হাদিস ছাড়া নামাজ পড়বেন কেমনে (পর্ব-৫)
দিনে ৫০ রাকাত নামাজ পড়লেও প্রতি রাকাত
একই রকম। সুতরাং এক রাকাতের বিস্তারিত নিয়ম পাওয়া গেলেই বিষয়টা সহজ হয়ে যেতো, যেমন;
· নামাজের নিয়তে
কেবলামুখী হয়ে কাঁধ বরাবর দুই হাত তুলে আল্লাহু আকবার বলে নাভীর নিচে হাত বাঁধা।।
· সুরা ফাতিহা
এবং নূন্যতম তিন আয়াত কুরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাওয়া।
· রুকুতে দাঁড়ানো
থেকে সামনে ঝুঁকে মাথা ও পিঠ সমান্তরালে রেখে দুই হাত দিয়ে দুই হাঁটু স্পর্শ করে ন্যূনতম
তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম তসবীহ পাঠ করা।
· সামিওয়াল্লাহ
হুলিমান হামিদা বলে উঠে দঁড়ানো।
· আল্লাহু আকবার
বলে সেজদায় যাওয়া।
· সেজদায় হাঁটু
গেড়ে বসে কপাল মাটিতে ছোঁইয়ানো এবং দুই হাতের তালু কান বরাবর মটিতে লাগানো। তারপর ন্যুনতম
তিনবার সুবহানা রাব্বিল আলা পড়ে তাকবির বলে উঠে বসে একইভাবে দিতীয় সেজদা করা।
· অতঃপর তাকবির
বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাওয়া।
· একইভাবে দ্বিতীয়
রাকাতে সেজদার পর্ব সেড়ে তাসাহুদ পড়া।
· শেষ রাকাতে
তাশাহুদ, দরুদ এবং দোয়া পড়ে ডানে বায়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। এইতো…
আর কোন নামাজ কতো রাকাত করে কখন পড়তে
হবেঃ
· সূর্যোদয়ের
আগে দুই রাকাত ফজর।
· মধ্যাহ্নে চার
রাকাত জোহর।
· বিকালে চার
রাকাত আসর
· সূর্যাস্তের
পর তিন রাকাত মাগরিব
· রাত গভীর হওয়ার
আগে চার রাকাত এশার নামাজ
এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে তাদের বেহেশত
নিশ্চিত, আর না পড়লে তাদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। নামাজের এটুকু বর্ণনা
দিলে যে কোনো মানুষ আপনাকে নামাজ পড়ে দেখিয়ে দিতে পারবে। পক্ষান্তরে কোনো অমুসলিমকে
বুখারী শরীফের সালাত অধ্যায়ের সবগুলো হাদিস ধরিয়ে দিলেও সে নামাজের কাঠামো সম্পর্কে
কোনো ধারণা দিতে পারবে না।
হাদিস অনুযায়ী রাসুল(সাঃ)-এর নামাজ মাতৃভাষায়
কোরআনের পাঠচক্র ছাড়া কিছুই নয়। তবে পছন্দমত হাদিস, হাদিসের সুবিধাজনক অংশ উপস্থাপন
এবং লক্ষাদিক জাল গল্প বানিয়ে শুধু নামাজ পড়া না পড়াকে পাপ পুণ্য বানানো হয়েছে।
নামাজ এবং নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণের
জনপ্রিয় ফজিলতের গল্পের সাথে হাদিসের উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নাই। মসজিদের জন্য অর্থ
সংগ্রহের বিজ্ঞাপনে একটা হাদিস বলা হয়, ‘যে ব্যাক্তি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তা'আলা
তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন’। কিন্তু যারা এ হাদিসটি বলে বেড়ান তারা সম্পূর্ণ
হাদীসটি জানেন না বা বলেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম মসজিদ সৌন্দর্যমন্ডিত
করতে নিষেধ করেছেন।
মসজিদে নববীর ছাদ ছিল খেজুর গাছের ডালের
তৈরি। খুঁটি ছিলো খেজুর গাছের। হযরত আবু বকর(রাঃ) এতে কিছু বাড়াননি। ওমর(রাঃ) কিছু
পরিবর্তন করে কাঠের খুঁটি লাগান। হযরত ওমর রাঃ মসজিদ সংস্কারের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘আমি
তোমাদেরকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে চাই।
(সহীহ বুখারী ইলামিক ফাউন্ডেশন হাদিস
নং-৪৩৩, আন্তর্জাতিক নং-৪৪৬:)
হযরত ওসমান(রাঃ) যখন মসজিদে নববী পাকা
করছিলেন, তিনি দেয়াল তৈরি করলেন নকশী পাথর ও চুন শুরকি দিয়ে, খুঁটি দেন নকশা করা
পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে। তখন সাহাবীদের বিরূপ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেন,
‘তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছো। অথচ আমি রাসূল(সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি
মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহতালা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করবেন।
এ হাদিস অনুযায়ী হযরত ওসমান(রাঃ) মসজিদে
নববী পকা ও সৌন্দর্যমন্ডিত করার উদ্যোগ নিলে সাহাবীরা প্রতিবাদ করেন। কারণ, নবীজী(সাঃ)
মসজিদ পাকা করেননি, বরং করতে নিষেধ করেছন। কিন্তু হযরত ওসমান(রাঃ) মসজিদে নববী সৌন্দর্যমন্ডিত
করলেন। কারণ নবীজি(সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহতালা তার জন্য
জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন’। অর্থাৎ যে যেমন মসজিদ নির্মাণ করবে বেহেস্তে তার ঘর
অনুরূপ হবে! তাহলে কি হযরত আবুবকর(রাঃ)’র ঘর হবে তার সময়ে মসজিদ যেমন ছিলো!
একাধিক বর্ণনা অনুযায়ী নবীজি(সাঃ) এবং
হযরত আবুবকর(রাঃ)’র প্রশাসনের সময় মসজিদে বৃষ্টির পানি পড়তো, মেঝে ছিলো বালুর যা
রোদে প্রচন্ড গরম হয়ে যেতো। আবার বৃষ্টি নামলে পানিতে কাদা হয়ে যেতো। মসজিদের ভিতর
দিয়ে কুকুর হাঁটতো। তাহলে কি মোহাম্মদ বিন সালমান বা দুবাইয়ের শেখদের জন্য বেহেশতে
রাজপ্রাসাদ বানানো হবে? কারণ তারা প্রাসাদপম মসজিদ বানাচ্ছেন। আর হযরত আবুবকর(রাঃ)’
দুনিয়াতেও বৃষ্টিতে ভিজলেন, বেহেশতেও ওনার জন্য অনুরূপ একটি ঘর বানানো হবে? নিচের
হাদিসটি দেখুনঃ
নামাজের জন্য মসজিদ নির্মাণে দান করার
নির্দেশ কোরআনে তো নাই-ই, কোনো হাদিসেও নাই। কিন্তু পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতীম,
অভাবী, মুসাফিরকে দানের কথা বলা হয়েছে কোরআন হাদিসের পাতায় পাতায়। মসজিদে দান করলে
যতোদিন মানুষ সে মসজিদে সালাত আদায় করবে মসজিদের নির্মাতা বা দাতা ততোদিন পূণ্য পেতে
থাকবে - এগুলো হচ্ছে ‘সহীহ আজগুবি শরীফে’র হাদিস।
প্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী কল্যাণকর জ্ঞান
শিক্ষা দেয়া বা সম্প্রসারণ করা যা থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষ উপকৃত হবে, সৎকর্মপরায়ন
সন্তান অর্থাৎ সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, কুপ খনন করা যা থেকে মানুষ এবং
পশু পাখি পানি পান করবে, সেচের জন্য খাল খনন করা, বৃক্ষরোপণ করা যা থেকে পরবর্তীতে
মানুষ উপকৃত হবে, অসহায় পথিকের জন্য আশ্রয়স্থল নির্মাণ করা- এসব কাজ হলো মরনোত্তর
পুন্যের কাজ।
মসজিদ নির্মাণ করা পূণ্যের কাজ হতে পারে
যদি তা মসজিদে নববীর মতো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের
জন্য বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ কোরআন এবং হাদিস সম্মত নয়। নবীজি(সাঃ) সালাতের সময়
যেখানে থাকতেন সেখানেই সালাত আদায় করতেন। তিনি ছাগল ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত আদায় করতেন।
অর্থাৎ শুধু নামাজের জন্য আলাদা ঘর বানানো অপ্রয়োজনীয়।
সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাদিস নং ৪১৬, আন্তর্জাতিক
নং ৪২৮:
নবীজি(সাঃ) বলেছেন, সমস্ত জমিন আমার
জন্য পবিত্র ও সালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোনো লোক
যেখানেই
থাকুক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায় করতে পারবে।
নামাজের স্থান এবং অঙ্গভঙ্গি নয়, গুরুত্বপূর্ণ
হচ্ছে কোরআন পাঠ। একজন মুসলমান কোরআনকে তার জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিশ্বাস করে।
প্রতিদিন নিয়মিত বিরতিতে কোরআন পড়া বা শোনায় কোরআন ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক
সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও মহাজাগতিক জীবনে জীবন্ত হয়ে উঠবে। কিন্তু কোরআনের একটি শব্দের
অর্থ না বুঝে আমরা মুখস্ত যে নামাজ পড়ি তার সাথে সালাতের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কোন সম্পর্ক
নেই। কোরআন এবং হাদিসে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে কোরআনের অর্থ না বুঝলেও তা পড়া বা শোনায়
কোন পূণ্য আছে। পড়া বা শোনা এ শব্দ দুটির মধ্যে অর্থ বোঝার বাধ্যবাধকতা আছে। অর্থ না
বুঝতে পারলে নামাজের কাছে আসতেও নিষেধ করা হয়েছে কোরআনে।
“হে মুমিনগন! নেশাগ্রস্থ অবস্থায় সালাতের কাছেও যেওনা, যখন নিজের উচ্চারিত বাক্যের অর্থ নিজেই বুঝতে সক্ষম নও।-(৪:৪৩)” (চলবে......)
(ইন্টারনেট অবলম্বনে)