রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-৭)

 

ডক্টর রাজিয়া খান

ডক্টর রাজিয়া খান

রাজিয়া খান  বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। লেখালেখি ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন মঞ্চে অভিনয় করেছেন।

 

রাজিয়া খান ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী তমিজউদ্দিন খান অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, আইন সভার সদস্য এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পীকার ছিলেন। তার মায়ের নাম রাবেয়া রাহাত খান।

 

রাজিয়া খান স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করেন কলকাতা  করাচীতে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম হন। পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে পড়তে যান। সেখান থেকে তার পিএইচডি ডিগ্রীর সব কাজ সমাপ্ত করে কলকাতায় আরও কিছু রিসার্চ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

 

রাজিয়া খান এমএ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর প্রথমে রাজসগাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দেন এবং নিয়মিত ব্যঙ্গ কলাম- 'কালচার কেটল' লেখা শুরু করেন।

১৯৫৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয় পুনরায় শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং এই বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি দেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাংবাদিক ও সম্পাদক রূপে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এর ইংরেজি বিভাগের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পঞ্চাশ দশকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ও প্রগতিবাদী লেখিকা হিসেবে লেখালেখি করেছেন রাজিয়া খান। বাংলাদেশের উপন্যাসে নারীভাবমূর্তি সৃষ্টিতে নারী লেখকদের মধ্যে তাকে প্রথম দিককার একজন মনে করা হয়।

তার প্রথম সৃজনশীলতার ঝোঁক প্রকাশিত হয় ছন্দে। ১৫ বছর বয়সেই পুরোদস্তুর উপন্যাস লিখতে শুরু করেন তিনি। ১৮ বছর বয়সেই লেখা হয়ে যায় ‘বট তলার উপন্যাস’ এবং তা বেশ জনপ্রিয়তাও পায়। এ’তে দেশভাগজনিত সংকট এবং উপমহাদেশের বিশাল ভৌগোলিক পরিসরে চরিত্রপাত্রের জটিল সমস্যার বিন্যাস দেখানো হয়েছে।

তিনি খুব বেশি লিখেছেন তেমন নয়, কিন্তু যা লিখেছেন তাতে জটিলায়তন নগরজীবন-অন্তর্গত ব্যক্তিমানুষের নৈঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্নতা ও আত্মরক্তক্ষরণের শিল্পরূপায়ন করেছেন।

তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'দ্রৌপদী' এপার ওপার দুই বাংলায় বেশ সমাদৃত।

 

তার রচিত গ্রন্থসমূহঃ  বটতলার উপন্যাস, অনকল্প,  প্রতিচিত্র,     চিত্রকাব্য,     হে মহাজীবন, দ্রৌপদী,   পাদবিক,   Argus under Anaesthesia, cruel April,  সোনালী ঘাসের দেশ (বাংলা কবিতা, নোংরা নাটক: তিনটি একাঙ্কিকা, আবর্ত (নাটক),  তমিজুদ্দিন খানের আত্মকথা (বাংলা অনুবাদ),  Multi Dimensional vision in George Eliot, A Different spring,    জহির রায়হানের 'আরেক ফাল্গুন' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ

 

প্রপ্ত পুরস্কারঃ বাংলা একাডেমি পুরস্কার  একুশে পদক, অনন্যা পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার- ইত্যাদি।


মৃত্যুঃ রাজিয়া খান ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ মৃত্যুবরণ করেন।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url