দুর্নীতি বিরোধী অভিযান-বনাম-কোটা আন্দোলন

 



বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলো বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তা। তবে হত্যাকান্ডের পর তখনকার সিভিল প্রশাসন, সুশীল সমাজ, পুঁজিবাদী শ্রেণী- এরাও টু শব্দটি করেনি। একেবারেই নিরব ছিলো। নিরব থাকা মানে মৌন সমর্থন।

 

বঙ্গবন্ধুর নীতি ছিলো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণ। তাতে দুর্নীতিবাজ আর পুঁজিবাদী শ্রেণী দুর্ভাবনায় পড়েছিলো।

দেশি-বিদেশি চক্রান্ত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে সমর্থ হয়। দীর্ঘ ২১ বছর এবং পরে ৫ বছর গ্যাপ দিয়ে আরো ৫ বছর মোট ২৬ বছর দেশ ছিলো পাকিস্তানের অংগরাজ্য! অথচ সাতচল্লিশে দেশভাগের পর তারও কম সময়ে অর্থাৎ ২৩ বছরের মাথায় দেশকে পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে মুক্ত করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

·        দূর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান

·        এককভাবে ২৫ বিঘার বেশি জমির মালিকানা না থাকা

·        সমবায়ের মাধ্যমে চাষাবাদ করে সমাজের  পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে স্বাবলম্বী করা

·        কল কারখানায় শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা – ইত্যাদি

 

এ সবই ছিলো দুর্নীতিবাজ তথা পুঁজিবাদী শ্রেণির জন্য কঠোর সতর্কবার্তা। ফলে যা হবার তাই হলো!!

 

এবারও ধারণা করি একই অবস্থার পূনরাবৃত্তি ঘটেছে। যখন থেকে মোটাদাগের দুর্নীতিবাজদের ধরা শুরু হয়েছে, তাদের আমলনামা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, পলাতক ও ছদ্দবেশী দুর্নীতিবাজরা নিজেসদের রক্ষা করার জন্য রাজনৈতিক মতাদর্শ পাল্টিয়ে পূর্ব থেকে পালিয়ে থাকা বিদেশে অবস্থানরত দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের সাথে হাত মিলিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়ার নীলনকশা তৈরি করেছে।

 

ঠুনকো একটা ইস্যু, যার কোনো ভিত্তিই নেই। কারণ সরকার ২০১৮ সালে যে কোটা প্রথা বাতিল করেছে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার ৭ সন্তান সংক্ষুদ্ধ হয়ে হাইকোর্টে রীট করে। সেই রীটের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেও সরকার আপীল করে। অর্থাৎ সরকার কোটা বাতিলই চেয়েছিলো, যা স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনকারীদের অনুকুলে ছিলো। তাই সাধারণ ছাত্ররা দেশে এমন তান্ডব চালিয়েছে বলে বিশ্বাস করার সুযোগ নাই। তাদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্তরা এই নীলনকশা বাস্তবায়নের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে।

 

শুধু বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন দুর্নীতিবাজ দ্বারা দেশে এতোবড় তান্ডব ঘটানো সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করিনা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধরা পরার আশংকা আছে দেশে অবস্থানরত এমন আরো অসংখ্য দুর্নীতিবাজ। তবে কাজটি ঘটিয়েছে বিদেশে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির তথাকথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্র ব্যবহার করে। এতে অবশ্যই মদদ ছিলো পদে পদে উপেক্ষিত, অপমানিত পরাজিত বিদেশী শক্তির। 

 

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকেই লক্ষ্য করছি, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, টিকটকে শুধু সরকার বিরোধী গুজব। চীন সফর শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে কোটা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করে গুজব ছড়িয়ে কোটা আন্দোলনে অংশগ্রহণরত ছাত্রদের উত্তপ্ত করা হয়। 

 

প্রথমে কিন্ত ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলো। তারমধ্যে ঢুকে পড়ে সুযোগ সন্ধানীদের লেলিয়ে দেয়া ছাত্র-অছাত্র দুর্বৃত্ত। শুরু হয়ে যায় কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে মূলতঃ সরকার বিরোধী আন্দোলন। সরকারের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সেতু ভবনে হামলা করে ৩ তলা পর্যন্ত ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন জিনিষপত্র লুট করা হয়। সেতু ভবনের পার্কিং-এ দন্ডায়মান ৫৫টি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

 

মেট্রোরেলের ৪টি ষ্টেশনের ব্যপক ক্ষতিসাধন করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের কিয়দংশ জ্বালিয়ে দেয়া হয়, বংগবন্ধু কর্ণার ভাংচুর করা হয়। অর্থাৎ আক্রোশটা স্বাধীনতা ও মুক্তি উন্নয়নের বিরুদ্ধে। ভাবটা এমন, “কেনো দেশে এতো উন্নয়ন করে আমাদেরকে জনগণের রোষানলে ফেলে দিলে”!

 

আন্দোলনের অন্তরালে ব্যপকভাবে অংশগ্রহণ বা অনুপ্রবেশ পরিলক্ষিত হয় জামাত-শিবির তথা ধর্মান্ধ শ্রেণির। ঢাকা শহরে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যেসব এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদ্রাসা এবং এতিমখানার নামে হাফেজী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে সেসব এলাকায় তুলনামূলক বেশি গন্ডগোল হয়েছে। তাদেরকে হয় ব্যবহার করা হয়েছে, অথবা তারা স্বভাবসুলভ চরিত্র অনুযায়ী স্বপ্রনোদিত হয়েই নাশকতায় অংশগ্রহণ করেছে।

 

বঙ্গবন্ধু ধর্মান্ধ, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের মোটেও প্রশ্রয় দিতেন না। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েই এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু তার কন্যা কাদের পরামর্শে তাদেরকে কাছে টানার, আস্থা অর্জনের এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলেন, তাতে কি ধর্মের তথা দেশ ও জাতির কল্যান হয়েছে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। কথায় আছে,”কুকুরের লেজ যতোই চেষ্টা করা হোক সোজা হয় না”। তেমনি ধর্ম ব্যবসায়ীদের যতোই সুপথে আনার চেষ্টা করা হোক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রে ধর্ম ব্যবসায়ীরা কোনোদিন প্রগতির পথে হাঁটবে না। তাদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে যে!

এমনিতেই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে ধর্ম ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা। কারণ কারো কোরআন-হাদিসের ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। কোরআন-হাদিস এখন সবার হাতের মুঠোয়। টিপ দিলেই সব বেরিয়ে আসে।

 

অপরদিকে এবারেরর নির্বাচনের সময় দেশি-বিদেশী চক্রান্তের মুখোশ খুলে যায়। নানা চক্রান্তের জাল বিস্তার করেও যখন নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি- নির্বাচনের পর পরাজিত স্বড়যন্ত্রকারীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। সুযোগ পেলেই তারা দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কারণ পরাজয়ের গ্লানি সহজে মুছে যায় না।

 

তাই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি রাজনীতিবিদদের কথা বলার সময় শব্দ চয়নে সতর্ক থাকতে হবে। বাগাড়ম্বরপূর্ণ বেফাঁস কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে- যা নিয়ে বিরোধীরা মাঠ গরম করতে পারে। যুবক শ্রেণীর মানসিক উন্নয়ন তথা মানব উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

 

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশে চিরজীবি হোক।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url