রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-৯)
পরিমল গোস্বামী
পরিমল গোস্বামী |
পরিমল গোস্বামীঃ ১৮৯৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর
জেলা বর্তমানে রাজবাড়ি জেলার কালুখালী
উপজেলার রতনদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক। তিনি রস-রচনা
ও ব্যঙ্গাত্মক রচনার জন্য সমধিক পরিচিত। রবীন্দ্রোত্তর যুগে যে সকল সাহিত্যিক
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিমল গোস্বামী তাদের অন্যতম।
“এমন একজন কীর্তিমানের বাড়ি স্বয়ং আমার উপজেলার
প্রাণকেন্দ্রে এবং আমার পৈত্রিক বাসভূমির সন্নিকটে তা এতোদিন জানা ছিলো না। শৈশবে
রতনদিয়া ছিলো আমাদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান উপভোগ ও আড্ডায় মিলিত হুওয়ার প্রধান
কেন্দ্র। সেহেতু রতনদিয়া বাজা্রে আমাদের নিত্য আসা-যাওয়া ছিলো একটি নিয়মিত কাজ।“
পরিমল গোস্বামীর সাহিত্যিক পিতা বিহারীলাল
গোস্বামী (১৮৭২-১৯৩১) ছিলেন পাবনার পোতাদিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহভাজন। পরিমল
গোস্বামী ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। বাল্যকালে তার পড়াশোনা শুরু বাবার
কর্মস্থল পাবনা জেলার পোতাদিয়া গ্রামেই। এরপর তিনি শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় শিক্ষা
লাভ করেন এবং এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন।
পড়াশুনা শেষে
“প্রবাসী” ও “শনিবারের চিঠি” প্রভৃতি
পত্রিকার সাথে পরিমল গোস্বামীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন “শনিবারের চিঠি”র
সম্পাদনাও করেন। প্রবন্ধ, ব্যঙ্গাত্মক ও কৌতুকময় গল্প এবং রস-রচনার জন্য প্রসিদ্ধ
ছিলেন তিনি। অত্যন্ত পরিচিত ও সাধারণ ঘটনাকে বৈপরীত্য সহযোগে এমনভাবে উপস্থাপন
করতেন যে, সেটি এক সিরিয়াস গল্প হয়ে উঠতো। অনেকে তার এই দক্ষতার জন্য তাকে এই
বিষয়ের বিখ্যাত লেখক ‘স্টিফেন লিককে’র স্বগোত্রীয় ভাবেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
– ‘পুরুষের ভাগ্য’ –পথে পথে’ ‘ঘুঘু’ ‘মারকে লেঙ্গে’ ম্যাজিক লণ্ঠন’ ইত্যাদি।
বিভিন্ন সংস্থার প্রচার ব্যবস্থাপক
ও বেতার ভাষ্যকাররূপে তার সুনাম ছিল। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে তিনি যুগান্তর পত্রিকার
সম্পাদকীয় ও রবিবাসরীয় আসরে কাজ করেছেন। যুগান্তরে তিনি 'এক-কলমী' ছদ্মনামে সরস
ও রসাত্মক রচনা লিখতেন। সাহিত্যকীর্তি ছাড়াও পরিমল গোস্বামী বৈঠকি গল্প ও আলোচনা্র
আসর জমিয়ে রাখতেন। ফটোগ্রাফিতেও তার সমান দক্ষতা ছিল।
পরিমল গোস্বামীর তার সাহিত্যিক
বন্ধু বিভূতিভূষণ বন্দোপ্যাধ্যায়ের সাথে একটি মৌখিক চুক্তি ছিলো – “দুই বন্ধুর
মধ্যে যিনি যেভাবেই হোক পরলোকে পৌঁছানোর ব্যাপারটা বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেবেন”!
বিভূতিভূষণ আগে মারা যান। পরিমল গোস্বামী দীর্ঘদিন বিভূতিভূষণের বার্তার অপেক্ষায়
থেকে থেকে পরে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেন – “পরলোক আসলে শোকাতূর মানুষকে সান্ত্বনা
দেয়ার জন্য বানানো গল্প”!
পরিমল গোস্বামী ভণ্ডামীকে ঘৃণা
করতেন। তাই স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি শ্রাদ্ধ-শান্তি ইত্যাদি পরলৌকিক ক্রীয়াকর্ম
বর্জন করেন। এজন্য কলেজ স্ট্রীট বইপাড়ায় পরিমল গোস্বামীর বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইয়ে
দেন সংস্কার অনুসারীরা।
তার পুত্র প্রখ্যাত কথা
সাহিত্যিক ও কার্টুনিষ্ট হিমানীশ গোস্বামী বাবার ধারাটি বহন করেছেন।
মৃত্যুঃ পরিমল গোস্বামী ১৯৭৬ সালের ২৭ জুন
তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।