রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-১৩)
হিমানীশ গোস্বামী
![]() |
হিমানীশ গোস্বামী |
হিমানীশ গোস্বামী ১৮ মার্চ ১৯২৬ তারিখে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার কালুখালি
উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক ও আদি বাড়ি একই
উপজেলার রতনদিয়া গ্রামে, যে গ্রামের
কেন্দ্রে অবস্থিত রতনদিয়া বাজার, রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বর্তমানে গড়ে উঠছে উপজেলা
শহর।
হিমানীশ গোস্বামী একজন বিশিষ্ট রসসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কার্টুনিষ্ট।
তার পিতা পরিমল গোস্বামী ছিলেন জনপ্রিয় বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক
। তার মাতা জ্যোৎস্না দেবী। তার ঠাকুর’দা বাঙালি কবি যতীন্দ্রনাথ বাগচী। কাকা
জ্ঞানেন্দ্রনাথ বাগচী বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রাবন্ধিক ছিলেন। একটি সুস্থ
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তিনি বড় হয়ে ওঠেন।
হিমানীশ গোস্বামী ১৯৩৭ সালে পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস
শুরু করেন। এখানে তিনি রাণী ভবানী স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিক
পাশ করেন। অতঃপর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৫১ সালে বিলেত যান
কার্টুন আঁকা শিখতে। ১৯৫৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি বিলেতে অবস্থান করেন।
কার্টুন শিক্ষা শেষ করে কলকাতায় ফিরে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা
সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন তিনি। বিখ্যাত বিদেশি প্রকাশনা সংস্থা ‘ম্যাকগ্রহিলে’
কাজ করেন বেশ কয়েক বছর। পরে আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ সাল
পর্যন্ত সেখান কর্মরত ছিলেন।
আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময় তিনি শরৎচন্দ্র
পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) ও শিবরাম চক্রবর্তীর সংস্পর্শে
আসেন।
হিমানীশ গোস্বামীর লেখায় ছিলো লঘু-পরিহাস। কথার শ্লেষ আর নতুন
শব্দ তৈরিতে তার জুড়ি মেলা ভার। সেই সঙ্গে তীক্ষ্ণ-রসসমালোচনায় বিদ্ধ করতেন
রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদেরকেও। তার নিজের কথায়ঃ
"বাবা বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক
হওয়ায় আমাদের বাড়িতে বহু গুণী মানুষের সমাগম ঘটতো। খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম
দাদাঠাকুরকে। শব্দ নিয়ে শ্লেষ করার অমন মানুষ বিরল। শিবরাম চক্রবর্তীকে কাছ থেকে
দেখেছি,- উল্লসিত হয়ে উঠেছি তার শব্দের খেলায়।"
ছাত্রাবস্থায়ই তার লেখা প্রকাশিত হতো 'সচিত্র ভারত' পত্রিকায়। কলেজে
অধ্যায়নকালেই নিয়মিত লেখালেখি শুরু। ১৯৮৬ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রকাশনা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। তার প্রথম
প্রকাশিত বই ‘ডেল কার্নেগীর ইংরাজী গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ’।
বিলেতে থাকাকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে তার লেখা 'লণ্ডনের পাড়ায়'
'বিলিতি বিচিত্রা' 'লণ্ডনের আড্ডায়' কাহিনীগুলি 'লণ্ডন সমগ্র' নামে দুই খণ্ডে ‘আজকাল’ পত্রিকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
ছোটদের কাছেও তিনি ছিলেন প্রিয় লেখক। তার লেখার সঙ্গে জড়িয়ে
থাকতো তারই আঁকা কার্টুনধর্মী ছবিগুলি। শিশু সাহিত্যে সর্বভারতীয় সম্মান ছাড়াও
২০০১ সালে পেয়েছিলেন 'প্রাচ্য কলাকেন্দ্র পুরস্কার'।
প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১২ সালের
১৪ই মার্চ কলকাতার একটি নার্সিং হোমে ৮৬ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হিমানীশ
গোস্বামী।