জীবনযোদ্ধার রোজনামচা (০৮-০২-২০২৪)

 


ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গ

যে ঘটনা লিখতে যাচ্ছি তাতে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টানতেই হচ্ছে। জীবন নামক রেল গাড়িটার গতি শ্লথ হয়ে আসছে। ‘ইঞ্জিনের দুই এক জায়গায় ময়লা জমে, সেসব পরিষ্কার করতে হয়। অনেক সময় দুয়েকটি “অক্সিলারী” পার্টস - অন্যান্য জরুরী পার্টসের ক্রিয়া নিস্কন্টক রাখতে বাদও দিতে হয়। তারপর যেদিন মেইন সুইচ “ঠাস” করে অফ হয়ে যাবে, ইঞ্জিন আর স্টার্ট নেবে না, সেদিন সব হিসেব-নিকেষ চুকে যাবে’।

 

তো দেহ গাড়ির ইঞ্জিনের এমনি একটি “অক্সিলারী পার্টস” মেরামত বা পরিস্কার অথবা কেটে বাদ দিতে হবে (ডাক্তাররাই জানেন)। ১৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তারিখ।

 

এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। ভাবলাম কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাই (বা না পাই!), হাসপাতালে যাওয়ার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সটা নবায়ন করতে দেই। তাই এবারের প্রসঙ্গ বিআরটিএ।


বিআরটিএ প্রসঙ্গ




যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সশ্রুমণ্ডিত সচিব সাহেব প্রায়ই ৭১ জার্নালে এসে বয়ান দেন, এখন বাড়ি বসেই অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। অনলাইনে সব কিছু করতে পারবেন। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করার জন্য অনলাইনে আবেদন ও টাকা জমা দিতে গিয়ে দেখি সার্ভারে কাজ করে না। সার্ভার আপডেট করা নাই। একেক জায়গায় একেক তথ্য দেখায়। আবার বলে, আপনি কি ঠিকানা সংশোধন করতে চান? চাইলে কিছু কাফফারা লাগবে! ভাবলাম ঠিকানা চেঞ্জ করতে যাবো কেনো? আমি কি কখনো বলেছি, আমার বাড়ি বদল করেছি? বাপের রেখে যাওয়া বাড়িতেই বসবাস করার ফুরসৎ পেলাম না। জীবনের তাগিদে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। ২০০৮ সালের পর নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরা-নিকেতন হয়ে এখন আফতাবনগরে থিতু। শেষ নিঃশাসও হয়তো ছাড়ার সুযোগ পাবো না বাপের রেখে যাওয়া বাড়িতে!


অতএব,

প্রশ্নের উত্তর দিলাম “না”। না বলায়, ‘এনআইডির সাথে আপনার ঠিকানা মিল নাই’ – বলে আর এগোতে দেয় না। ভাবলাম কিছু টাকা লাগে লাগুক। ঝামেলা এড়াতে “হ্যাঁ” বললাম। তখন বলে, এনআইডিতে যে ঠিকানা আছে আপনার লাইসেন্সেও সেই ঠিকানায় হবে। অতএব প্রথমে এনআইডি অনুযায়ী বাংলা ঠিকানা লিখুন, তারপর ইংরেজিতে লিখুন।

 

এনআইডির ঠিকানায় লাইসেন্স করতে যাবো কোন দুঃখে, যেটা আমার বাড়ির ঠিকানা নয়? লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদি সরকারি খাতায় যতো জায়গায় নাম আছে সবকিছুতে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আমার গ্রামের ঠিকানা দেয়া। এনআইডি তো কতোজন কতো জায়গা থেকেই করেছে। ২০০৮ সালে যখন ভোটার আইডি কার্ড করা হয়, আমার ছেলে-মেয়ে পড়াশুনার জন্য যে যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানকার ঠিকানায় ভোটার হয়েছে এবং ভোটার আইডি কার্ড পেয়েছে। আমি তখন ছিলাম নারায়ণগঞ্জে, আমার ভোটার আইডি কার্ড হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।  স্থায়ী ঠিকানার অপশন থেকে থাকলে নিশ্চয়ই তাতে গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা যেহেতু ভোটার কার্ড হিসেবে গন্য করা হতো সে কারণেই হয়তো কার্ডে নারায়ণগঞ্জের ঠিকানা দেয়া। সে কার্ডই এখন জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে গন্য করা হয় এবং সব কাজে গ্রহণ করা হয়,- এমনকি বিদেশী ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রেও। তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বেলায় এই নিয়ম কেনো? ছুতোনাতায় প্যাঁচ একটা লাগিয়ে রাখা আর কি!

 

অনলাইনে না পেরে গেলাম বিআরটিএ নির্ধারিত ব্যাংকে টাকা জমা দিতে। নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দুটোতেই ফিরিয়ে দিলো। তারা নাকি শুধু ফিটনেস আর ট্যাক্স টোকনের টাকা নেয়, ড্রাইভিং লাইসেন্সের টাকা নেয় না। গেলাম একটু দূরে ওয়ান ব্যাঙ্কে। তারা বললো, আমরা সার্ভার সমস্যার কারণে ছয় মাস যাবৎ ড্রাইভিং লাইসেন্সের টাকা জমা করতে পারছি না।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা যতই চেষ্টা করুক বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে, আমরা যদি স্মার্ট না হই তাহলে স্মার্ট করে কে! গ্রামে একটা প্রবাদ চালু আছে; “আমাকে যে বুঝাতে পারবে তাকে পালের বড় গরুটা দেবো”! জনগণ স্মার্ট হয়ে গেলে পাবলিক সার্ভেন্টেদের “ফাঁকফোকর” বন্ধ হয়ে যাবে যে!

 

২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে যথারীতি লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স করেছিলাম। ২০১৪ সালে যখন রিনিউ করতে গেলাম, বলে এটা দুই নম্বর লাইসেন্স। আমিতো দুই নম্বরী করিনি। করে থাকলে বিআরটিএ-র নারায়ণগঞ্জে কর্মরত লোকজন করেছিলো। তখন টাকা জমা নিতো তাদের রশিদের মাধ্যমে।

 

আবার নতুন করে লাইসেন্স করতে হলো। ২০১৪ সালে থাকতাম উত্তরায়। অফিস ছিলো আশুলিয়ার কাছাকাছি। ওখান থেকে সা্ভার কাছে ও ভীড় কম হবে ভেবে সাভার থেকে লাইসেন্স করেছিলাম। ১০ বছর পর এবার নবায়ন করতে গিয়ে এই বিড়ম্বনা।

 

‘২০১৮ সালে চীনের কয়েকটি প্রদেশ ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। মহল্লার একটা মুদি দোকানেও ক্যাশ পেমেন্ট করতে হয় না। করলেও সেটা ঐচ্ছিক। ক্রেতা তার পছন্দের পণ্য নিজ হাতে নিয়ে কোড স্ক্যান করলেই মূল্য জেনে যাচ্ছে। দোকানে রক্ষিত পরিশোধ মাধ্যমের কিউআর কোড স্ক্যান করে টাকা পেমেন্ট করে পণ্য নিয়ে চলে যাচ্ছে। দোকানি তার কম্পিউটারে বসে সিসি ক্যামেরায় সবকিছু দেখছে। টাকা পরিশোধ হলো কিনা তাও নিশ্চিত হচ্ছে। দামাদামিও নাই’।

 

যাইহোক, ছোটছেলে আর আমার একইদিনে একই সার্কেল থেকে লাইসেন্স করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও এক।  আজ সকালে দুই বাপ-বেটা সরাসরি গেলাম সাভার বিআরটিএ অফিসে। সেখান থেকে বললো,  হেমায়েতপুর এনআরবিসি ব্যাংকে টাকা জমা নেবে, ওখানে যান। আবার ঘুরে এসে হেমায়েতপুরে টাকা জমা দিয়ে তারপর গেলাম। এক ঘন্টা বসিয়ে রেখে তারপর বলে, এক ঘন্টা ঘুরে আসেন, আমি করে রাখছি। অথচ ঘুরে ঘুরে অনেক লোকেরই কাজ করে দিচ্ছে, যাদের কাছ থেকে ধান্দা করা যাচ্ছে। তবে আমার একটা অনুরোধ রেখেছে। লাইসেন্স প্রাপ্তির সম্ভাব্য তারিখ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় বছরখানেক!

 

“৭০ গেলো ৮০ গেলো যৌবন গেলো না”। “যাউকগা সামনের দিকে আউগ্যা”।                    

যতোই করো তাল-বাহানা - “বাঘে ধরলে ছাড়ে কিন্তু শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না”।

 

 

 

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url