ধর্ম নিয়ে নিস্ফল বিতর্ক : যে যা বোঝে তার কথাই ঠিক!
যে যেমন বোঝে! |
কিভাবে আমাদের ব্রেনের
অপারেটিং সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং সচেতন না হলে কিভাবে আমরা সেই অপারেটিং
সিস্টেম দ্বারা ভুল পথে চালিত হই!
ধর্ম কিভাবে আমাদের মনোভাব তৈরি করেঃ
ধর্ম বিশ্বাস বা
অবিশ্বাস আমাদের চরিত্রে সবচেয়ে শিক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে। কোনো পেশাগত লক্ষ্য
নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাই ধর্মীয় বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। এটা অনেকটা একটা ভবন নির্মানের
আগে যেমন সিভিল এভিয়েশন, ফায়ার সার্ভিস বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়, ঠিক
সেরকম। নইলে মাঝপথে গিয়ে আপনি একটা উভসংকটে পড়বেন।
আপনি ধর্ম বিশ্বাস
বা অবিশ্বাসকে পাত্তা না দিলেও ধর্ম আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে। ধর্মীয় বিশ্বাস যেহেতু
স্পর্শকাতর, তাই নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস মাথায় রেখেই কথা বলতে হবে। এটা নিশ্চিত যে, যে
যাই বলুক বা শুনুক, দিনশেষে যার যার সিদ্ধান্ত তার তার। তাই আমার মূল উদ্দেশ্য আপনাকে
জ্ঞান দেয়া না, কিছু নতুন দৃষ্টিভঙ্গী যোগ করা, কিছু চিন্তার খোরাক দেয়া।
উদাহরণ হিসেবে আমি
ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেই বেশি বলবো, কারণ অন্য ধর্ম সম্পর্কে আমার জানার পরিধি তুলনামূলক
কম।
একবিংশ শতাব্দীর
বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির এই জয়যাত্রায় ধর্মকে যারা অসার, অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন তাদের
ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আমাদের ব্যক্তিগত, পেশাগত জীবনে ধর্মের প্রভাব বরং দিনদিন
বেড়েই চলেছে। কোনো একটা নিউজের নিচে কমেন্টগুলো পড়লেই আন্দাজ করা যায়, মানুষ ধর্মকে
কতোখানি সিরিয়াসভাবে নিচ্ছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের
মধ্যে বিতর্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টোপ বা টপিক হচ্ছে ধর্ম। কেউ ধর্মকে একটু খোঁচা দিয়ে
কথা বললে বা লিখলে সে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুকে তার আপত্তিকর ভিডিও বা ব্লগ
“ফাঁসি চাই” ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার করার ধুম পড়ে যায়। এই বিশেষ মার্কেটিং সুবিধার জন্যেই
অনেকে ধর্মকে কটাক্ষ করে লেখে। তসলিমা নাসরিন, সালমান রুশদী- এরা এই স্বেচ্ছাসেবী মার্কেটিং
শক্তি ব্যবহার করেই রাতারাতি সাফল্য পেয়েছে।
অনলাইনে কোনো কন্টেন্ট
প্রমোট করতে না চাইলে অর্থাৎ তার গুরুত্ব আরো বাড়াতে না চাইলে এবং আরো বেশি মানুষের
কাছে পৌঁছাতে না চাইলে- সিম্পলী ইগনোর ইট। নো অ্যাংরি, নো কমেন্ট, নো শেয়ার, নো ফাঁসি চাই।
প্রখ্যাত মার্কেটিং
গুরু ‘আল রিস’ দারুণ একটি কথা বলেছেন, “আপনি যখনই আপনার প্রতিপক্ষের সাথে তর্কে জড়াবেন,
আপনি দৃশ্যত মেনে নিচ্ছেন যে, তাদের বক্তব্যে যথেষ্ট যুক্তি আছে”। তাই অনলাইনে কোনোকিছু
শেয়ার করার আগে বা কোনো কিছুতে বিতর্কে জড়ানোর আগে আশাকরি একটু ভেবে দেখবেন।
পৃথিবীতে বর্তমানে
প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি ধর্মের চর্চা হয়। প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে আবার অসংখ্য
দল-উপদল তো আছেই। যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না তাদের মধ্যেও নানান শ্রেণীবিভাগ আছে। যেমনঃ
(১) চরমপন্থি নাস্তিকঃ এরা দুনিয়ার তাবৎ সমস্যা কেবল ধর্মের মধ্যেই দেখে।
ধর্ম ছাড়া পৃথিবীতে যেন আর কোনো সমস্যা নেই। এদের মধ্যে চরম উগ্রপন্থী ধর্ম বিদ্বেষী
গ্রুপ আছে যারা সুযোগ পেলে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ হত্যায় দ্বিধাবোধ করে না।
‘ইউরোপ আমেরিকায়
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করেন বা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অন্যতম প্রধান
টার্গেট ধর্ম বিদ্বেষী বা উগ্র বর্ণবাদী গ্রুপ’।
(২) উদারপন্থী
নাস্তিকঃ এরা ধর্মে বিশ্বাস করে না, পালন
করে না। কিন্তু অন্যদের ধর্ম পালনে এদের কোনোই আপত্তি নেই।
(৩) অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকঃ এরা ধর্ম নিয়ে মাথাই ঘামায় না। এদের বিশ্বাস হচ্ছে,
আল্লাহ থাকলে ভালো, না থাকলে আরো ভালো।
(৩) ছদ্মবেশী নাস্তিকঃ এরা ধর্ম পালন করে না, কারণ এরা ধর্ম ততোটা সিরিয়াসভাবে
বিশ্বাস করে না। তবে জনসম্মুখে তা প্রচার বা প্রকাশ করে না।
(৫) ভন্ড বা প্রতারকঃ এরা ধার্মিকবেশী ভন্ড ও প্রতারক। এরা বিরাট ধার্মিকের
বেশ ধরে মানুষকে ঠকায়। এরা নিজের লাভ অনুযায়ী ধর্মকে ব্যবহার করে। কিন্তু ধর্মের কিছুই
এরা হৃদয়ে ধারণ করে না, পালন করে না। এই দলে ধর্ম ব্যবসায়ীরাও আছে। এরা ধর্মকে পুঁজি
করে ব্যবসা করে।
তবে ধর্ম বিষয়ক
বিতর্ক মোটামুটি অন্তহীন এবং নিস্ফল একটা বিতর্ক। তাই এই বিতর্কে জেতার সবচেয়ে ভালো
কৌশল হচ্ছে বিতর্ক এড়িয়ে চলা। দিনশেষে যার যার ধর্ম তার তার। সবার কাছেই নিজের যুক্তি
সঠিক।
‘নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
একবার বিচারকাজ পরিচালনা করতে বসলেন। তো তিনি প্রথমে বাদীর কথা শুনে বললেন, “হুম, তোমার
কথাই ঠিক”! এরপর বিবাদীর কথা শুনে বললেন, “হুম, তোমার কথাই ঠিক”! তো হোজ্জার বউ বাড়ির
ভিতর থেকে বললো, “এ আবার কেমন বিচার! দুজনের কথাই ঠিক হয় কিভাবে?”! শুনে হোজ্জা এবারও
বললো, “হুম, তোমার কথাই ঠিক”!
আসলে আমাদের সবার
কথাই ঠিক! কারণ, আমরা একেকজন একেকভাবে একেক জায়গা থেকে দেখছি। যেমন; কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র,
মেক্সিকোতে যখন মধ্যরাত। ঢাকা, কলকাতায় তখন মধ্য দুপুর। তাই এখন দিন না রাত এটা নির্ভর
করে এই মুহূর্তে আপনি কোথায় আছেন।
আমরা সাধারণত সেটাই
বিশ্বাস করি, যা আমাদের বিশ্বাস করানো হয়েছে। অন্যারাও তাই বিশ্বাস করে, যা তাদেরকে
বিশ্বাস করানো হয়েছে। দিনশেষে আমরা আমাদের স্ব স্ব বিশ্বাসের পক্ষেই যুক্তি জোগার করতে
উঠেপড়ে লাগি। আপনার আমার সামনে যুক্তি প্রমাণের শত শত প্রামাণিক দলিল উপস্থিত করলেও,
আমরা আমাদের পছন্দমত যুক্তির দলিলই নির্বাচন করবো।
তবে সস্তা অশালীন
যুক্তিকে আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি বানালে সে বিশ্বাস আপনাকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেবে।
এসব যুক্তি আপনাকে এমন গোঁড়া বানাবে যে, বিড়ালকে গাধার পিঠে আবার গাধাকে ঘোঁড়ার পিঠে
তুলে আপনার বিশ্বাসকে সত্য প্রমাণ করতে হবে।
এমন অনেক বই বা
ভিডিও আছে যা হাস্যকর ও সস্তা যুক্তিতে ভরপুর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, ‘সস্তা জিনিসের
চাহিদা বেশি’- এই সূত্র অনুযায়ী এসব বই বা ভিডিওর কাটতি বেশি। সস্তা যুক্তি নিয়ে কারো
সাথে তর্ক করতে গেলে বরং পরিবেশটাই নষ্ট হয়। তাই যে বই আপনাকে অন্ধ করে সে বই আপনি
পড়বেন না।
ধর্মে বিশ্বাস বা
ধর্ম পালনের জন্য আপনার এসব খোঁড়া যুক্তির দরকার নেই। এসব সস্তা যুক্তি আপনাকে ফলাফলহীন
বিতর্কের কিছু রসদ দেবে। কিন্তু ধর্মের যে প্রকৃত সৌন্দর্য তা থেকে আপনাকে অনেক দূরে
সরিয়ে নিয়ে যাবে।
আগামিতে এ বিষয়ে
আরো বিস্তারিত কথা বলার ইচ্ছে রইলো। ধন্যবাদ।
(ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে)