সত্যিই কি নবীজী ৬ বছরের শিশু আয়শাকে বিয়ে করেছিলেন?

 


সহীহ বুখারী তাওহীদ প্রকাশনী হাদিস নং ৩৮৯৬:

পরিচ্ছেদঃ ৬৩/৪৪. ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবাহ, তাঁর মদীনাহ উপস্থিতি এবং ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে তাঁর বাসর।

৩৮৯৬: “হিশাম এর পিতা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনার দিকে বের হওয়ার তিন বছর আগে খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়। তারপর দু’বছর অথবা এর কাছাকাছি সময় অতিবাহিত করে তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। যখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা। তারপর নয় বছর বয়সে বাসর উৎযাপন করেন।“

 

নবীজী(সাঃ) ছয় বছর বয়সী আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন, নয় বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে নির্জনবাস করেছিলেন, সংসার আরম্ভ করেছিলেন- এই জাতীয় যে তথ্য আমরা বুখারী শরীফে পাই, এই তথ্যকে নিঃসন্দেহে গ্রহণ করতে হবে, এ ব্যাপারে একমত হওয়ার কোনো যুক্তি খুজে পাওয়া যায় না।

 

মা আয়েশার একটা হাদিস আছে যে, তিনি এবং তাঁর বাবা আবু বক্কর একই সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ওই সময় মা আয়েশার বয়স কতো ছিলো? তিনি কি দুই বছরের বালিকা বা এক বছরের বালিকা কিংবা দুধের শিশু ছিলেন? তাঁর যে স্মরণ শক্তি, তিনি বলছেন যে, আমার মনে আছে, আমি এবং আমার বাবা একসাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। এর অর্থ হচ্ছে, তখন তার বয়স অবশ্যই কমপক্ষে পাঁচ ছয় বছর ছিলো। ইবনে ইসহাকের বিবৃত এক তথ্যে উল্লেখ আছে যে, “আয়িশা সে লোকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যারা নবুয়তের অল্প সময় পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন”। 

 

উপরোক্ত তথ্য মোতাবেক ধরে নেয়া যায়, নবীজী(সাঃ)’র নবুয়ত প্রাপ্তির তৃতীয় বছরের ভিতরে মা আয়শার বয়স ছিলো অন্ততঃ ছয়-সাত বছর। নবুয়তের দ্বাদশ বছরে নবীজী(সাঃ)’র সাথে তার বিয়ে হয়। তাহলে তখন তাঁর বয়স হবে নিঃসন্দেহে ১৬-১৭ বছর।

 

ঐতিহাসিক ইবনে কাসির এবং ইবনে আকাসির’এর মতে হযরত আবু বক্কর(রাঃ)’র মেয়ে আসমা থেকে আয়শা (রাঃ) ১০ বছরের ছোটো ছিলেন। আসমার জন্ম ৫৯৫ খৃষ্ঠাব্দে। সেই হিসেবে আয়েশা(রাঃ)’র জন্ম সন হয় ৬০৫ খৃঃ। স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায় বিয়ের সময় আয়শা(রাঃ)’র বয়স ছিলো ১৭ বছর।

 

শিয়া পণ্ডিত আল সাঈদ জাফর মুর্তাযা আল-আমিলী’র মতে বিয়ের সময় আয়িশা(রাঃ) ১৩-১৭ বছর বয়সী ছিলেন।  

 

আমরা জানি হাদিস যারা সংকলন করেছেন তারা উল্লেখ করেছেন, কোনো হাদিস যদি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে কোরআনের নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে। কারণ, কোরান স্বয়ং আল্লাহর বাণী এবং এর সংরক্ষক আল্লাহ নিজে। পক্ষান্তরে হাদিস মানুষ রচিত এবং এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি।

 

পবিত্র কোরআনের সুরা নিসাঃ আয়াত-৬ এ মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেনঃ

“আর ইয়াতীমরা বিয়ের যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পরীক্ষা করে নাও; অতঃপর যদি তাদের মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি পরিদৃষ্ট হয় তাহলে তাদের ধন-সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ কর; ইয়াতীমের ধন-সম্পদ অপব্যয় করনা অথবা তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হবে বলে ওটা সত্ত্বরতা সহকারে আত্মসাৎ করনা; এবং দেখাশোনাকারী যদি অভাবমুক্ত হয় তাহলে ইয়াতীমের মাল খরচ করা হতে সে নিজকে সম্পূর্ণ বিরত রাখবে, আর যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে, অনন্তর যখন তাদের সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ করতে চাও তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখ এবং আল্লাহই হিসাব গ্রহণে যথেষ্ট।“

 

অর্থাৎ এতিম মেয়েদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত দেখাশোনা করতে হবে। আমরা জানি মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক একটা পরিবর্তন আসে। দ্বিতীয়তঃ বলা হচ্ছে, তারা যখন তাদের নিজেদের সম্পদ হিসাব নিকাশ করে বুঝেশুনে গুছিয়ে রাখতে পারবে, তখন তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ছয় বছরের এক বালিকার কোনটা হয়?

 

বর্তমান যুগে ছয় বছর বয়সে একজন শিশু ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়৷ এতোটুকু বাচ্চার নিশ্চয়ই সে বোধ বুদ্ধির উন্মেষ হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তার সম্পত্তি দেখাশুনা ও হিসাব নিকাশ করে রাখার পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ভিতরে আসার কোনও কারণ নেই। অতএব, পবিত্র কোরআন অনুযায়ী এতোটুকু বয়সের বাচ্চাকে আল্লাহর রাসুল কোনোক্রমেই বিয়ে করতে পারেন না।

 

আমরা জানি, ১৯০৫ সালে ‘জোনাথন ব্রাউন’ নামে একজন ইউরোপীয় লেখক এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন এবং তার পরবর্তীতে কিছুদিনের ভিতরে ভারতের কৃষ্ণ প্রসাদ নামে এক ব্যক্তি “রঙ্গিলা রসুল” নামে একটি বই লেখেন। বইটি লেখার পর এক উগ্রপন্থী তাকে হত্যা করে।

 

তারপর থেকে এই বিষয়টা খুব চর্চা হতে থাকে এবং ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামিক জীবনব্যবস্থা যাতে পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠতে না পারে, সুযোগ পেলেই এ নিয়ে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হতে দেখা যায়, প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দেখা যায়। আর এ যুদ্ধে আমাদের দেশের তথাকথিত আলেম সমাজও কম যান না। আর এর সুযোগ নেয় ইসলাম বিদ্বেষীরা। ইসলামকে হেয় করার জন্য তাদের মূল হাতিয়ার হলো, এর প্রবক্তা অর্থাৎ ইসলামের নবীর চরিত্র হরণ করা।

 

অতএব, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিৎ, এসব প্রোপাগান্ডা থেকে নিজেদের দূরে রাখা এবং প্রকৃত ও সঠিক তথ্য জানার মাধ্যমে জ্ঞানের আলোয় নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url