রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-৫)

 

মৌলভি তমিজউদ্দিন খান

মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান


মৌলভি তমিজউদ্দিন খান বা এম. টি. খান ১৮৮৯ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুরে (বর্তমান রাজবাড়ি) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি ইংরেজিতে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৫ সালে আইন পাস করার পর ফরিদপুরে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।


তমিজ উদ্দিন খান আইনপেশার পাশাপাশি রাজনীতিতেও অংশ নেন। তিনি প্রথমে কংগ্রেস ও পরে মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি আঞ্জুমানে ইসলামিয়ার সম্পাদক ছিলেন। খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণের কারণে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। ১৯২০ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকার ভোটাধিকার সম্প্রসারণ শুরু করলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন। ১৯২৬ সালে কংগ্রেসপন্থী মুসলিম জমিদারকে পরাজিত করে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।


১৯৩৭ সালের নির্বাচনে তমিজউদ্দিন খান তার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের হুমায়ুন কবিরকে পরাজিত করেন। এ কে ফজলুল হকের প্রজাপার্টি‌ ও মুসলিম লীগের জোট সরকার তাকে গ্রহণ না করায় তিনি স্বাধীন প্রজা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং আইন পরিষদের কংগ্রেস নেতা শরৎ বসুর সাথে আলাপ শুরু করেন। ১৯৩৮ সালের জুনে বেঙ্গল টেনেন্সি এমেন্ডমেন্ট বিল কেন্দ্র করে কংগ্রেস হক মন্ত্রিসভাকে নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব দিলে তমিজউদ্দিন খান তা সমর্থন করেন। তবে প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়। এরপর শেরে বাংলা তাকে মন্ত্রীসভায় ঔষধ ও জনস্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্ব দেন। পরে তাকে কৃষি ও শিল্প দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হয়।


১৯৪১ সালে প্রজাপার্টি‌ ও মুসলিম লীগের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়ার পর শামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সাথে ফজলুল হক দ্বিতীয় জোট সরকার গঠন করেন। এসময় অন্যান্য মুসলিম লীগ সদস্যদের সাথে তমিজউদ্দিন খান আইন পরিষদে বিরোধী দলে যোগ দেন। পরবর্তীতে নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত নতুন জোট সরকারে তমিজউদ্দিন শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৪৫ সালে আইন পরিষদ ভেঙে যায়।


তমিজ উদ্দিন খান ব্রিটিশ ভারতের বহুল পরিচিত একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ। অবিভক্ত বাংলায় তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান গণপরিষদ এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ১৯৪৯ সালে তিনি মূলনীতি কমিটির সদস্য ছিলেন।


তমিজউদ্দিন খান পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৫ সালে ঢাকা ময়মনসিংহ নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি টাঙ্গাইলের আবদুল হালিম গজনভিকে পরাজিত করে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য হন। পরে তিনি পরিষদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। এসময় স্পিকার ছিলেন মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর মৃত্যুর পর তিনি স্পিকার হন। সংবিধান রচনার জন্য তার অব্যাহত প্রচেষ্টা ছিল।


১৯৫৪ সালে গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মুহাম্মদ গণপরিষদ ভেঙে দিলে তমিজউদ্দিন খান সিন্ধু আদালতে “তমিজউদ্দিন খান বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান” নামক মামলা করেন। মামলায় তিনি জয়ী হলেও সরকারপক্ষ আপিল করলে ফেডারেল আদালত রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সিন্ধু আদালতের রায় বাতিল করে গভর্নর জেনারেলের আদেশ বহাল রাখে।


১৯৬২ সালে তমিজউদ্দিন খান পুনরায় জাতীয় পরিষদের সদস্য ও স্পিকার হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।


মৃত্যু

মৌলভী তমিজ উদ্দিন খান ১৯ আগস্ট ১৯৬৩ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।

 




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url