরা অনেকেই
জানিনা শরীরে সর্ষের মাখার উপকারিতা সম্বন্ধে। তো এখনকার আলোচনার বিষয় সর্ষের
তেলের ১০টি উপকারিতার বিষয়ে।
শীতকালে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নানা পণ্য
ব্যবহার করেন অনেকে। কেউ লোশন, কেউ পেট্রোলিয়াম জেলি, কেউ আবার শরণাপন্ন হন সর্ষের
তেলের। কোনটি ভালো তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে সর্ষের তেলের প্রাকৃতিক গুণ ত্বকের
জন্য উপকারীই বটে। জেনে রাখুন এর উপকারিতাগুলো।
১। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে
সমৃদ্ধ
সর্ষের তেল
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে আছে ভিটামিন ‘ই’। আর এই ভিটামিন ত্বককে
অক্সিডেটিভ ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে। শীতেও ত্বকের স্বাস্থ্যে উজ্জ্বলতা আনতে
সহায়তা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো ত্বকের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে
এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়। সর্ষের তেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা শীতে খুব
প্রয়োজন।
২। চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি
সর্ষের তেল নিয়মিত মাথার
ত্বকে ব্যবহার করলে শুষ্কতা, খুশকি ও চুল ভাঙার সমস্যা দূর হয়। শীতের শুষ্ক
আবহাওয়ায় চুলকে পুষ্টি জোগায় এবং সুস্থ রাখে শর্ষের তেল। এর প্রাকৃতিক
উপাদানগুলো চুলের গোড়া শক্তিশালী করে এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে। এটি
চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কার্যকর।
৩। পেশির ব্যথা উপশম করে
সর্ষের তেলের উষ্ণতাদায়ক
প্রভাব শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং পেশীর ব্যথা দূর করে। বিশেষ করে শীতের সময় পেশীর
ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। সর্ষের তেলের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো রক্ত সঞ্চালন
বাড়ায়, যা দ্রুত ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। নিয়মিত সর্ষের তেল ব্যবহার করলে শরীরের
পেশী থাকে শিথিল, মেলে আরাম।
৪। ত্বক নরম রাখে ও শুষ্কতা
রোধ করে
সর্ষের তেল ত্বককে গভীরভাবে
আর্দ্র করে বলে ত্বক থাকে কোমল ও মসৃণ। শীতে শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া ত্বক সারিয়ে তুলতে
কার্যকর। এই তেলের পুষ্টিকর উপাদান ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়ক।
ফলে ত্বক থাকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
৫। চুলকানি কমায়
সর্ষের তেল শীতের
শুষ্কতাজনিত ত্বকের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাতে কার্যকর। এটি ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে
আরাম দেয় এবং আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে। এর ময়েশ্চারাইজিং গুণ
শুষ্ক ও অস্বস্তিকর ত্বকের সমস্যা দূর করতে সহায়ক। শীতকালে ত্বকের চুলকানির
প্রাকৃতিক সমাধান বলা যায়।
৬। প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর
মৃত ত্বকের কোষ দূর করার
বিশেষ উপাদানকে বলে ‘এক্সফোলিয়েটর’। সর্ষের তেল প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে
কাজ করে ত্বকের মৃত কোষগুলো মৃদুভাবে সরিয়ে দেয়। এতে ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয়ে ত্বক
মসৃণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন
৭। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা
বাড়ায়
সর্ষের তেলের নিয়মিত
ব্যবহার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, যা ত্বককে নরম, মসৃণ ও কোমল রাখে। এটি
শীতকালের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের পুষ্টি বজায় রাখে। সর্ষের তেল ত্বকের
আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত ত্বক নিশ্চিত করে।
৮। ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে
সর্ষের তেলে থাকা
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা
করে। শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সর্ষের তেল ত্বককে সেই
ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ায় এবং
সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
৯। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং
শরীর উষ্ণ রাখে
সর্ষের তেল রক্ত সঞ্চালন
বাড়ায় এবং শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। ফলে ঠান্ডা থেকে আরাম দেয়। এই তেলের
উষ্ণতাদায়ক প্রভাব রক্ত সঞ্চালনকে সক্রিয় করে, যা শীতে শরীরের স্বাভাবিক
তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়ক।
১০। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে
সমৃদ্ধ
সর্ষের তেল ওমেগা-৩ ফ্যাটি
অ্যাসিডে ভরপুর, যা ত্বকের গভীরে পুষ্টি জোগায় এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা নিশ্চিত
করে। এটি ত্বকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, বিশেষত শীতকালে ত্বকের যত্নে
অত্যন্ত কার্যকর। ত্বকের সুরক্ষায় এই তেল প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপাদান।
(সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া)