এক সাগর রক্তের বিনিময়ে

 

প্রতীকী ছবি

সমসাময়িক পারিপার্শ্বিকতায় একটা কথা আজ বলতে বড় ইচ্ছে হলো। বিকৃত করার অপরাধ মার্জনার জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

 

গল্প নয় সত্যি

 

১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে একুশের গানটি গাইছি। ছোটো ছেলের বয়স তখন ৮। আমার পাশে বসে সেও আমার সাথে কথা, কন্ঠ মেলাচ্ছে। তো, ওর মা ঠাট্টা করে বলছে, ‘তোমরা দুইজনই রফিক, জব্বার, বরকতদের ভাই বলছো কেনো?’ আমার মনেও একটু কৌতুক জাগ্রত হলো। ছেলেকে ঠাট্টা করে বললাম, আমি বলবো ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’, আর তুমি বলবে, ‘আমার চাচার রক্তে রাঙানো’।

 

২৭-২৮ বছর পর ঠিক একই ঘটনার অবতারণা ২০২৪ এ এসেও। এবারের ঘটনা ছোটো ছেলের প্রথম সন্তান আমার নাতনির সাথে। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে তার বয়স ৬ বছর ৪ দিন। কন্ঠে সুর আছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে নাতনিকে একুশের গান গাইতে শুনে পুরনো সেই কথা মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে হারমোনিয়াম নিয়ে বসলাম। হারমোনিয়ামও সেই আগেরটাই। নাতনিকে তার বাবার গল্প শোনালাম। তাকেও হাস্যচ্ছলে বললাম, আমি যখন ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’ বলবো, তুমি বলবে, ‘আমার দাদার রক্তে রাঙানো’!

 

এমনি এমনি মনে পড়েনি। বর্তমানে যেভাবে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা চলছে তাতে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেই তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা নামধারী কতিপয় নেতার দৌড়াত্ব এতো বেড়েছে যে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, দেশের স্থপতিকে অস্বীকার করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, চরিত্র নিয়েও নানা মন্তব্য করে মুর্খতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা আদালতের সিদ্ধান্তকেও চ্যালেঞ্জ করছে।

 

তারা বলতে বলছে, ‘দেশের অস্তিত্ব-সার্বভৌমত্ব নষ্ট করেছে শেখ মুজিব’! এটা কোন সার্ভৌমত্ব, পাকিস্তানের? আবার বলছে ‘শেখ মুজিবের লাশ কবর থেকে উঠানো না লাগলে ২৪ এর আন্দোলনে নিহতদের লাশ কেনো কবর থেকে তুলতে হবে?’

 

শেখ মুজিব হত্যার বিচার শুরু হয় নিহত হওয়ার ২১ বছর পর। তার হত্যাকান্ডে যারা জড়িত ছিলো তারা নিজ মুখেই হত্যার কথা স্বীকার করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছে, যে কারণে হয়তো তার লাশ উত্তোলন প্রয়োজন মনে করেনি আদালত। লাশ উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে বিচারিক প্রয়োজনে এবং আদালত যদি নির্দেশ দেয়। তাছাড়া ২১ বছর পর মাটির নিচ থেকে কোনো লাশ তুলে পরীক্ষা করার উপযুক্ত থাকে কিনা জানিনা। 


সুষ্ঠ বিচারের প্রয়োজনে আদালত প্রয়োজন মনে করলে কোনো লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত না হয়ে থাকলে কিংবা পুনঃতদন্তের প্রয়োজন হলে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু লাশ উত্তোলন করতে সমন্বয়কদের অসম্মতির কারণ কি? আদালতের নির্দেশের বিরূদ্ধে মন্তব্য করা আদালত অবমাননা হয় বলে জানতাম। নাকি আদালতও চলে সমন্বয়কদের ডিকটেশনে?

 

অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করার জন্য তাদের স্মরণে লেখা “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না”’ গানটির শব্দ পাল্টে আবার এভাবে গায় কিনা - “…আমরা তোমাদের ‘ছাড়বো’ না”!

 

আল্লাহ মাফ করুন।

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url