নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন গানের জনপ্রিয় শিল্পী পাপিয়া সরোয়ারের চিরবিদায়
পাপয়া সরোয়ার |
"নাই
টেলিফোন নাইরে পিয়ন
নাইরে টেলিগ্রাম।
বন্ধুর
কাছে মনের খবর
কেমনে
পৌঁছাইতাম।।"
জনপ্রিয়
এ গানটির শিল্পী পাপিয়া সরোয়ার ইন্তেকাল করেছেন।
পাপিয়া
সারোয়ার ছিলেন মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী। তবে সর্বশ্রেণীর শ্রোতার কাছে জনপ্রিয়
এই গানটি অধিক প্রচার পায়। তার গাওয়া কয়েকটি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত- “না সজনী
না” "আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইলো না কেহ" “হৃদয়ের এ’কূল
ও’কুল দু’কূল ভেসে যায়” “আমার সকল রসের ধারা তোমাতে- আজ হোক না সারা"
ইত্যাদি।
তার
গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত –
"না
সজনী না, আমি জানি জানি সে আসিবে না
এমনই কাঁদিয়ে পোহাইবে যামিনী, বাসনা তবু পুরিবে না.
জনমেও এ পোড়া ভালে কোনো আশা মিটিলো না।।“
গানটি
গ্রামবাংলার শ্রোতাদেরও হৃদয় কাড়ে। বিখ্যাত এ গানটি গ্রামের সকলশ্রেণীর শ্রোতার মাঝে অত্যাধিক
জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই গানের মাধ্যমেই মূলতঃ তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাক্রমে
বেশ কয়েক বছর আগে তার সাথে একবার দেখা হয়েছিলো ধানমন্ডি স্কয়ার হাসপাতালে।
সেখানে তার স্বামী সরোয়ার আলম চিকিৎসাধীন ছিলেন। আমারও একজন রোগী ভর্তি ছিলো
সেখানে। প্রিয় মুখ, প্রসিদ্ধ মুখ- সবাই তাকে চেনে। প্রথমে আমার স্ত্রী দেখে আমাকে
দেখালেন। কাছাকাছি হলে কুশল বিনিময় করতেই বিনয়ের সাথে প্রতিউত্তর দিলেন এবং
সাবলীলভাবে বললেন, ভালো আছেন? যেন অনেকদিনের চেনা! অথচ তার সাথে কোনোদিন দেখাই
হয়নি।
হাজারও
ভক্ত শ্রোতার মন দুঃখে ভাসিয়ে আজ ভোরে পরপারের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
৭১ বছর
বয়সী পাপিয়া সারোয়ার গত তিন বছর যাবৎ ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। ২০২১ সালে একুশে
পদকপ্রাপ্ত এ শিল্পী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সম্প্রতি
অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়।
পাপিয়া সারোয়ারের জন্ম বরিশালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে ডিগ্রি নিতে ভারত যান। এর আগে ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন ও জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীতে দীক্ষা নেন পাপিয়া সরোয়ার।
দীর্ঘ
ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য শ্রোতাদের অভাবনীয় ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি। আধুনিক
গানেও জনপ্রিয়তা ছিলো। তার গাওয়া ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি
সর্বশ্রেণীর শ্রোতাদের মাঝে অত্যাধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পাপিয়া
সারোয়ার ২০১৩
সালে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে
ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি ২০২১ সালে একুশে পদক লাভ করেন।