ভারতের সুখ্যাত কন্ঠশিল্পী সুমন কল্যানপুর ঢাকার মেয়ে!

 

সুমন কল্যানপুর


১৯৬০-৮০ এর দশকের গানের শ্রোতারা অনেকেই জানেন সুমন কল্যানপুরের নাম। আবার অনেকেই হয়তো জানেন না। কারণ তার কন্ঠের গান অনেকটাই লতা মুঙ্গেশকরের কণ্ঠের সাথে মিলে যেতো। যেমন মিলে যেতো মহেন্দ্র কাপুরের কন্ঠ মোহাম্মদ রফির সাথে। মোহাম্মদ রফি কিংবা যে কারো সাথে দ্বৈতকন্ঠে গাওয়া গানগুলো অনেকেই লতা মুঙ্গেশকর ভেবে ভুল করতো। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না তার জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়।

 

সুমন কল্যাণপুর ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শঙ্কর রাও হেমাদি ছিলেন কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর শহরের এক বনেদি ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান। তিনি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার উচ্চপদে চাকরি করতেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ অধুনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। সুমন কল্যানপুর তার পাঁচ বোন ও  এক ভাই-এর মধ্যে সকলের বড়ো ছিলেন। সবারই জন্ম ঢাকায়। ১৯৪৩ সালে তারা মুম্বাই শহরে চলে যান। সেখানে তিনি সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন।

 

সুমন কল্যাণপুর সব সময় ছবি আঁকা এবং সংগীতে অনুরক্ত ছিলেন। মুম্বইয়ের বিখ্যাত কলম্বিয়া হাই স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে তিনি মর্যাদাপূর্ণ স্যার জে জে স্কুল অফ আর্টসে ভর্তি হন। একই সাথে তাদের পারিবারিক বন্ধু পুণের ‘প্রভাত ফিল্মের’ সংগীত পরিচালক 'পণ্ডিত কেশব রাও ভোলে'জির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নেন।

 

সুমন কল্যানপুর শখের বশে গান গাওয়া শুরু করেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সংগীতের ওপর তার অনুরাগ বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি পেশাদার শিল্পীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ‘ওস্তাদ খান আবদুল রহমান খান' ও 'গুরুজি মাস্টার নবরং' এদের কাছে সংগীত শিক্ষা লাভ করেন।

 

সুমন কল্যানপুর ভারতীয় সংগীতশিল্পী হিসেবে অতি শ্রদ্ধেয় নেপথ্য গায়িকাদের মধ্যে একজন স্বনমধন্য ব্যক্তি ছিলেন। তার সময়কালে লতা মঙ্গেশকরের একাধিপত্যের মধ্যেও প্রায় সমস্ত সংগীতকারের সঙ্গেই গান গেয়ে সফলতা পেয়েছিলেন। একজন নেপথ্য গায়িকার জন্য প্রয়োজনীয় অভাবনীয় সাংগীতিক বৈশিষ্ট্য, উচ্চাঙ্গ সংগীতের বিশদ জ্ঞান, সুরেলা কণ্ঠ এবং গলার বিস্তীর্ণ পরিসীমা ছিলো তার। অনেকে বিশ্বাস করতো যে, তার যা প্রতিভা তাতে তার যতোদূর পৌঁছানো উচিত ছিলো ততোদূর তিনি পৌঁছতে পারেননি।

 

সুমন কল্যানপুর ১৯৫৪ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬০-১৯৭০ এর দশকে তিনি ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি হিন্দী ভাষা ছাড়াও বাংলা, মারাঠি, গুজরাটী, অসমীয়া, কন্নড়, ভোজপুরী, রাজস্থানী, উড়িয়া এবং পাঞ্জাবী ভাষায় গান করেছেন। তিনি মোট ৮৫৭ টি হিন্দী গানে কন্ঠ দিয়েছেন। তার সময়কালে তিনি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

 

তার গাওয়া বাংলা গানের মধ্যে “মনে করো আমি নেই, বসন্ত এসে গেছে, কৃষ্ণচূড়ার বুন্যায় চৈতালী ভেসে গেছে” এবং “আমার সপ্ন দেখার দুটি নয়ন, হারিয়ে গেলো কোথায় কখন, কেউ তা জানে না” উল্লেখযোগ্য।

 

সুমন হেমাদি ১৯৫৮ সালে মুম্বাইয়ের একজন ব্যবসায়ী রামানন্দ কল্যাণপুরকে বিয়ে করেন এবং তখন থেকে সুমন কল্যাণপুর নাম ধারণ করেন। তিনি ছিলেন অতিশয় সুন্দরী। ৮৭ বছর বয়সেও শারীরিক শৌষ্ঠব ও সৌন্দর্যের একটুও কমতি হয়নি।

 

চেহারার অনেকটা মিল থাকায় অনেকে ভারতের স্বনামধন্য প্রয়াত নায়িকা স্মিতা পাতিলকে তার মেয়ে ভেবে ভুল করেন। তার একটিমাত্র মেয়ে ‘চারুল অগ্নি’ যিনি বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। স্বামী প্রয়াত।


৮৭ বছর বয়সে সুমন কল্যানপুর

স্মিতা পাতিল


মেয়ে চারুর সাথে সুমন কল্যানপুর















Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url