সমকালীন সমাজ ভাবনা - চঞ্চল কুমার ভৌমিক

ভোরে কদাচিৎ ঘুম ভাঙ্গে, নতুন অভিজ্ঞতা হয়৷ পাশে কিছু নিম্ন আয়ের মানুষ থাকে। ভোরের দিকেই জেগে উঠে তারা৷ নারীরা ঘুমজড়ানো কন্ঠে রাস্তায় বসে গল্প করে, "খোকনের বাপ গতরাতে দুইটায় রিক্সা চালিয়ে বাড়ী ফিরেছে। ছেলের বৌ 'কামচোর', সংসারের কাজে হাত দেয়না। সারাদিন ঘরের মধ্যে কি জানি করে" - এইসব গল্প।


চারিদিক নিস্তব্ধ থাকায় এসব গল্প কানে আসে৷ পাশের বাসায় মুরগি পালে সম্ভবত। রোজ সকালে নির্দিষ্ট সময়ে একটা মোরগ ডাকে। কার বাড়ীতে যেনো হাঁস আছে, প্যাক প্যাক শব্দ করে এইসময়। সারাদিন এসব বোঝা যায়না৷

মোড়ের টিনের চালার হোটেলের মালিকের বাড়ী পাশেই। সে ভ্যানে করে সাতসকালে ডালের ডেকচি আর সব্জীর ডেকচি নিয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছে। গিয়ে শুধু পরেটা ভাজা। তরকারি, ডাল রাতেই বাড়ীতে বানায়৷ এই দিকটা শহরের একটু নির্জন এলাকা, হাঁটার উপযোগী তাই অনেকে হাঁটা শেষে তার দোকানে ডাল পরেটা খেয়ে যায়৷

পাশের গাছে ঘুঘু ডাকছে দুইটা। এখানে ট্রাম্প আর কমলা হারিসকে নিয়ে কেউ ভাবে না৷ নিজের ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য এদের সংগ্রাম। কে গেলো কে এলো এদের মাথা ব্যাথা নেই। এরা ভাবে খেতে পারবো তো ঠিকমতো?  এদের প্রতিটি  সকাল যুদ্ধের সকাল। সারাদিন খাবারের জন্য যুদ্ধ।

ভুট্টুর মা আসর ভঙ্গ করে বলল, “বাড়ীত যাওয়া লাগবে। কিস্তি নিবার আসপে এলা।“

হ্যাঁ এদের এনজিও থেকে ঋণ আছে প্রায় সবার। পান চিবাতে চিবাতে একজন সাইকেলে একটু পরেই এনজিওর কিস্তি তুলতে আসবে৷
এদের কানাডায় বাড়ী করার চিন্তা নাই, ইনকাম ট্যাক্সের চিন্তা নাই, বাড়ীতে কোটি কোটি বাজার থেকে বেঁচে যাওয়া টাকা নাই। শুধু কিস্তি দিতে পারলেই শান্তি!

লেখা: Chanchal Kumar Bhowmik 

চঞ্চল কুমার ভৌমিক





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url