রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-২১)
মো: জিল্লুল হাকিম
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম |
মো: জিল্লুল হাকিমঃ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালিন তিনি কমান্ডার হিলেন। তিনি ৫ম বারের মতো রাজবাড়ী-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই
রাজবাড়ী জেলার প্রথম পূর্ণমন্ত্রী।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম ০২ জানুয়ারি ১৯৫৪ রাজবাড়ী
জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের আনন্দবাজারের নিকট কুরশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি পাংশা
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মোঃ আবুল হোসেন। তার পিতা ছিলেন একজন
সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী।
মোঃ জিল্লুল হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ)
ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্ম ও রাজনৈতিক
জীবন
পেশায় ব্যবসায়ী মো: জিল্লুল হাকিম
ছাত্রাবস্থা থকেই রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী
লীগের সভাপতি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জিল্লুল হাকিম যুদ্ধকালীন কমান্ডার
ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্যের পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম
এবং দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিম। তারাও সফল ব্যবসায়ী।
জাতীয় সংসদ সদস্য
মোট ৬ বার জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের
নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন। পরেরবার ২০০১ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক কুটচালে বিএনপি প্রার্থী নাসিরুল
হক সাবুর কাছে হেরে যান। এরপর তিনি দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন। ২০০৮
সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসিরুল হক সাবুকে পরাজিত করে তিনি ফের সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০২৪ সালের ০৭
জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি বিপুল ভোটের
ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মন্ত্রীত্ব
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মোঃ জিল্লুল হাকিম সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনিই রাজবাড়ী জেলার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী। তার মন্ত্রী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজবাড়ী জেলায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট
মোঃ জিল্লুল হাকিম ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত
ছিলেন। তখনকার
রাজনীতিবিদদের সাথে থেকে রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংস সদস্য খোন্দকার নুরুল ইসলামের সাথে ছিলো তার
বিশেষ সখ্যতা।
তিনি স্পষ্ট কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার
বিপক্ষের কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনোপ্রকার রাখঢাক করেন না। তিনি গোটা
রাজবাড়ী জেলায় আওয়ামীলীগকে সংগঠিত ও সুসংহত করেছেন। দেশের জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য।
এই নিবন্ধকের
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম-এর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ না
থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই তাকে চিনি ও জানি। তাকে প্রথম দেখি পশ্চিমবঙ্গের কল্যানী
মুক্তিবাহিনী ট্র্যানজিট ক্যাম্পের অফিসে মাছপাড়ার নুরু খোন্দকারের সাথে। তারপর ১৯৭৩
সালে নুরু খোন্দকার এমপি নির্বাচিত হলে সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে নুরু খোন্দকারের রুমে
তার সাথে দেখা হয়। সেখানে তার সাথে যতোটুকু কথা হয়েছিলো এবং পরে তিনি নিজে এমপি নির্বাচিত
হওয়ার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে তার উপস্থিতি, কথাবার্তা ও কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে
ব্যক্তিগতভাবে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে, তিনি একজন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ।
সুন্দর লেখনি, সাবলিল