কোরআনের দোয়া
আল্লাহকে ডাকা বা সাহায্য প্রার্থনার কথা কোরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন। আমরা যে সালাত আদায় করি তা মূলতঃ দোয়া বা প্রার্থনা।
দোয়ার অসংখ্য বই পাওয়া যায় বাজারে যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন আরবী লেখা ও তার কল্পিত ফজিলতের বর্ণনা। এই দোয়া পড়লে বা অমুক নামাজ পড়লে বেহেস্তে আপনার জন্য একটি খেজুর গাছ লাগানো হবে। একটি তেজী ঘোড়া ৫০০ বছর দৌড়ালেও সেই খেজুর গাছের ছায়া শেষ হবে না। ভালো কথা! তো সে খেজুর গাছের খেজুর পারবেন কিভাবে!
আরো অনেক কথিত দোয়ার বই পাওয়া যায়। সেগুলোর সূত্র প্রসিদ্ধ, কিন্তু নিশ্চিত না। নবীজি(সাঃ) এমন দোয়া করেছেন বলে কথিত আছে, কিন্তু আমরা জানি না। এই দোয়া পড়লে বেহেস্তের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, ওই দোয়া পড়লে শহীদের মর্যাদা মিলবে এমন অনেক ফজিলত সম্বলিত দোয়া আছে সেসব বইয়ে। আরেকজন এসে বলবে, ‘এই হাদিস জাল, এই রাবী মিথ্যুক! সুতরাং এই দোয়া পড়া বেদআত’!
এবার সাত সমুদ্র তের নদী সেচে এসব দোয়ার দলিলপত্র বের করো। আপনি আমি তো দূরের কথা, সর্বকালের সেরা মুহাদ্দিস, ইমামরাই হাদিসের তালিকা প্রণয়নে একমত হতে পারেননি।
আমরা বেশিরভাগ মানুষই বেশিরভাগ সময়ে এমন কিছু চাই, যে বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। বিভিন্ন দোয়ার বই থেকে এসব দোয়া মুখস্ত করে বুঝে বা না বুঝে সকাল বিকাল পড়ি।কোরআনের সবচেয়ে উত্তম দোয়া সুরা ফাতিহা যা আমরা প্রতি রাকাত নামাজে পড়ি। এছাড়া আল্লাহ বিভিন্ন নবী রাসুলদের দোয়া কোরআনে বর্ণনা করেছেন। এ দোয়াগুলো নবী রাসুলরা করেছেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা করেছেন এবং আল্লাহ এই দোয়াগুলো পছন্দ করেছেন, কবুল করেছেন।
হযরত নূহ(আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন যে বিষয়ে তার জ্ঞান নেই তা প্রার্থনা না করেন। সূরা হুদ এর ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন নূহ আঃ এর দোয়াঃ
“রাব্বী ইন্নী আউজুবিকা আন আসআলাকা মা নাইছা-লী বিহি ঈলম, ওয়া ইল্লা তাগফিরলী ওয়া তারহামনী আকুম মিনাল খাছেররীন”-(১১:৪৭)
(সে বললোঃ হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো)।
তাহলে কি চাইতে হবে? কি চাওয়া উচিৎ এবং কি আমাদের জন্য কল্যাণকর তা আমরা জানি না। তাই আল্লাহ আমাদের যেভাবে শিখিয়েছেন, আল্লাহর প্রিয় বান্দারা যেভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন সেভাবেই চাইবো।
সূরা মুমিনুল আয়াতঃ ৯৭-৯৮
“রাব্বি আ‘ঊযুবিকা মিন হামাঝা-তিশশাইয়া-তীন। ওয়া আ‘ঊযুবিকা রাব্বি আইঁ ইয়াহদু রূন”(২৩:৯৭-৯৮)।
(হে আমার রাব্ব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শাইতানের প্ররোচনা হতে। হে আমার রাব্ব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট ওদের উপস্থিতি হতে)।
কিন্তু আমরা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বলছি। কেনো বলছি, কে জানে? আল্লাহর আয়াত এর চেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস কোনটা? কিন্তু এই দোয়া পড়লে আপনি আহলে কোরআন! মোতাজিলা!
আল্লাহ যে দোয়াগুলো নবী-রাসুলদের শিখিয়েছেন সেই দোয়াগুলোই আমরা শিখবো। আমি বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অর্থ উল্লেখ করছি। ইন্টারনেটে বড় বড় কারীদের তেলাওয়াত আছে, তাছাড়া আজকাল অনেকের সংগ্রহেই বাংলা কোরআন শরীফ আছে- মিলিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন।
সূরা বাকারা আয়াত-২০১
“…রাব্বানাআ-তিনা-ফিদ্দুনইয়া-হাছানাতাওঁ ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাছানাতাওঁ ওয়া কিনা-‘আযা-বান্না-র”-(২:২০১)।
(হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন আর আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন)।
সুরা বাকারা আয়াত-২৮৬
আয়াতের শুরুতে আল্লাহ ভূমিকা বা দোয়ার দৃশ্যপট বুঝিয়ে দিচ্ছেনঃ
“কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেননা; সে যা উপার্জন করেছে তা তারই জন্য এবং যা সে অর্জন করেছে তা তারই উপর বর্তাবে”- (২:২৮৬)।
এরপর আল্লাহ দোয়া শিখিয়ে দিচ্ছেনঃ
“রাব্বানা-লা-তুআ-খিযনা ইন নাছীনা-আও আখতা’না-রাব্বানা ওয়ালা-তাহমিল ‘আলাইনা-ইসরান কামা-হামালতাহূ আলাল্লাযীনা মিন কাবলিনা-রাব্বানা-ওয়ালা তুহাম্মিলনা-মা-লা-তা-কাতা লানা-বিহী ওয়া‘ফু‘আন্না-ওয়াগফিরলানা-ওয়ারহামনা- আনতা মাওলা-না-ফানসুরনা-‘আলাল কাওমিল কা-ফিরীন”।
(হে আমাদের রাব্ব! আমরা যদি ভুলে যাই অথবা ভুল করি সেজন্য আমাদেরকে অপরাধী করবেননা। হে আমাদের রাব্ব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেরূপ গুরুভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের উপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেননা। হে আমাদের রাব্ব! যা আমাদের শক্তির বাইরে ঐরূপ ভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেননা এবং আমাদের পাপ মোচন করুন ও আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে দয়া করুন, আপনিই আমাদের আশ্রয়দাতা! অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন”- (২:২৮৬)।
সুরা আল-ইমরান আয়াত-৮
“রাব্বানা-লা-তুঝিগ কুলূবানা-বা‘দা ইয হাদাইতানা -ওয়াহাবলানা-মিল্লা দুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহা-ব”।
(হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে পথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার নিকট হতে করুণা প্রদান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রভূত প্রদানকারী-(৩:৮)।
সূরা আল-ইমরান আয়াত-৫৩
“রাব্বানাআ-মান্নাবিমাআনঝালতা ওয়াত্তবা‘নার রাছূলা ফাকতুবনা-মা‘আশশা-হিদীন”- (৩:৫৩)।
(হে আমাদের রব আপনি যা নাজিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি অতএব আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন)।
হযরত জাকারিয়া(আঃ) এর দোয়া। যারা সন্তান চান তাদের জন্য সবচেয়ে যথাযথ দোয়াঃ
সূরা আল-ইমরান আয়াত-৩৮
"রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বয়্যিবাতান, ইন্নাকা সামিউদ দোয়া"-(3:38)
(তখন জাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিলো, সে বলেছিলোঃ হে আমার রব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী”-(৩:৩৮)।
সূরা আল-ইমরানের ১৫ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদেরকে, যারা বলেঃ
“রাব্বানা ইন্নানা আ মান্না ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়াকিনা আযাবান্না-র”-(৩:১৬)
(হে আমাদের রাব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আগুনের শাস্তি হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন)
অর্থাৎ যারা এই দোয়া পড়বে তারা জান্নাতে যাবে, তবে শর্ত প্রযোজ্য। কি শর্ত? ‘যাদের দাড়ি আছে, কপালে নামাজের দাগ আছে, সৌদি জুব্বা পরেন, হিজাব পরেন এবং দাওরায়ে হাদিসের ডিগ্রী আছে- তারা!’ দুঃখিত!!
বিষয়টি পরের আয়াতেই আল্লাহ স্পষ্ট করেছেনঃ
“আসসা-বিরীনা ওয়াসসা-দিকীনা ওয়াল কা-নিতীনা ওয়াল মুনফিকীনা ওয়াল মুছতাগফিরীনা বিলআছহা-র-(৩:১৭)।
(যারা ধৈর্যশীল, যারা সত্যবাদী এবং আল্লাহর ইবাদতে আন্তরিকভাবে আনুগত্যকারী। যারা দানশীল এবং যারা রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে)।
সূরা নিসা আয়াত-৭৫
“রাব্বানা-আখরিজনা-মিন হাযিহিল কারইয়াতিজ্জা-লিমি আহলুহা- ওয়াজ‘আল লানা- মিল্লাদুনকা ওয়ালিইইয়াওঁ ওয়াজ‘আল লানা-মিল্লাদুনকা নাসীরা”-(৪:৭৫)।
(হে আমাদের রব আমাদেরকে বের করুন এই জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী)
নির্যাতিত জনপদের মানুষের জন্য দোয়া। এখানে আল্লাহ নির্যাতিত জনপদের মানুষের মুক্তির জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নির্যাতিত জনপদের মানুষদের শিখিয়েছেন কিভাবে জালেম শাসকদের জুলুম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতে হবে।
সূরা আল ইমরান আয়াত নম্বর-১৯১
আল্লাহ এখানে জিকিরের নিয়ম ও প্রকৃতির রহস্য নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন। যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে দাঁড়িয়ে, বসে, কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং বলেঃ
“রাব্বানা-মা-খালাকতা হাযা-বা-তিলান ছুবহা-নাকা ফাকিনা-‘আযা-বান্না-র”-(৩:১৯১)
(হে আমাদের রব আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি; আপনি পবিত্র মহান! অতএব, আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন)।
সূরা আল-ইমরান আয়াত-১৯৪
“রাব্বানা-ওয়া আ-তিনা-মা-ওয়া-‘আত্তানা-‘আলা-রুছুলিকা ওয়ালা-তুখঝিনা-ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী‘আ-দ”-(৩:১৯৪)।
(হে আমাদের রাব্ব! আপনি স্বীয় রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদের সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা দান করুন এবং উত্থান দিবসে আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেননা। নিশ্চয়ই আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেননা)।
সুরা আল-ইমরান: আয়াত-১৪৭
“রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইছরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদা মানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।“(৩:১৪৭)
(হে আমাদের রাব্ব! আমাদের অপরাধ ও আমাদের কাজের বাড়াবাড়ি হেতু কৃত অন্যায়সমূহ ক্ষমা করুন, আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন)।
সূরা আরাফ আয়াত-১২৬
“রাব্বানা-আফরিগ ‘আলাইনা-সাবরাওঁ ওয়াতাওয়াফফানা-মুছলিমীন”-(৭:১২৬)।
(হে আমাদের রব আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন)।
হযরত আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ) শয়তানের কুমন্ত্রণায় আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে যখন আল্লাহর বিরাগ-ভাজন হলেন তখন তারা ক্ষমা ও অনুগ্রহের জন্য কি দোয়া করলেন? আল্লাহ বলছেনঃ
সূরা আরাফ আয়াত-২৩
“কা-লা রাব্বানা-জালামনা আনফুছানা-ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা-ওয়া তারহামনা- লানাকূনান্না মিনাল খা-ছিরীন”-(৭:২৩)।
(তারা বললঃ হে আমাদের রাব্ব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বো)।
যে দোয়ায় আল্লাহ হযরত আদম(আঃ) ও হাওয়া(আঃ)কে ক্ষমা করেছেন সে দোয়া আল্লাহ আমাদের শিখিয়ে দিলেন আর আমরা নূরানী অজিফা, মাশরুম দোয়ার বই কিনি!
হযরত মুসা(আঃ) তার সম্প্রদায়কে যে দোয়া শিখিয়েছেন আল্লাহ কোরআনে তা উল্লেখ করেছেন।
সূরা ইউনুস আয়াতঃ ৮৫ ও ৮৬
ফাকা-লূ‘আলাল্লা-হি তাওয়াক্কালনা- রাব্বানা-লা-তাজ‘আলনা-ফিতনাতাল লিলকাওমিজ্জা-লিমীন। ওয়া নাজজিনা-বিরাহমাতিকা মিনাল কাওমিল কা-ফিরীন”- (১০:৮৫-৮৬)।
(তারা বললঃ আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে এই যালিমদের লক্ষ্যস্থল বানাবেননা। আর আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে এই কাফিরদের (কবল) হতে মুক্তি দিন)।
ইব্রাহিম(আঃ) আল্লাহর কাছে কি দোয়া করতেন আল্লাহ বলে দিয়েছেন।
সুরা মুমতাহানা আয়াতঃ ৪ ও ৫
“রাব্বানা আলাইকা তাওয়াক্কালনা ওয়া ইলাইকা আনাবনা-ওয়া ইলাইকাল মাসীস”- (৬০:৪)। রাব্বানা-লা-তাজ‘আলনা-ফিতনাতালিলল্লাযীনা কাফারূওয়াগফিরলানা-রাব্বানা- ইন্নাকা আনতাল ‘আঝীঝুল হাকীম”-(৬০:৫)।
(হে আমাদের রাববঃ আমরাতো আপনারই উপর নির্ভর করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তনতো আপনারই নিকট(৬০:৪)। হে আমাদের রাব্ব আপনি আমাদেরকে কাফিরদের পীড়নের পাত্র করবেননা, হে আমাদের রাব্ব! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন! আপনিতো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়(৬০:৫)।
ইব্রাহিম(আঃ)’র আরো দোয়া আছে সূরা আশ-শুয়ারা আয়াত ৮৩ থেকে ৮৫:
“রাব্বি হাবলী হুকমাওঁ ওয়া আল হিকনী বিসসা-লিহীন(২৬:৮৩)। ওয়াজ‘আললী লিছা- না সিদকিন ফিল আ-খিরীন(২৬:৮৪)। ওয়াজ‘আলনী মিওঁ ওয়ারাছাতি জান্নাতিন না‘ঈম(২৬:৮৫)।
(হে আমার রাব্ব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎ কর্মপরায়ণদের সাথে আমাকে মিলিত করুন(২৬:৮৩)। আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী করুন(২৬:৮৪)! এবং আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন(২৬:৮৫)।
এর চেয়ে সুন্দর তাৎপর্যপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য দোয়া আর কি হতে পারে? হযরত ইব্রাহীম(আঃ) এই দোয়া করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তা বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহর আরশের ফেরেশতারা কি তসবিহ পাঠ করে এবং আমাদের জন্য কি দোয়া করে তাও আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
সূরা আল-মুমিন আয়াত ৭ এবং ৮ এ আল্লাহ বলেছেনঃ
‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চতুস্পার্শ্ব ঘিরে আছে তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে(আয়াতের অংশ)’:
“রাব্বানা-ওয়াছি‘তা কুল্লা শাইয়িররাহমাতাওঁ ওয়া ‘ইলমান ফাগফির লিল্লাযীনা তা- বূওয়াত্তাবা‘ঊ ছাবীলাকা ওয়াকিহিম ‘আযা-বাল জাহীম(৪০:৭)। রাব্বানা-ওয়া আদখিলহুম জান্না-তি ‘আদনি নিল্লাতী ওয়া ‘আত্তাহুম ওয়া মান সালাহা মিন আবাইহিম ওয়া আঝওয়া- জিহিম ওয়া যুররিইয়া-তিহিম ইন্নাকা আনতাল ‘আঝীঝুল হাকীম(৪০”৮)"
(হে আমাদের রাব্ব! আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, অতএব যারা তাওবাহ করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন(৪০:৭)। হে আমাদের রাব্ব! আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের মাতা-পিতা, পতি-পত্নী ও সন্তান- সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কাজ করেছে তাদেরকেও। আপনিতো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়(৪০ঃ৮)।
হযরত সোলাইমান(আঃ) আল্লাহর কাছে কি দোয়া করেছেন?
সূরা নমল আয়াত-১৯
“রাব্বি আওঝি‘নীআন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতীআন‘আমতা ‘আলাইইয়া ওয়া ‘আলা- ওয়া-লিদাইইয়া ওয়াআন আ‘মালা সালিহান তারদা-হু ওয়া আদখিলনী বিরাহমাতিকা ফী ‘ইবাদিকাসসা-লিহীন(২৭:১৯)।
(হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তজ্জন্য এবং যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন(২৭:১৯)।
কি চমৎকার দোয়া। এটা সুলাইমান(আঃ)-এর হাদিস। রাবি স্বয়ং আল্লাহ। হাদিসের মান শতভাগ সহিহ। সুলাইমান(আঃ)-এর দোয়া আল্লাহর বিশেষ পছন্দ হয়েছে তাই তিনি এই দোয়া কোরআনে উল্লেখ করেছেন। আমাদের কি এরচেয়ে উন্নতমানের দোয়া লাগবে? আল্লাহ যদি জিজ্ঞেস করে আমার নবী রাসুলরা যে দোয়া করলো সেই দোয়া না করে তোমাদের মুরুব্বীদের বানানো দোয়া কেনো করলে? কি জবাব দেবেন?
হযরত মুসা(আঃ) আল্লাহর কাছে কি দোয়া করেছেন?:
সূরা কাসাস আয়াত-১৬
“রাব্বি ইন্নী জালামতুনাফছী ফাগফিরলী ফাগাফারা লাহূ ইন্নাহূহুওয়াল গাফূরুর রাহীম(২৮:১৬)”।
(হে আমার রাব্ব! আমিতো আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনিতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু(২৮:১৬)।
সূরা ফুরকান আয়াত-৬৫
“রাব্বানা আসরিফ ‘আন্না-‘আযা-বা জাহান্নামা ইন্না ‘আযা-বাহাকা-না গারা-মা-(২৫:৬৫)।
(হে আমাদের রাব্ব! আমাদের হতে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; ওর শাস্তিতো নিশ্চিত বিনাশ(২৫:৬৫)।
সুরা ফুরকান আয়াত-৭৪
“রাব্বানা-হাবলানা-মিন আঝওয়া-জিনা-ওয়া যুররিইইয়া-তিনা কুররাতা আ‘ইউনিওঁ ওয়াজ‘আলনা-লিলমুত্তাকীনা ইমা-মা-(২৫:৭৪)।
(হে আমাদের রাব্ব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শ স্বরূপ করুন)।
সুরা মুমিনুল আয়াত-১০৯
“রাব্বানা আ-মান্না-ফাগফিরলানাওয়ারহামনা-ওয়াআনতা খাইরুর রা-হিমীন(২৩:১০৯)।
(হে আমাদের রাব্ব! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের উপর দয়া করুন, আপনিতো দয়ালুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু)।
সুরা আল-আম্বিয়া আয়াত-৮৩। আইউব(আঃ)-এর দোয়াঃ
আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, আইউব(আঃ) যখন দুঃখকষ্টে পড়েন তখন আল্লাহর কাছে কি দোয়া করেনঃ
"রাব্বাহূআন্নী মাছছানিয়াদদু ররু ওয়া আনতা আরহামুররা-হিমীন"।
(আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা, যখন সে তার রাব্বকে আহবান করে বলেছিলঃ আমি দুঃখ কষ্টে পতিত হয়েছি, আপনিতো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু)।
ঠিক তার পরের আয়াতেই আল্লাহ বলছেনঃ
"তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার পরিজন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তাদের সাথে তাদের মত আরও দিয়েছিলাম আমার বিশেষ রাহমাত রূপে এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ"-(২১ঃ৮৪)"।
ইউনুস(আঃ)-এর দোয়া - সুরা আল আম্বিয়া আয়াত ৮৭
ইউনুস(আঃ) দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিলে তিনি মাছের পেটে বন্দি হন। এ অবস্থায় বিপদে পড়ে তিনি মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া পড়েনঃ
“লা-ইলা-হা ইল্লাআনতা ছুবহা-নাকা ইন্নী কুনতুমিনাজ্জালিমীন(২১:৮৭)"।
(আপনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই; আপনি পবিত্র, মহান; আমিতো সীমালংঘনকারী)।
এর পরের আয়াতে আল্লাহ বলেছেনঃ “অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি(২১ঃ৮৮)। আল্লাহ দোয়াও বলে দিয়েছেন, দোয়ার ফজিলতও বলে দিয়েছেন।
হযরত জাকারিয়া(আঃ)-এর যে দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন এবং পুত্র সন্তান ইয়াহিয়াকে দান করলেনঃ
সুরা আল-আম্বিয়া আয়াত-৮৯
“রারাব্বি লা-তাযারনী ফারদাওঁ ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিছীন(২১:৮৯)"।
(হে আমার রব আমাকে একা রেখো না, তুমি তো চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী)।
নবীজি(সাঃ)কে আল্লাহ যে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন মদিনায় হিজরতের সময়ঃ
সূরা বনি ইসরাইল আয়াত-৮০
“রাব্বি আদখিলনী মুদ খালা সিদকিওঁ ওয়া আখরিজনী মুখরাজা সিদকিওঁ ওয়াজ‘আলনী মিল্লাদুনকা ছুলতা-নান নাসীরা-(১৭:৮০)।
(হে আমার রাব্ব! যেখানে গমন শুভ ও সন্তোষজনক আপনি আমাকে সেখানে নিয়ে যান এবং যেখান হতে নির্গমন শুভ ও সন্তোষজনক সেখান হতে আমাকে বের করে নিন এবং আপনার নিকট হতে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি)।
সূরা ত্বাহার ২৫ থেকে ২৯ নং আয়াতে মুসা(আঃ) আল্লাহর কাছে সত্য প্রচারের সাহায্যে দোয়া করেছেন। বিভিন্ন খুতবা বা বক্তৃতা শুরুতে অনেকেই এই দোয়া পড়েন।
“রাব্বিশরাহলী সাদরী। ওয়া ইয়াছছিরলীআমরী। ওয়াহলুল ‘উকদাতাম মিলিলছা-নী। ইয়াফকাহূকাওলী। ওয়াজ‘আললী ওয়াঝীরাম মিন আহলী”-(২০:২৫-২৯)।
(হে আমার রাব্ব! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। আমার কাজকে সহজ করে দিন। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে)।
এই সুরার ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মুসা(আঃ)’র দোয়া কবুল ও তার আবেদন মঞ্জুর করেনঃ
“কা-লা কাদ ঊতীতা ছু’লাকা ইয়া-মূছা-(২০:৩৬)।
(হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল)।
ইউসুফ(আঃ)-এর দোয়া। সূরা ইউসুফ আয়াত-১০১
“রাব্বি কাদ আ-তাইতানী মিনাল মুলকি ওয়া ‘আল্লামতানী মিন তা’বীলিল আহা-দীছি ফা-তিরাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি আনতা ওয়ালিইইয়ী ফিদদুনইয়া-ওয়াল আখিরাতি তাওয়াফফানী মুছলিমাওঁ ওয়া আলহিকনী বিসসা-লিহীন”-(১২:১০১)।
(হে আমার রাব্ব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক, আপনি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন!)
সূরা ইব্রাহীম আয়াতঃ ৪০-৪১
“রাব্বিজ ‘আলনী মুকীমাসসালা-তি ওয়া মিন যুররিইইয়াতী রাব্বানা-ওয়া তাকাব্বাল দু‘আই। রাব্বানাগফিরলী ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিলমু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকূমুল হিছা-ব”-(১৪:৪০-৪১)।
(হে আমার রাব্ব! আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও; হে আমাদের রাব্ব! আমার প্রার্থনা কবূল করুন। হে আমার রাব্ব! যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার মাতাপিতাকে এবং মু’মিনদেরকে ক্ষমা করুন)।
সুরা ইব্রাহিম আয়াত-৩৮
“রাব্বানাইন্নাকা তা‘লামুমা-নুখফী ওয়ামা-নু‘লিনু ওয়ামা-ইয়াখফা-‘আলাল্লা-হি মিন শাইইন ফিল আরদিওয়ালা-ফিছছামাই”-(১৪:৩৮)।
(হে আমাদের রাব্ব! আপনিতো জানেন যা আমরা গোপন করি এবং যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কোন কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকেনা)।
আয়তুল কুরসি নামে প্রসিদ্ধ সূরা বাকারা’র ২৫৫ আয়াতে আল্লাহ নিজের মহিমা বর্ণনা করেছেন। এই আয়াত আল্লাহর প্রতি প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনার অনুমোদিত বিন্যাস।
“আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল হাইয়ুল কাইয়ূমু লা-তা’খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওমুন লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূইল্লা-বিইযনিহী ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়ালা-ইউহ ীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহীইল্লা-বিমা-শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা ওয়ালা-ইয়াঊদুহু হিফজু হুমা-ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল ‘আজীম”-(২:২৫৫)।
(আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দু’টোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান)।
আমরা দোয়া করি আল্লাহর কাছে। আল্লাহর কাছে তার নবী রাসূলগণ ও তার প্রিয় বান্দারা যেসব দোয়া করেছেন আর আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন কোরআনে এমন আরো অনেক দোয়া পাবেন। কিন্তু নিবন্ধের আকার বৃদ্ধি হয়ে যাবে, তাই এখানেই শেষ করছি।
কোরআন পড়ুন- বুঝে পড়ুন।