সৎ চোর - বিপ্লব কুমার দে
ছবি: প্রতীকী |
জগন্নাথ বাবু দীর্ঘদিন স্কুলে শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন। পেনশন পান। ওতে স্বামী স্ত্রীর ভালো ভাবেই চলে যায়। উনি ঢাকায় একটি সুন্দর ফ্ল্যাট কিনেছেন, এখন এখানেই থাকেন। ছেলে মেয়েরা বাইরে থাকে। সুপ্রতিষ্ঠিত।
জগন্নাথ বাবুর গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে হল,,, সেইমত গোছগাছ করে ফেললেন,, কিন্তু, ওনার চিন্তা হল,, এতদিন ফ্ল্যাটটা ফাঁকা পড়ে থাকবে,,, যদি চোর ঢোকে,, টাকাপয়সা, সোনার গহনা তো কিছু পাবে না, তখন যদি জিনিষপত্র তছনছ করে দেয়, নষ্ট করে দেয়,, তাতেও তো অনেক ক্ষতি হবে! অনেক ভেবে উনি একটি উপায় বের করলেন।
সেন্টার টেবিলের উপর দুটি ৫০০ টাকার নোট পেপার ওয়েট চাপা দিয়ে রেখে দিলেন,, সঙ্গে একখান চিঠি,,,
"সম্মানীয়,চোর সাহেব,,
আমি কিছু দিনের জন্য আমার গ্রামের বাড়িতে যাইতেছি। ইত্যবসরে, আপনি যদি দয়া করিয়া আমার ফ্ল্যাটে পদার্পন করেন, তো আপনার দুঃখ হইতে পারে, কারন, টাকা কড়ি, সোনাদানা কিছুই পাইবেন না, কারন, আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, সামান্য কিছু পেনশন পাই, তাহাতেই সংসার চালাই,,, আপনার কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ না হওয়ায় দুঃখ হইবে, সেটা প্রচন্ড রাগ, রোষে পরিণত হইতে পারে, আর রাগের মাথায় আমার কষ্টার্জিত জিনিষপত্র ভাঙচুর করিয়া ফেলা খুবই স্বাভাবিক। তাই, সামান্য উপহার হিসেবে ১০০০ টাকা রাখিয়া গেলাম, আর ফ্রিজে একটি ড্রাই কেক এবং একটি বিয়ারের ক্যান রাখিয়া গেলাম,, আপনার কঠোর পরিশ্রমের ফলে ক্ষুধা লাগিলে খাইয়া লইবেন।
তবে, আমি আপনাকে কিছু টিপস্ দিতেছি,,, স্কুলে অসংখ্য ছাত্র দের অদ্যাবধি অনেক টিপস্ দিয়াছি,, তারা এখন সব বিশাল ব্যক্তি হইয়া গিয়াছে, আপনারও আশা করি কাজে লাগিবে,,,
১নং, আমার ফ্ল্যাটের মুখোমুখি সি ব্লকের ৩ নাম্বার রোডের, প্রথম বাড়িটার ৬ তলায় রমেশ বাবু থাকেন, ওনার একটি ছোট দোকোন ছিল,, এখন উনি মিনিষ্টার,,, প্রচুর টাকার মালিক।
২নং,,, উহার ৫ তলায় সুরেশ বাবুর বিশাল ব্যবসা, লাখ লাখ টাকার কারবার।
৩নং,,, উহার পাশে ৪ তলায় প্রকাশ বাবু বিরাট গার্মেন্টস কারখানার মালিক।
৪নং,,,,, উহার নীচে পাচুবাবুর জুয়েলার্সের ব্যবসা টাকার কমতি নাই।
এইসব বাড়ি গুলি আপনি পরিদর্শন করিতে পারেন,,,, আপনার পরিশ্রম বিফল হইবে না,, তাছাড়া ওনারা কেউই দুদক, ডিবি, সিআইডি এর ভয়ে পুলিশে খবর দিবেন না,, সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন।"
ব্যস, চিঠি লেখা শেষ, চিঠিটি টাকার সঙ্গে পেপার ওয়েট দিয়ে চাপা দিয়ে রাখলেন এবং খুশী মনে জগন্নাথ বাবু সস্ত্রীক গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সেখানে ছোটবেলার বন্ধু দের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারলেন,, গ্রামের টাটকা শাকসবজি, পুকুরের টাটকা মাছ, সকালে খেজুর রস, খেজুর গুড়, পাটালি খেয়ে মাস দুই পর ঢাকায় ফিরে এলেন।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই অবাক,,, কিছুই হয় নি, সব ঠিকঠাক আছে। হঠাৎ, ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকাতেই নজর পড়ল,,, টেবিলের উপর দুটো ৫০০ টাকার বান্ডিল রয়েছে, তার নীচে একখান চিরকুট,,
"সম্মানীয় মাষ্টার মশাই,
প্রণাম নিবেন। আপনার টিপস্ দারুন কাজে লেগেছে,,, ঐ ফ্লাটগুলি পরিদর্শন করে প্রচুর টাকা ও সোনাদানা সংগ্রহ করতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নি। তাই, উপঢৌকন হিসেবে এক লাখ টাকা রেখে গেলাম। আর, ফ্রিজে দুটো ব্লাক লেবেল whiskey র বোতল এবং দুই কেজি Dry fruit এর প্যাকেট রেখে গেলাম। মাঝে মাঝে এমন টিপস্ দিলে খুবই বাধিত হব। আমাদের মত গরীব, পিছিয়ে পড়া, খেটে খাওয়া মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আপনি নিশ্চয়ই সচেষ্ট থাকবেন।"
ইতি-
আপনার কথামত - "চোর সাহেব"
নমস্কার। 🙏
লিখেছেন: বিপ্লব কুমার দে
বিপ্লব কুমার দে |
.