জীবনযোদ্ধার রোজনামচা (০৭ জানুয়ারি ২০২৪)
আতাউর রহমান খান |
সকালে ঘুম থেকে জেগে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল ঘেঁটে নির্বাচনের
খবরাখবর দেখছিলাম। মধ্যহ্নভোজ সেরে প্রাকটিক্যাল অবস্থা দেখার জন্য বাইরে বেরোলাম।
দেখলাম, ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজের সামনে লোকের জটলা। জানতে পারলাম, ভিতরে অধিক সংখ্যক
লোক একবারে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ভোট দিতে আসা ভোটাররা বাইরে অবস্থান করছে। কিছু
কিছু করে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে ভোট দেয়ার জন্য।
পাশেই ‘শহীদ ফারুক ইকবাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’ ভোট কেন্দ্র। সেখানেও
একই চিত্র দেখতে পেলাম।
এগিয়ে গেলাম মালিবাগ রেল লাইনের দিকে। উদ্দেশ্য ছিল খিলগাঁও এলাকায়
একটু ঘুরে দেখব।
যাইহোক, দেখলাম রাস্তা একেবারে ফাঁকা। কোনো যন্ত্র দানবের উপদ্রব নাই,
এমনকি রিক্সার সংখ্যাও খুব অল্প।
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম মালিবাগ প্রধান রেলগেটের কাছে চৌরাস্তার
দিকে। দেখলাম, রাস্তার অপর পাশে একটি বাস দাঁড়ানো। বাসের কন্ডাক্টর হাত ইশারা করে ডাক
দিল। এগিয়ে গেলাম সেদিকে। কন্ডাক্টর বলে, ওঠেন। উঠলাম।
দেখলাম, বাসটি যে রুটের ওই রুটেই আমার আরেকটা বাসা অর্থাৎ বড় ছেলের
বাসা। সেই বাসার কাছে গিয়ে নেমে গেলাম।
সন্ধ্যার পর স্ব-অবস্থানে ফেরত আসার জন্য সে বাসা থেকে বেরিয়ে পরিচিত
এক দোকানে গেলাম একটা পান খেতে। পান খেয়ে আবার হাটা দিলাম। যে সরু রাস্তায় ওই পান
দোকান, সে রাস্তায় একটি কালভার্ট ছিল। পাশেই একজন নতুন বাড়ি করার জন্য ট্রাকে ইট-বালি-সিমেন্ট
টানতে টানতে কালভার্টটি ভেঙে রড বেরিয়ে গেছে। ভাঙ্গা কাল্ভার্টের উপরে একটা তক্তা
দিয়ে তার উপর দিয়ে অতি সন্তর্পণে পার হচ্ছে রিকশা।
তো ভাঙ্গা কালভার্টের কাছে গিয়ে এক রিকশাওয়ালা আরেক রিকশাওয়ালাকে
বলছে, ‘উন্নয়ন’!
বললাম, উন্নয়নের ঘাটতি দেখলে কোথায়? এটাতো আর সরকার এসে ভেঙে দিয়ে
যায় নাই। আচ্ছা যাক, তুমি যে রিক্সায় আরামে হাল ধরে বসে আছো আর মোটরে ট্রেনে নিয়ে
যাচ্ছে। এই মোটর চলে কিসে?
-ব্যাটারিতে
-ব্যাটারি চার্জ দাও কি দিয়ে?
-বিদ্যুৎ দিয়ে
তোমার তো অত বয়স হয় নাই, তাই হয়তো জানা নাই। বিশ বছর আগে এতো ব্যাটারি
চার্জ দেওয়ার বিদ্যুৎ তো দূরের কথা, - বাসার ফ্যান, লাইট চলার বিদ্যুৎও ছিল না। এখন
আরামে রিকশা চালাচ্ছো আর এই বিদ্যুৎ যে সরকারের সময় পেয়েছো সেই সরকারের ভালো কাজকে
‘মির্জা ফখরুল’ কায়দায় ‘গনতন্ত্র না থাকলে উন্নয়নের দাম নাই’ টাইপের ‘শব্দ’ বলে সরকারকে
সমালোচনা করছো!
কথা না বাড়িয়ে কালভার্ট পার হয়ে রিকশায় পিক-আপ হাঁকিয়ে কেটে পড়লো।
আমিও আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
আমি সহজে রিকশায় চরি না। রিকশায় যে ঝাঁকুনি খেতে হয়, তারচেয়ে হেঁটে চলা অনেক আরাম। তাছাড়া ডাক্তার বলে দিয়েছে, ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়ার ব্যায়াম করতে। হাঁটলে সে ব্যায়ামটা হয়। তাই দেড় কিলোমিটার হেঁটে এসে আবার বাস ধরলাম।
বাসায় এসে
টিভি খুলে বসে আছি তো আছিই। ‘একাত্তর জার্নাল’ শেষ করে এখনো টিভির সামনে বসে আছি নির্বাচনের
সর্বশেষ খবর জানার আগ্রহে।
খবরে দেখলাম, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যে সব বিদেশী পর্যবক্ষরা এসেছেন,
তারা মহা খুশি। বাংলাদেশের নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে পেরে তারা গর্বিত।