তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়ার লেখা সাহিত্য নিয়ে পিএইচডির করছেন ৫ গবেষক - বাবলু গুপ্ত

হলধর নাগ 

সাহেব-দিল্লি পর্যন্ত যাওয়ার পয়সা নেই, দয়া করে ডাকযোগে পুরস্কার পাঠিয়ে দিন!


হলধর নাগ , যার নামের আগে  কখনও শ্রী লাগেনি, খান তিনেক জামা, একটি ছেঁড়া রাবার চপ্পল, একটা  অ-খিলানযুক্ত চশমা এবং ৭৩২ টাকার জমা মূলধনের মালিক.....আজ পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত। 


ইনি হলেন পশ্চিম উড়িশ্যার বাসিন্দা হলধর নাগ। যিনি কোসলি ভাষার বিখ্যাত কবি। 


বিশেষ কথা হল, তিনি এ পর্যন্ত যতগুলো কবিতা ও ২০টি মহাকাব্য রচনা করেছেন, তার সবগুলোই তার জিহ্বার ডগায়। এবার তাঁর লেখা 'হলধর গ্রন্থাবলী-২'-এর একটি সংকলন সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাসের অংশ করা হবে। 


সাদা পোশাক, সাদা ধুতি, গামছা ও গেঞ্জি পরিহিত হলধর নাগ খালি পায়েই থাকেন। উড়িশ্যার লোক-কবি হলধর নাগ একটি দরিদ্র পরিবারের মানুষ। ১০ বছর বয়সে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর তৃতীয় শ্রেণিতেই পড়া ছেড়ে দেন তিনি।  


অনাথ জীবনে, তিনি বহু বছর ধরে ধাবায় বাসনপত্র পরিষ্কার করে কাটিয়েছেন। 

পরে একটি স্কুলে রান্নাঘর দেখাশোনার কাজ পান তিনি। কয়েক বছর পরে ব্যাঙ্ক থেকে ১০০০ টাকা ঋণ নিয়ে পেন-পেনসিল ইত্যাদির একটি ছোট দোকান খোলেন সেই স্কুলের সামনেই। এটাই ছিল তার আর্থিক অবস্থা। 


এবার আসা যাক তাঁর সাহিত্যের বিশেষত্বে। ১৯৯৫ সালের দিকে হলধর স্থানীয় ওড়িয়া ভাষায় "রাম-শবরী" র মতো কিছু ধর্মীয় পর্বের উপর লেখালেখি শুরু করেন এবং মানুষকে সেগুলো  আবৃত্তি  করে শোনাতে শুরু করেন। 



আবেগে ভরপুর কবিতা লিখে মানুষের মধ্যে জোর করে উপস্থাপন করে  তিনি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২ বছর আগে রাষ্ট্রপতি তাকে সাহিত্যের জন্য পদ্মশ্রী দেন।  


শুধু তাই নয়, ৫ জন গবেষক এখন তার সাহিত্যে পিএইচডি করছেন যেখানে হলধর নাগ নিজেই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

লিখেছেন: বাবলু গুপ্ত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url