যে গানে সন্ধ্যার পরিবর্তে গীতা দত্তকে নিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপ্যাধ্যায়

 
গীতা দত্ত ও সন্ধ্যা মুখোপ্যাধ্যায়


বিস্ময়মিশ্রিত কণ্ঠ! হতবাক চাহনি। গীতা দত্তের প্রতিভার প্রতি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অটুট আস্থা। দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, “তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার” গানটা গীতার মতো করে ভারতবর্ষের আর কেউ গাইতে পারবে না।

 

গীতা দত্ত নামটা শুনলেই শ্রোতাদের মনে আসে অসামান্য জনপ্রিয় কিছু গানের কথা। “তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার”, “নিশিরাত বাঁকা চাঁদ আকাশে”, “ঝনক ঝনক কনক কাঁকন বাজে”, “কে ডাকে আমায়”, “এই মায়াবী তিথি”, “এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়, একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু, কোন রক্তিম পলাশের স্বপ্ন, মোর অন্তরে ছড়ালে গো বন্ধু” গানগুলি।

 

সংশয়ের দোলাচলের স্পষ্ট লক্ষন উত্তমকুমারের মনে। বললেন, শুনেই দেখি গানটা কেমন দাঁড়ায়। ভালো না লাগলে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে দেবো। শেষ পর্যন্ত গানের জগতে কার্যত ইতিহাস তৈরি হলো। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সার্থক দূরদৃষ্টিতে গীতা দত্তের গাওয়া “তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার” গানটি সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।

 

গীতা দত্ত একটি অবিস্মরণীয় প্রতিভার নাম। মাত্র ১৫ বছর বয়সে হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। অপূর্ব দুটি চোখ আর শ্যামলা সৌন্দর্য- ছবিতে অভিনয়ের অফার এনে দেয়। তবে বাঙালি গীতা নায়িকা হয়েছেন অনেক পরে, যখন গুরু দত্ত’কে বিয়ে করলেন।

 

সেরা নেপথ্য গায়িকার স্বীকৃতি লতা মঙ্গেশকরেরও আগে পেয়েছেন গীতা দত্ত। তিনিই ছিলেন সেই সময়ে তামাম ভারতের সুপারস্টার মহিলা শিল্পী।

 

গুরু দত্তকে প্রাণভরে ভালবেসেছেন। বিয়ের কিছুদিন পরেই গুরু দত্ত নিজের হোম প্রোডাকশন ছাড়া স্ত্রীর অন্যত্র গাওয়া নিষিদ্ধ করলেন। গীতার গলায় তখন যৌবনের ফাগুন। সে অবস্থাতেও যেমন কিছু অসামান্য গান উপহার দিয়েছেন বাঙালি কন্যা, ঠিক তেমনই হারিয়েছেন বেশ কিছু সুযোগও। অনেকে মনে করেন, গীতা দত্তের যে বিভিন্ন ধরনের গান করার সাবলীল ক্ষমতা ছিল, এর ফলে তা অনেকটাই ধাক্কা খায়।


একসময়ে গুরু-গীতার ভুল বোঝাবুঝির ফলে সন্দেহের কালো মেঘ জমতে থাকে তাদের জীবনে। অনেক গসিপ বাজারে চালু হয়েছে। অনেকেই অনেক কথা শুনছেন। গুরু দত্ত ছবি করায় মন বসাতে পারছেন না। অন্যদিকে সুরকারদের ধৈর্য ভাঙছে। গীতা দত্ত রিহার্সেলে আসছেনই না।

 

গুরু দত্তের আত্মহত্যার পরে গীতাও যেন নিজেকে আত্মহননের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ যেন গীতার দুর্ভাগ্য! কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারেন না। মাঝেমধ্যে প্লেব্যাক করেন, অনুষ্ঠানও করতেন। তবে সব যেন পরিকল্পনাহীন, এলোমেলো।

 

সে সময়ই ধরা পড়লো গীতার 'সিরোসিস অব লিভার। শেষের দিনগুলি অসহ্য যন্ত্রণায় কাটতো। নাকে-মুখে নল গোঁজা। কখনও কান বা নাক দিয়ে রক্ত বেরোতো। বেশিরভাগ সময়ই বেহুঁশ থাকতেন। শেষ পর্যন্ত এলোমেলো বিশৃঙ্খল জীবন কাটিয়ে একদিন পরপারে চলে গেলেন গীতা দত্ত। বয়স তখন মাত্র ৪২ বছর। তবে গানপ্রিয় মানুষের কাছে অনাদিকাল অমর হয়ে থাকবেন তিনি।

 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url