রাজবাড়ী জেলার কীর্তিমানদের কথা (পর্ব-১০)
রোকনুজ্জামান খান (দাদাভাই)
রোকনুজ্জামান খান |
রোকনুজ্জামান খান ০৯ এপ্রিল ১৯২৫ তারিখে
রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় বিখ্যাত ব্যক্তি রওশন আলী চৌধুরী ও
এয়াকুব আলী চৌধুরীর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন তার নানা।
তার পৈত্রিক বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার ভবানীপুর গ্রামে।
তার স্ত্রী বাংলাদেশের নারী ব্যক্তিত্ব
“বেগম” সম্পাদক নূরজাহান বেগম। প্রখ্যাত ব্যাক্তি সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
ছিলেন তার শ্বশুর।
রোকনুজ্জামান খান তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও সংগঠক। তিনি দাদাভাই নামেই বেশি পরিচিতি লাভ
করেন। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকা “দৈনিক ইত্তেফাকে”র শিশু-কিশোরদের উপযোগী ‘কচিকাঁচার আসর’ বিভাগের পরিচালক হিসেবে আমৃত্যু
দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি।
রোকনুজ্জামান খান ১৯৪৮ সালে আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ইত্তেহাদ পত্রিকার
'মিতালী মজলিস' নামীয় শিশু বিভাগের দায়িত্ব লাভের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে শিশু সওগাত পত্রিকায়
দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে দৈনিক মিল্লাতের কিশোর
দুনিয়া'র শিশু বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়
তরুণ সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
ইত্তেফাকের শিশু-কিশোরদের উপযোগী কচিকাঁচার আসর
বিভাগের পরিচালক নিযুক্ত হন তিনি এবং আসর পরিচালকের নামকরণ করা হয় দাদাভাই। সেই
থেকে তিনি নতুন “দাদাভাই” হিসেবে নতুন পরিচয় পান। তার পরিচিতিতেই ছোটদের
উপযোগী করে লিখতেন - সুফিয়া কামাল, আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন, শওকত
ওসমান, আহসান হাবীব, ফয়েজ আহমেদ, হোসনে আরা, নাসির আলী, হাবীবুর রহমান সহ বিখ্যাত
অনেক লেখক।
১৯৫৬ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিশু-কিশোর সংগঠন
কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন রোকনুজ্জামান খান। বিখ্যাত অনেক ব্যক্তিত্ব এর
সদস্য ছিলেন - সুলতানা কামাল, হাশেম খান, মাহবুব তালুকদার, কৌতুক অভিনেতা রবিউল প্রমূখ।
প্রথম শ্রেণীর
পাঠ্যবইয়ে ছোটদের প্রিয় ছড়া
এবং
ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে সন্নিবেশিত ‘চিঠি বিলি’
- “ছাতা মাথায় ব্যাঙ চলেছে চিঠি বিলি করতে…” তার অসামান্য
শিশুতোষ ছড়া হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
“খোকন খোকন ডাক পাড়ি” “আজব হলেও গুজব নয়”
প্রভৃতি বই লিখেছেন
দাদাভাই। সম্পাদনা করেছেন – “আমার প্রথম লেখা” “ঝিকিমিকি” “বার্ষিক কচি ও কাঁচা” “ছোটদের
আবৃত্তি” ইত্যাদি পুস্তক। তার সম্পাদিত ঝিকিমিকি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিশুসংকলন। এসব রচনার মাধ্যমে তিনি
কোমলমতি শিশুদের মনে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করেন।
শিশু সংগঠন ও শিশু সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার জন্য রোকনুজ্জামান খান একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ও শিশু একাডেমী পুরস্কার সহ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
রোকনুজ্জামান খান ০৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯ মৃত্যুবরণ করেন।