"রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী"

 

লাল বাহাদুর শাস্ত্রী

ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে নিয়ে অনেক সত্য ঘটনার প্রচার আছে। খুব প্রাসঙ্গিক বলে আজ একটি ঘটনার উল্লেখ করলাম। প্রাসঙ্গিক কেন তা বোধহয় বিস্তারিত বলার দরকার নেই। 


ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তখন রেলমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি কোনো প্রেটোকল নিতেন না। সাধারণ নাগরিকের মতোই প্যাসেঞ্জার ট্রেনে বাড়ি এসে মাকে দেখেই আবার চলে যেতেন। 


একদিন মা জিজ্ঞাসা করলেন, দিল্লিতে তুই কী করিস? উত্তরে তিনি বললেন, রেলে ছোট্ট একটা কাজ করি। মা পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন, তুই প্রতিদিন বাড়ি আসিস না কেন? 

লাল উত্তর দিলেন, ছুটি পাই না তাই আসতে পারি না। 

মা বললেন, ঠিক আছে ছুটি না পেলে আসার দরকার নেই। আমি গিয়েই তোকে দেখে আসবো। কেমন করে যাবো শুধু তাই বল। শাস্ত্রীজি বললেন, তুমি এখান থেকে ট্রেনে উঠে দিল্লি স্টেশনে নামবে। তারপর স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে বললেই তিনি আমাকে ডেকে দেবেন।


পরের সপ্তাহে ছেলের পছন্দের খাওয়ার বানিয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন তার মা। মা জানতেন না দিল্লির গাড়ি কখন আসে এবং কখন ছেড়ে যায়। তাই নিজের সুবিধা মতো সময়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনে পৌঁছেই দেখলেন একটি গাড়ি ছেড়ে গিয়েছে। আরেকটি গাড়ির অপেক্ষায় তিনি প্লাটফর্মে বসে পড়লেন। তাকে  একা বসে থাকতে দেখে একজন কুলি জিজ্ঞাসা করলো, বুড়ি মা তুমি কোথায় যাবে? বুড়ি বললেন, দিল্লি।


কুলি বলল, দিল্লির গাড়ি তো এই মাত্র ছেড়ে গেল।


বুড়ি বললেন, তাতে কী হয়েছে। আবার যে গাড়ি আসবে সেই গাড়িতেই উঠে পড়বো।


সে গাড়িতো আসবে বিকেলে।


বুড়ি বললেন, তাহলে বিকেলেই যাবো।


দিল্লিতে তুমি কার কাছে যাবে?


আমার ছেলে লালের কাছে। সে রেলে চাকরি করে।


বুড়ির মুখে এমন কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা ভাবলো তার বোধ হয় মাথা খারাপ। এভাবে তাকে পাগলি ভেবে যে যেমন পারলো তেমন করেই বুড়িকে প্রশ্ন করে মজা নিতে শুরু করলো। লোকজন হাসাহাসি করে বলে উঠলো, হায় হায় তুমি তো তাহলে রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মা?


এবারো বুড়ির সোজা উত্তর। না-না। আমার ছেলের নাম তো কেবলই লাল। আর সে তো মন্ত্রী না।


 হৈ হুল্লোড় দেখে স্টেশন মাস্টার এগিয়ে এলেন। তিনি তাকে উঠিয়ে নিয়ে অফিস রুমে বসালেন। এরপর কয়েকটি প্রশ্ন করে নিশ্চিত হলেন যে, এই বুড়িই রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মা। তিনি  বিষয়টি দিল্লিতে জানিয়ে দিলেন।


বিকেলের ট্রেনে রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। বলরেন মা, তুমি সত্যি সত্যিই আমাকে দেখার জন্য দিল্লি যাওয়ার যেতে বাড়ি ছাড়বে এটা আমার জানা ছিল না। আমি এসে গেছি তুমি বাড়ি চলো।


লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে মা শুধু দু’টি প্রশ্ন করেছিলেন, “তু লাল ছে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কব বন গয়া? রেল কো ছোটা কর্মচারী ছে মন্ত্রী কব বন গয়া? ইয়ে পাতা তু মুঝে কিউ নেহি দিয়া? “( তুই লাল থেকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কবে হলি? রেলের ছোট কর্মচারি থেকে মন্ত্রী কবে হলি? এটা তুই আমাকে বলিসনি কেন?


উত্তরে শাস্ত্রী বলেছিলেন মা, আমি এখনো তোমার সেই ছোট্ট লালই আছি।"


লিখেছেন: Kamrul Hassan Badal 

                 ( ০৭ মে ২০২২ )

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url