ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীত তারকাগণ (পর্ব-৪)-আব্বাস উদ্দিন আহমেদ

 

(কৈফিয়ৎঃ “এই লেখায় শিল্পীর শ্রেণী, মান এবং সময়কালের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবেনা বলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি”।)


আব্বাসউদ্দিন আহমেদ

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ


আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী একজন বাংলা লোক গানের সুরকার এবং গায়ক। তিনি ভাওয়াইয়া লোকগানের জন্য পরিচিত ছিলেন যা সাধারণত রংপুর, অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলা এবং কোচবিহারে শুনতে পাওয়া যায়।

 

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ২৭ অক্টোবর ১৯০১ ব্রিটিশ ভারতের কোচবিহার জেলার (বর্তমানে ভারতে) তুফানগঞ্জ মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জাফর আলী আহমেদ ছিলেন তুফানগঞ্জ আদালতের আইনজীবী। তিনি উত্তরবঙ্গের স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি মূলত একজন স্ব-শিক্ষিত সুরকার এবং গায়ক ছিলেন। অল্প সময়ের জন্য তিনি কলকাতায় ওস্তাদ জামিরুদ্দিন খানের কাছে সঙ্গীত শিখেছিলেন।

 

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ এইচএমভি স্টুডিওতে আধুনিক বাংলা গান গেয়ে তার সঙ্গীতজীবন শুরু করেন। তারপর কবি কাজী নজরুল ইসলামের (পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি) গান গেয়েছিলেন। এরপর তিনি নজরুল ইসলামকে ইসলামিক গান লেখা ও সুর করার প্রস্তাব দেন। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অনেক ইসলামী গান গেয়েছেন এবং এইচএমভি স্টুডিওতে রেকর্ড করেছেন। প্রসঙ্গতঃ কাজী নজরুল ইসলাম ও তিনি ছিলেন সমসাময়িক।

 

সঙ্গীতকে ভারতীয় মুসলমানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এবং তাদের পশ্চাদপদ অবস্থা থেকে জাগিয়ে তুলতে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। তিনি ছিলেন তৎকালিন ভারতে প্রথম মুসলিম যিনি রেকর্ডের লেবেলে নিজের নাম ব্যবহার করেছিলেন। আব্বাসউদ্দিন আহমেদের আগে মুসলিম গায়করা ছদ্ম নাম ব্যবহার করতেন যাতে তাদের মুসলিম পরিচয় গোপন থাকে এবং গানের রেকর্ড বিক্রীতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

 

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ পরে ভাওয়াইয়া, খিরোল এবং চাটকা রেকর্ড করেন যা অবিভক্ত গোয়ালপাড়া জেলা, কোচবিহার এবং রংপুরে বিখ্যাত ছিল। পরবর্তীতে তিনি জারি, শাড়ি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছিন্নতার গান, মর্সিয়া, দেহতত্ব এবং বাদ্যযন্ত্রের মতো অন্যান্য লোকগান গাইতে শুরু করেন। কবি জসীমউদ্দীন ও কবি গোলাম মোস্তফার সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন।

 

সাতচল্লিশে দেশ বিভাগের পর আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় চলে আসেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে যখন আব্বাসউদ্দিন আহমেদের গান বাজতো বেতারযন্ত্রের কাছে ভিড় জমে যেতো। মূলতঃ তৎকালিন সময়ে বাংলা অঞ্চলে পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী গানের খুব শ্রোতা ছিলো। কাজী নজরুল ইয়াসলাম ঢাকায় এলে আব্বাসউদ্দিনের ঢাকার পল্টনের বাসায় অলিখিত জমজমাট সঙ্গীত আসর বসতো।

 
সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং কাজী মোতাহার হোসেনের সাথে আব্বাসউদ্দিন(বামে)


আব্বাসউদ্দিন আহমেদ নিম্নলিখিত পুরস্কারে সম্মানিত হনঃ

·       প্রাইড অফ পারফরম্যান্স (১৯৬০)

·       শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯)

·       স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৮১)

 

মৃত্যু

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৯ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

পরবর্তী  উত্তরাধিকার

আব্বাসউদ্দিন আহমেদের পরবর্তী উত্তরাধিকারগন সবাই স্ব স্ব যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত। তারা হলেনঃ


  • মোস্তফা কামাল (প্রথম সন্তান)-বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

মোস্তফা কামাল

  •    ফেরদৌসী রহমান (একমাত্র মেয়ে)-বাংলাদেশের একজন ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী।

ফেরদৌসি রহমান

  •        মোস্তফা জামান আব্বাসী (কনিষ্ঠ পুত্র)-লোক গবেষক, লেখক, গায়ক এবং       সমাজসেবক।

মোস্তফা জামান আব্বাসী


  •        নাশিদ কামাল (নাতনি-বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে)-গায়ক, জনসংখ্যার    অধ্যাপক এবং লেখক।
নাশিদ কামাল








Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url