গাধার যখন সিংহাসনে বসার সাধ হয়
একদা সিংহ
শিয়ালকে বললো- যা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয়।
শিয়াল
ঘোড়ার কাছে গিয়ে বললো- ভাই কেমন আছেন?
ঘোড়া
চিন্তা করে- যে শিয়াল খ্যাক খ্যাক করা ছাড়া কোনো কথা বলে না- সে আজ এতো মধুর স্বরে
ডাকছে কেনো?
নিশ্চয়ই
কোনো বদ মতলব আছে।
ঘোড়া
শিয়ালের ডাকে সাড়া দেয় না।
শিয়াল
এবার ময়ুরীর কাছে গিয়ে বলে- আপুমনি, কেমন আছো? দেখতে খুবই
মিষ্টি লাগছে।
ময়ুরীও
বুঝতে পারে- শিয়ালের মুখে মিষ্টি বচন। নিশ্চয়ই লক্ষণ ভালো না।
সে ও
সাড়া দেয় না।
শিয়াল
এবার গাধার কাছে গিয়ে বললো- বাহ! তোমাকে খুবই হ্যান্ডসাম মনে হচ্ছে।
এরকম
হ্যান্ডসাম একটা প্রাণী, খেটে খেটে জীবনটা নষ্ট করে দিলে?।
তোমাকে
আর কষ্ট করতে হবে না।
রাজার
বয়স হয়ে গেছে। তিনি অবসরে যাবেন। আর তোমাকে রাজা বানাবেন।
চলো,
আমার সাথে সিংহাসনে চলো।
গাধা
খুব খুশি হয়। শিয়ালের সাথে সিংহাসনে আসে।
সিংহের
কাছে আসা মাত্রই সিংহের এক থাবায় গাধা তার কান দুটো হারায়।
কোনো
রকমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।
শিয়াল
আবার গাধার কাছে এসে বলে- এতো বোকা হলে রাজা হবে কিভাবে?
রাজা
তোমার মাথায় মুকুট পরাবে। কিন্তু দুপাশে দুটো কান থাকলে কি রাজমুকুট ঠিকমতো মাথায়
বসবে।
তাইতো
তোমার কান দুটো তুলে নেয়া হয়েছে।
কিছু বোঝোনা।
অবুঝ প্রাণী। এটাকে গ্রুমিং বলে।
চলো
চলো, আমার সাথে চলো। দেরি হলে অন্য কেউ আবার রাজা হয়ে যাবে।
গাধা
আবার সিংহের কাছে আসে। এবার সিংহের আরেক থাবায় তার লেজখানা খসে পড়ে। এবারও গাধা
পালিয়ে বাঁচে।
শিয়াল
যথারীতি গাধার কাছে এসে আবার বলে- আবারও ভুল করলে?
লেজ
থাকলে রাজ সিংহাসনে বসবে কিভাবে।
তাই
তোমার লেজটা খসানো হয়েছে।
অবুঝ
প্রাণী। দূরদর্শী চিন্তা করতেই পারো না।
এটা
হলো আল্ট্রা গ্রুমিং। মানে একেবারে ফাইনাল টাচ।
চলো
চলো, তাড়াতাড়ি সিংহাসনে চলো।
গাধা
আবারও সিংহাসনে আসে।
এবার
আর সে বাঁচতে পারে না।
সিংহের
থাবায় তার ক্ষত বিক্ষত দেহখানা মাটিতে পড়ে আছে।
সিংহের
দাঁতে মুখে রক্তের দাগ।
শিয়াল
এবার সিংহকে বলে- মহারাজ, এতো কষ্ট করে আপনি খাবেন।
মাথাটা
আমাকে দেন। সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে দেই।
শিয়াল
গাধার ব্রেনটুকু খেয়ে মাথার অবশিষ্ট অংশ সিংহকে দেয়।
সিংহ
বলে- ব্রেন কোথায়?
শিয়াল
বলে- মহারাজ, যে বারবার ধোকা খেয়েও আপনার কাছে এসেছে- আপনি কি মনে করেন তার ব্রেন
বলে কিছু আছে?
গাছের
ডালের উপর থেকে ময়ুর বলে-
তার
ব্রেন ঠিকই আছে। কিন্তু অতি সহজ সরল হওয়ায় প্রতারকদের বুঝতে পারেনি।
প্যাঁচা
তার সন্তানকে বলে - এই ঘটনা থেকে তোমরা কি শিখলে?
শিখলামঃ
হঠাৎ
করে কেউ যদি বড় আপন হয়ে ওঠে, বুঝতে হবে তার গোপন দূরভিসন্ধি আছে।
এটাও
শিখলাম- যার যে কাজ তাকে সেটাই করতে হয়। অন্যের কুমন্ত্রণা শুনতে হয় না।
লোভের
ফল কখনো মিষ্টি হয় না।
সাদাসিধা
হওয়া ভালো। কিন্তু বোকা হওয়া ভালো না।
সবচেয়ে
বড় যে জিনিসটা শিখলাম তা হলো-
প্রতারকদের
একবার বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু বারবার বিশ্বাস করা যায় না।
গাধা অতি
বিশ্বাস করে ঠকেছে। আর নিজের জীবন দিয়ে তার বিশ্বাসের মর্মন্তুদ পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
*একটা
তুর্কীয় গল্পের ভাবানুবাদ*
(সংগৃহীত)